মোহনা বিশ্বাস, ওয়েব ডেস্কঃ
২০১৭ সাল। জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহ। পুরুলিয়ায় দেবেন মাহাত সদর হাসপাতালে সর্দি কাশির সমস্যা নিয়ে ভর্তি করা হয়েছিল এক শিশুকন্যাকে। সেইসময় হাসপাতালের চিকিৎসকরা শিশুটিকে পরীক্ষা করে রীতিমতো চমকে উঠেছিলেন। চিকিৎসকরা দেখেছিলেন শিশুকন্যাটির সারা শরীরে ক্ষত, বুকের কাছে চমড়া ওঠা, হাত পা ফোলা, এমনকী যৌনাঙ্গেও ছিল গভীর ক্ষত। শিশুটির এই অবস্থা দেখে সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ এবং চাইল্ড লাইনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন চিকিৎসকরা। সে সময় চাইল্ড লাইনের সদস্যরা শিশুটির বিষয়ে শিশুটির পরিবারের বিষয়ে খোঁজ খবর করতে শুরু করে। শিশুটির এক্সরেও করা হয়েছিল ওই হাসপাতালে। আর সেই এক্সরে প্লেটে দেখা গিয়েছিল, শিশুটির শরীরের ভিতর বিশাল সাইজের সাত সাতটি সূচ ঢুকে রয়েছে।

শুধু তাই নয়, শিশুটি যৌন হেনস্থারও শিকার। এই খবর জানাজানি হতেই সংবাদ মাধ্যমের শিরোনামে উঠে আসে ঘটনাটি। আর তারপরেই নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। তদন্ত শুরু করে পুরুলিয়া পুলিশ। এরপর এই ঘটনায় শিশুটির মা মঙ্গলা গোস্বামী এবং তাঁর প্রেমিক সনাতন গোস্বামী ঠাকুরকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ২০১৭ সালের ১২ সেপ্টেম্বর আদালতে এই ঘটনার চার্জশিট দাখিল করে পুরুলিয়া থানার পুলিশ। তারপর দীর্ঘ চার বছর বিচার চলে। গত ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২১, শুক্রবার অবশেষে পুরুলিয়া জেলা আদালতে রমেশকুমার প্রধানের এজলাসে দু’জনেই দোষী সাব্যস্ত হয়। এরপর আজ মঙ্গলবার পুরুলিয়া আদালতে সেই মামলারই রায় দেওয়া হল।
আরও পড়ুনঃ পুরুলিয়ার বরাবাজারে চিকিৎসক হত্যা মামলায় চাঞ্চল্যকর মোড়, অসামান্য সাফল্য পুলিশের
তিন বছরের শিশুকন্যাকে খুনের দায়ে ফাঁসির সাজা হল মায়ের। পুরুলিয়ার সূচ-কাণ্ডে মৃত শিশুর মা এবং তার ‘প্রেমিক’ দু’জনকেই মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আদালত। গতকাল সোমবার এই মামলার রায়দান স্থগিত রাখা হয়। এরপর ষড়যন্ত্র করে সূচ ফুটিয়ে শিশুকন্যাকে হত্যার মামলায় শনিবারই পুরুলিয়ার ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট দোষী সাব্যস্ত করে দু’জনকে। মঙ্গলবার আদালতে ফাঁসির রায় শুনে শুরু থেকেই নীরব ছিলেন সনাতন। যদিও মঙ্গলা বারবার নিজেকে নির্দোষ হিসাবে দাবি করেছেন।
আরও পড়ুনঃ ধাক্কা রাজ্যের, আমফান দুর্নীতি মামলায় রাজ্যের তদন্ত রিপোর্ট গ্রহণ করল না হাইকোর্ট
কেউ বলেন অভিযুক্ত সনাতন গোস্বামী ঠাকুর ব্ল্যাক ম্যাজিক করত, কারও মতে সে যৌন বিকৃতির শিকার, আবার কেউ কেউ বলেন সনাতন মাল্টিপল পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডার। কিন্তু সনাতনের এমন আচরণের আসল কারণটা ঠিক কী, তার সঠিক ব্যাখ্যা দিতে পারেননি কেউই। এদিকে, সনাতনের সঙ্গে মঙ্গলা তথা শিশুকন্যার মায়ের যোগ থাকার বিষয়টিও কার্যত নজিরবিহীন।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584