পুরুলিয়ার বরাবাজারে চিকিৎসক হত্যা মামলায় চাঞ্চল্যকর মোড়, অসামান্য সাফল্য পুলিশের

0
11231

নিজস্ব সংবাদদাতা, পুরুলিয়াঃ

গত ১৭ সেপ্টেম্বর পুরুলিয়ার বরাবাজারে ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে উদ্ধার হয় চিকিৎসক সুচিত্রা সিং-এর পচাগলা মৃতদেহ। তদন্তে নামে বরাবাজার থানার পুলিশ। দেহ উদ্ধারের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এই হত্যা রহস্যের সমাধান করে ফেলেন বরাবাজার থানার আধিকারিকরা।

Doctor Suchitra Singh
সুচিত্রা সিং, মৃত চিকিৎসক। ছবি সৌজন্যে: ফেসবুক

নিউজ ফ্রন্টের প্রতিনিধি এই হত্যা রহস্যের তথ্য জানতে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রেখে যাচ্ছিলেন স্থানীয় সূত্রের সঙ্গে। তাতে উঠে এসেছে এই ‘চিকিৎসক খুনের মামলা’-র চাঞ্চল্যকর তথ্য। আজ সমস্ত তথ্য উঠে এসেছে আমাদের হাতে। ঘটনার সম্পূর্ণ টাইমলাইন আমরা তুলে ধরছি পাঠকদের উদ্দেশ্যে।

Barabazar police station
বরাবাজার থানা। নিজস্ব চিত্র

গত ১১ সেপ্টেম্বর, ভোরবেলা NEET স্নাতকোত্তর এন্ট্রান্স পরীক্ষা দিতে দুর্গাপুরের উদ্দেশ্যে ভোর ৪ টে নাগাদ রওনা হন সুচিত্রা সিং, সঙ্গে ছিলেন স্বামী শান্তনু পাল ও তাঁদের পুত্র। পরীক্ষা দেন সুচিত্রা, এরপর বলগনা ভাতারে এক পারিবারিক বন্ধুর বাড়ি যান ৩ জনেই। সেখান থেকে ১২ তারিখ নবদ্বীপের এক মন্দিরে পুজো দিতে যান তাঁরা। ১৩ তারিখ সকাল পর্যন্ত বন্ধুর বাড়িতেই ছিলেন। ১৩ তারিখ সকালে সেই বন্ধুর কাছে শান্তনু অভিযোগ করেন যে সুচিত্রা বিভিন্ন সম্পর্কে জড়িত থাকায় তার জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। বিকেলের দিকে বরাবাজার ফিরে আসেন তিনজনই। বিশেষ সূত্রের খবর, ফেরার সময় প্রায় বাক্যালাপ ছিল না দম্পতির। জানা গিয়েছে, যিনি রান্না করেন তাঁদের বাড়িতে, ঐদিন বিকেলে তিনি আসেন, রান্না করে চলেও যান। দুধওয়ালাও আসেন।

সূত্র মারফৎ জানা গিয়েছে, রাত ১১ টার কিছু পরে পরিচিত এক ড্রাইভারকে ফোন করে পরদিন ১৪ তারিখ ভোর ৪ টের সময় কোয়ার্টারে আসতে বলেন শান্তনু, কারন তাঁদের মেদিনীপুর যাওয়ার প্রয়োজন। পরদিন ভোর ৫টা নাগাদ শান্তনু ও ছেলে রওনা হন মেদিনীপুরের উদ্দেশ্যে, কিন্তু সুচিত্রাকে আর দেখা যায়নি। মেদিনীপুর পৌঁছে ছেলেকে বন্ধুর বাড়িতে রাখতে চান শান্তনু তবে তাঁরা রাজি না হওয়ায়, দুপুরে ছেলেকে নিয়ে যান দাঁতনের একতারপুর গ্রামে। সেখানে থাকেন শান্তনুর বাবা মা ও প্রথম পক্ষের স্ত্রী। তাঁদের কাছে ছেলেকে রাখেন তিনি।

আরও পড়ুনঃ চিটফান্ড মামলায় এবার সিবিআই-এর তলব মানস ভুঁইয়া-কে, সোমবার হাজিরার নির্দেশ

এখানেই চাঞ্চল্যকর মোড় নেয় পুরো ঘটনা। দীর্ঘ কয়েক বছর ধরেই যে শান্তনু আগে থেকে বিবাহিত তা জানতেন না সুচিত্রা বা তাঁর পরিবার। লোকলজ্জা হোক বা ধরা পড়ার ভয়েই হোক স্নায়ুর চাপ ধরে রাখতে পারেননি শান্তনু, প্রচুর পরিমান ট্রাংকুইলাইজার জাতীয় ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। সকালে তাঁকে হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয় ও বর্তমানে ভুবনেশ্বরে একটি হাসপাতালের ICU-তে ভর্তি রয়েছেন। ১৮ সেপ্টেম্বরের মধ্যেই বরাবাজার থানার অফিসাররা ভুবনেশ্বর ও দাঁতনে পৌঁছন। ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই হয় রহস্যের সমাধান। সুচিত্রার স্বামী শান্তনু পালের বিরুদ্ধে খুনের মামলা রুজু করেছে বরাবাজার থানার পুলিশ।

আরও পড়ুনঃ ভোট পরবর্তী হিংসার ঘটনায় অভিজিৎ সরকারের মৃত্যু তদন্তে ১২ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি

এই মামলায় বরাবাজার BMOH ডাঃ রবিন সরেন নিউজ ফ্রন্টকে জানান, “সুচিত্রার স্বামী শান্তনু পাল আমাকে ফোন করে জানান যে সুচিত্রা মেদিনীপুরে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।“ স্বাভাবিক ভাবেই তখন তাঁর কোন সন্দেহ হয়নি। এদিকে, নিউজ ফ্রন্টের তরফ থেকে মানবাজার SDPO রাহুল পাণ্ডে-কে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “তদন্ত শেষ হয়ে গিয়েছে, অভিযুক্ত স্বামী হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেলেই গ্রেপ্তার করা হবে তাঁকে।“

নিউজফ্রন্ট এর ফেসবুক পেজে লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here