করোনা-আমপান প্রকোপে বিপন্ন যাত্রাশিল্প

0
81

শান্তনু পুরকাইত,দক্ষিণ ২৪ পরগনাঃ

বাংলার লোকসংস্কৃতির ঐতিহ্যবাহী বিনোদন মাধ্যমগুলো এখন গভীর অস্তিত্বসংকটে। ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃৃতি গুলির একটি যাত্রাশিল্প। বর্তমানে যাত্রাশিল্পের দুরাবস্থা নিয়ে যাত্রাশিল্পীরা খুবই চিন্তিত।

drama | newsfront.co
মঞ্চস্থ হচ্ছে যাত্রাপালা। নিজস্ব চিত্র

করোনা আমপানে দুর্বিষহ করে তুলেছে অপেশাদার যাত্রা শিল্পীদের জীবন। সংসার চালানো দায় হয়ে পড়েছে অনেকের। ফলে কেউ বেছে নিচ্ছে মাছ বিক্রি তো কেউবা রুটি বিক্রি, সবজি বিক্রি করে দিনযাপন করছে।

দক্ষিণ ২৪ পরগনার এমন অনেক লোকসংস্কৃতি যাত্রা শিল্পী রয়েছে যারা সরকারি সহযোগীতা থেকে বঞ্চিত হয়ে পড়েছে। বঞ্চিত অপেশাদার শিল্পীরা কর্মীসম্মেলনের মধ্য দিয়ে সরকারের কাছে দুরাবস্থার আর্জি রেখেছেন। বিষ্ণুপুর থানার দোসতিনহাত এলাকায় যাত্রা পাড়ার যাত্রা শিল্প সংগঠনের কয়েকশো সদস্যরা তাদের অভাব – অভিযোগ, দাবি – দাওয়া নিয়ে সরকারের কাছে আর্জি রেখেছে। তাদের মূল দাবি খাদ্য-বস্ত্র-বাসস্থান। যা নিয়ে শাসক বিরোধীরা একে অপরকে কাদা ছুঁড়তেই ব্যস্ত।

drama industry | newsfront.co
নিজস্ব চিত্র

বিনোদনের অন্যতম উৎস যাত্রাপালা। বাঙালি জাতির গ্রামীণ সংস্কৃতির ঐতিহ্য হিসেবে হাজার বছর ধরে মিশে আছে যাত্রা গান। জাতির আদি সংস্কৃতি হিসেবে এসেছে যাত্রা। আর এ যাত্রা থেকেই এসেছে নাটক, থিয়েটার, সিনেমা।

আরও পড়ুনঃ করোনা আবহে পুজোয় ভাটা, দুশ্চিন্তায় মৃৎশিল্পীরা

swapan mandal | newsfront.co
স্বপন মন্ডল, যাত্রা সংগঠক। নিজস্ব চিত্র

আদি সংস্কৃতির যথার্থ পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে আজ হারিয়ে যেতে বসেছে যাত্রাপালা, যাত্রাপালার শিল্পীরা। চলতি বছরে একদিকে করোনা অন্যদিকে আমপানে দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিশাল আকারে যাত্রাপালার মঞ্চায়ন আর নেই। নেই রোজগারের সেই দিক। পুজাের মুখে মুখ থুবরে পড়েছে যাত্রাশিল্পীদের সংসার। বিভিন্ন সময়ের শিল্পরীতি পরিবর্তিত হলেও যাত্রা বাংলার ঐতিহ্য হিসেবে আজও রয়ে গেছে জনপদের মুক্তমঞ্চে। তবে আধুনিকতার নামে অন্যের সংস্কৃতির হাওয়া লেগে যাত্রার চরিত্রধর্ম বদলে গেছে। যাত্রায় পেশাদারি শিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেতে নানারকম ঝুঁকির মুখে পড়েছে অনেকে। আজও অনেকে বঞ্চিত – লাঞ্ছিত। যাত্রাশিল্পের সংকটের অন্যতম কারণ হল রাজনৈতিক কারণ।

আরও পড়ুনঃ শীঘ্রই পুজো কমিটিগুলির সঙ্গে বৈঠকে বসছেন মুখ্যমন্ত্রী

tmc leader  | newsfront.co
অরুময় গায়েন, স্থানীয় তৃণমূল নেতা। নিজস্ব চিত্র

শাসক ঘনিষ্ট না হলে মিলবেনা কিছুই, দাবি বিরোধীদের। মানুষের মন-মানসিকতা নেই যাত্রা দেখার। প্রযুক্তির বহুবিধ ব্যবহারে মানুষ অভ্যস্থ হয়ে পড়েছে। যাত্রা তেমন করে টানে না। যেখানে সিনেমার প্রেক্ষাগৃহ বন্ধ, সেখানে যাত্রাশিল্প কীভাবে বেঁচে থাকবে? হলে গিয়ে ছবি দেখারই তো মানসিকতা নেই, যাত্রা দেখবে কীভাবে! বিভিন্ন অবহেলা আর পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে এ শিল্প মুখ থুবড়ে পড়েছে। বিলুপ্তির পথে এখন লোকজ সংস্কৃতির বাহক যাত্রাশিল্প। করোনা আমপানে বন্ধ কাজ। বাদ্য যন্ত্র নষ্ট হতে বসেছে। ঝুল ধুলােয় ভর্তি করছে যাত্রা লেখকের পান্ডুলিপিখানি। পেটে খিদে ।

আরও পড়ুনঃ সল্টলেকে অতিথিশালার ঘটনার প্রতিবাদে সরব কৌশিক, জয়

পকেটের টানে লেখকের কলম আর চলছেনা। শিল্পীর গলা থেকে বেড় হচ্ছেনা বিনোদনের কোন শব্দ । শুধু আর্জি, খাদ্য – বস্ত্র – বাসস্থান।

স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত এসব লোকজ যাত্রাপালার সোনালি যুগ ছিল। একসময় যাত্রাপালায় অভিনয় করত দেশের নামকরা সুপারস্টার। নামকরা শিল্পী, কলাকুশলীর দ্বারা এই যাত্রাপালা গঠন করা হতো। যাত্রা দলে দেশজুড়ে হাজারো শিল্পী, কলাকুশলী রয়েছে যারা এ পেশা ছাড়া অন্য পেশা জানে না। চিৎপুর ছিল যাত্রাপালার আঁতুরঘর। আজ নামটাই রয়েছে।

রয়েছে সুন্দরবন ও সুন্দরবন লাগোয়া বহু শিল্পীদের অক্লান্ত পরিশ্রমের সে অভিনয়ের দৃশ্য। এখন তাদের বড়ই দুর্দিন। ধর্মীয় গোঁড়ামি, জঙ্গিবাদের উত্থান, নাশকতা, মোড়ে মোড়ে টেলিভিশন, সিনেমা, ডিস অ্যান্টেনা সঙ্গে মোবাইলের মাধ্যমে পশ্চিমা বিশ্বের নগ্ন ছবির ছড়াছড়ির কাছে নুয়ে পড়েছে বাঙালি জাতির লোকজ সংস্কৃতি। এই লোকজশিল্প বাঁচিয়ে রাখতে সবাই এক হয়ে কাজ করলে সংকট কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। সম্ভব সরকার যদি একটু মুখ তোলে।

নিউজফ্রন্ট এর ফেসবুক পেজে লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here