শ্যামল রায়, কাটোয়াঃ
কাটোয়া শহরে দেব সেনাপতির আরাধনায় আয়োজিত কার্তিক লড়াই ঘিরে বহু দর্শনার্থীদের ভিড় চোখে পড়ল রবিবার। এই অঞ্চলের প্রধান উৎসব কার্তিক লড়াই। কার্তিক লড়াইকে ঘিরে নানান ধরনের থিম চোখে পড়ল এবার। এর মধ্যে কাল্পনিক মন্ডপ নিউ আপনজন এবং অমৃতসরের রেল দুর্ঘটনার থিমে সেজেছে সেবা সংঘের পূজো।
কাটোয়া শহরের বড় বড় মন্ডপের মধ্যে উল্ল্যেখযোগ্য হল জয়শ্রী ক্লাব, আপনজন ক্লাব, দেশবন্ধু ক্লাব, জনকল্যাণ ক্লাব, ঝংকার ক্লাব, ঘরের বাজার ক্লাব, প্রতিবাদ ক্লাব। জানা গিয়েছে, ঘরের বাজার এবং প্রতিবাদ ক্লাব দুটি বাদে উপরের সকল পুজো কমিটি নানা ধরনের থিমে মণ্ডপ সজ্জায় দর্শকদের মন কেড়েছে।
কার্তিক লড়াইকে ঘিরে পুলিশি ব্যবস্থা ছিল ব্যাপক। এছাড়াও ছিল সিসি ক্যামেরা এবং কাটোয়া পৌরসভার তরফ থেকে বিভিন্ন ধরনের ক্যাম্পের জনসেবামূলক প্রচার। প্রশাসনিক অধিকর্তাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা পুলিশ আধিকারিক ধ্রুব দাস, মহকুমা পুলিশ আধিকারিক তৃদ্বীপ সরকার, আইসি বিকাশ দত্ত প্রমূখ।
আরও জানা গিয়েছে যে, কার্তিক লড়াইকে ঘিরে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে শহর ও শহরতলীতে তৈরি হয়েছে দেব সেনাপতির মন্ডপ। প্রতি বছর বাজেট বাড়লেও নতুন নতুন থিম পুজো যেন দর্শকদের আনন্দ দিচ্ছে। কাটোয়া মন্ডল হাট সেবা সংঘের পুজো ছোট বাজেটের হলেও এদের সৃজনশীলতার মান অনেক বড় পুজোকেই হার মানায়। সেবা সংঘের পুজোর বাজেট প্রায় দেড় লক্ষ টাকা। মণ্ডপ তৈরি করেছেন আঞ্চলিক অধিবাসীরাই। থার্মোকল কেটে তা দিয়ে ট্রেন তৈরি করে রাবণ তৈরি করেছেন এলাকার এক যুবক।
অন্যদিকে পানুহাট নিউ আপনজন ক্লাবের পুজো এ বছরে পা দিলো ৫৩ বছরে। বড় বাজেটের পুজোগুলির মধ্যে এই পুজোটির বাজেট ১০ লক্ষ টাকা। কারুকার্যে, শিবের বিভিন্ন রূপ তুলে ধরা হয়েছে এখানে। এই পূজামণ্ডপে কার্তিকের থাকবে ৫৩ টি মাথা এবং ১০৬ টি হাত।
সম্পাদক উত্তম দেবনাথ জানিয়েছেন, চারদিন ধরে নানান ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন থাকবে পরিবেশ সচেতনতার উপর। পানুহাট ইয়ং বয়েজ ক্লাব মন্ডপ তৈরি করেছে, পরিবেশ ও গাছ বাঁচানোর বার্তা দিয়ে। অন্যদিকে পানুহাট যুব শক্তি সংঘের পুজো জল অপচয় না করার বার্তা নিয়ে এসেছে।
রবিবার কাটোয়ার কার্তিক লড়াইকে ঘিরে সকল পুজো উদ্যোক্তাদের মধ্যে ছিল প্রবল উৎসাহ উদ্দীপনা। কার্তিকের থিমে ‘দিদিকে বলো’ এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক চরিত্রগুলি তুলে ধরা হয়েছে এই কার্তিক লড়াইয়ের অনুষ্ঠানে।
বিভিন্ন মডেলের মাধ্যমে ‘দিদিকে বলো’ থিমে মণ্ডপ সাজানো হয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেসের অফিসের সামনেই এই প্রথম কার্তিক পুজোর আয়োজন হয় জয় হিন্দ জয় বাংলা ক্লাবের পরিচালনায়। সভাপতি কাটোয়া পৌরসভার প্রাক্তন পৌরপতি অমর রাম। জনসংযোগ বাড়ানোর কথা থেকে শুরু করে কিভাবে নিজের হাতে রান্না করে খাইয়েছেন দলের কর্মীদের, সেই সমস্ত মডেল তুলে ধরা হয়েছে কার্তিকের থিমে।
পুজো কমিটির সভাপতি অমর রাম জানিয়েছেন, কার্তিক লড়াইয়ে বহু মানুষ সামিল হয়। একসঙ্গে অনেকের কাছে দিদিকে বলো কর্মসূচি তুলে ধরতে এই থিম ব্যবহার করা হয়েছে। তবে অনেকেই তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দলের কথা প্রসঙ্গে ভেবেছেন—এটা একটা জনসংযোগ, নিজের আধিপত্য বিস্তারের।
কাটোয়ার কার্তিক পূজার পিছনে শিশু কার্তিকের ধারণা লুকিয়ে রয়েছে বলে অনেকে মনে করছেন। তবে কল্পনা করা যেতে পারে যে এই কার্তিককে ঘিরে রয়েছে নানান ধরনের কাল্পনিক কাহিনীও আছে। অনেকেই বলছেন সন্তান কামনা করেই গৃহস্থের বাড়িতে এই কার্তিক পুজোর আয়োজন হয়েছিল। তবে কাটোয়ার কার্তিক লড়াইয়ের ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায় বাড়ির পুজো থেকেই বাড়তে বাড়তে এই কার্তিক লড়াই আজ সম্পূর্ণতা পেয়েছে। এমনকি বারোয়ারি পুজোয় পরিণত হয়েছে। তাই শিশুর কল্পনা করে কার্তিকের হাতে মোয়া দেওয়ার রীতি আজও বর্তমান। কাটোয়ার কার্তিক পূজার মধ্যে রয়েছে লোকসংস্কৃতির শোভাযাত্রা শিল্পের প্রভাব।
রবিবার ট্রেনে বাসে প্রচুর দর্শনার্থীদের দেখা গেল কাটোয়া শহরের কার্তিক লড়াইতে আসতে। প্রতিটি জনবহুল এলাকায় ছিল সাদা পোশাকের পুলিশ। এছাড়াও সিভিক পুলিশ এবং জেলার উচ্চপদস্থ পুলিশ আধিকারিকরা। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলো তাদের জনসংযোগ বাড়ানোর জন্য এই কার্তিক লড়াইয়ের উৎসবকে ব্যবহার করছে বলে বিভিন্ন সূত্রের খবর।
কাটোয়া পৌরসভার পৌর প্রধান ও স্থানীয় বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন যে, কার্তিক লড়াই হল কাটোয়াবাসীর কাছে প্রধান উৎসব। ইতিমধ্যেই তাদের আত্মীয়- থেকে শুরু করে সকলেই এসে গেছেন এই উৎসবে।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584