নিজস্ব সংবাদদাতা,উত্তর ২৪ পরগনাঃ
লকডাউনে বন্ধ পরিবহন ব্যবস্থা। কিন্তু কিডনি-রোগীর নিয়মিত ডায়ালিসিস করতেই হবে। তাই বারাসত থেকে মুকুন্দপুর বাইক চালিয়ে ডায়ালিসিস করতে ছুটতে হচ্ছে যুবককে।
আসা-যাওয়া মিলিয়ে প্রায় ৭০ কিলোমিটার রাস্তা। গাড়িতে যাবেন, সেই সামর্থ্য নেই। কেউ বাইকে বসিয়ে নিয়ে যাবে, সংক্রমণের ভয়ের মধ্যে সেই সাহায্যও কারও কাছে চাইতে পারছেন না বারাসতের শুভঙ্কর বাগ। অগত্যা শরীরের ধকল সয়েই চলছে লড়াই।
বছর পঁয়ত্রিশের শুভঙ্করের বাড়ি বারাসতের পূর্ব খিলকাপুরে। ২০০৮ সাল থেকে কিডনির রোগে ভুগছেন। ১২ বছরে শারীরিক যুদ্ধের সঙ্গে সঙ্গে অর্থনৈতিক লড়াইও চলছে বাগ পরিবারের। হাতে থাকা জমিজমা বেচে দিতে হয়েছে।
করোনা সংক্রমণ এবং লকডাউন তাঁদের নতুন পরীক্ষার সামনে এনে ফেলেছে। প্রতি সপ্তাহে দু’বার করে ডায়ালিসিস করতে হয়। প্রতি দফায় সে খরচ ১৮০০ টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে দু’হাজার টাকা। তার উপর যাতায়াতের দুশ্চিন্তা।
আরও পড়ুনঃ সমাজ বিরোধীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো সৌরভের বামনগাছিতে ফের খুন প্রতিবাদীর
শুভঙ্করের কথায়, ‘১২ বছর ধরে মুকুন্দপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ডায়ালিসিস করাই। ওদের পরিষেবায় আমি খুশি। আগে ট্রেনে উল্টোডাঙা পৌঁছে, বাস ধরে নিতাম। মুখ্যমন্ত্রীর তহবিল থেকে কিছু টাকা পাই। হাসপাতাল বদলালে সেটা পাব না।
নতুন হাসপাতালে কেমন পরিষেবা পাব, তাও জানি না।’ তাই এক আত্মীয়ের কাছ থেকে বাইক জোগাড় করেন শুভঙ্কর। মোটামুটি ১০০ টাকার তেল ভরলে যাতায়াত হয়ে যায়। গোটা পথটা একাই যাওয়া-আসা করতে হয়। তাঁর কথায়, ‘এই অবস্থায় তো কাউকে সাহায্য করার জন্য বলতেও পারি না। সবাই একটা ভয়ের মধ্যে রয়েছে।’
সন্ধে ৭টা নাগাদ বেরিয়ে পড়েন বাড়ি থেকে।
আটটা-সাড়ে আটটা নাগাদ পৌঁছে যান। মোটামুটি দশটা নাগাদ ডায়ালিসিস শুরু হয়ে যায়। চার-সাড়ে চার ঘন্টা লাগে গোটাটা শেষ হতে। তাঁর কথায়, ‘ডায়ালিসিসের পর বেশ দূর্বল লাগে। সারা রাত সে ভাবে ঘুমও হয় না। ছ’টার দিকে বেরোই।’
একটানা ফিরতে পারেন না। মাঝেমধ্যে দাঁড়িয়ে বিশ্রাম নিয়ে আবার বাইক স্টার্ট দেন। দু-একদিন পুলিশ পথ আঁটকেছিল। রক্ষে, কাগজপত্র দেখার পর আর আটকায়নি। বাইকের সামনে লিখে রেখেছেন, ‘ডায়ালিসিস পেশেন্ট’।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584