বিগত ছয় মাসে ঝাড়খণ্ডে আধার কার্ড না থাকার জন্য সাধারণ মানুষ মারা যাওয়ার খবর আসছে।ছয়মাসে মোট মারা গেছেন আধ ডজন মানুষ। এর মধ্যে গত একমাসে মারা গেছেন দুইজন। গত ২ জুন গিরিডি জেলার বাসিন্দা সাবিত্রী দেবী (৫৮)রেশনের দোকান থেকে চাল না পেয়ে অনাহারে ভুগে মারা যান। চাতরা জেলার মিনা মুশাহারও (৪৫) একই কারণে মারা গেছেন। দি হিন্দু-র রিপোর্টে জানানো হয়েছে ঝাড়খন্ড সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ২.৩ কোটি মত রেশন কার্ডধারীদের আধার সংযোগ করতে হবে। নইলে রেশন কার্ড বৈধতা হারাবে। জানুয়ারি অবধি ১.৭ কোটি মানুষ আধার সংযোগ করিয়েছেন। ঝাড়খন্ডে ইতিমধ্যেই সরকার প্রায় ১১.৬ লাখ রেশন কার্ডকে বাতিল করেছে উক্ত কারণে। এখনো অবধি আধার সংযোগ না থাকার দরুন অনাহারে ভুগে মারা গেছেন লক্ষ্মী মুর্মু, সন্তোষ কুমারী, রূপলাল মারান্ডি, প্রেমনি কুঁয়ার, এত্বরিয়া দেবী। প্রায় সকলেই প্রান্তিক এবং আর্থিকভাবে নিম্নশ্রেণীর মানুষ।
সুপ্রিম কোর্ট আধার মামলার ক্ষেত্রে খুব স্পষ্টভাবেই বলেছে সাধারণ মানুষকে সরকারি পরিষেবা থেকে বঞ্চিত করা যাবে না আধার না থাকার পরিপ্রেক্ষিতে। কিন্তু কেন্দ্র এবং প্রায় সকল রাজ্য সরকারই যেন কানে তুল গুঁজে রেখেছে এই নির্দেশ চালু করার ক্ষেত্রে।
আধার সংযোগ থাকুক বা নাই থাকুক সরকারি সাহায্য পাওয়ার ব্যাপারে সমস্যা মিটছে না, বিশেষ করে মালদা, মুর্শিদাবাদ, দিনাজপুর থেকে যারা বাইরে পরিযায়ী শ্রমিকের কাজ করতে যাচ্ছেন তাদের ক্ষেত্রে। শারীরিক শ্রমের সাথে যুক্ত হওয়ার কারণে এদের বেশিরভাগকেই বারবার আধার কেন্দ্রগুলোতে নিজের বায়ো মেট্রিক তথ্য দিতে যেতে হচ্ছে। আধার কেন্দ্র অনেক জায়গায় বন্ধ থাকায় হয়রানির মুখেও পড়ছেন।
২০১৭ জানুয়ারিতে প্রকাশিত সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে মিড ডে মিলে ছাত্র-ছাত্রী এবং রাঁধুনি ও সহায়কদের আধার বাধ্যতামূলক করেছে কেন্দ্র সরকার যা রাজ্যগুলোতে চালু করে চলেছে বিভিন্ন রাজ্য সরকার। মিডিয়ায় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী এক্ষেত্রেও সমস্যা দেখা দিচ্ছে ফিঙ্গার প্রিন্ট না মেলায়। যারা গৃহবধূ বা প্রত্যক্ষ শারীরিক শ্রমের সাথে যুক্ত তাদের ক্ষেত্রে আধার করার সময়ের বায়োমেট্রিক তথ্য বর্তমানে বিভিন্ন ক্ষেত্রে মিলছে না। ফলে সমস্যা তৈরি হচ্ছে মোবাইল সিম কার্ড নেওয়া থেকে সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পের অন্তর্ভুক্তি হওয়ার ক্ষেত্রে।
যখন একই জায়গায় দাঁড়িয়ে আধারের ফলে সাধারণ মানুষ নাস্তানাবুদ হয়ে পড়ছেন, অন্যদিকে মুনাফা কামাচ্ছে বিভিন্ন বহুজাতিক কর্পোরেট। ফার্ষ্টপোস্ট এর একটি খবরে বলা হয়েছে রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রির মালিক মুকেশ আম্বানি ২০১৭র ১৬ ফেব্রুয়ারিতে নাসকম ইন্ডিয়া লিডারশিপ ২০১৭র এক সভায় দাবি করেছেন আধারের কারণে প্রতিদিন প্রায় ১০ লক্ষ লোককে তারা গ্রাহক বানাতে সক্ষম হচ্ছেন। জিও তাই সবথেকে কম সময়ে দশকোটি গ্রাহক সংখ্যা ছুঁতে পেরেছে।
এখন প্রশ্নটা হলো যাদের শ্রমে, ঘামে গোটা দেশ চলছে সেইসব সাধারণ মানুষকে আধার সুবিধা দিচ্ছে নাকি বহুজাতিক কর্পোরেট আধারের মাধ্যমে নাগরিকের তথ্য জেনে তা থেকে মুনাফা কামাবে? সরকার কি পারে নাগরিকের সমস্ত পরিচয়কে অস্পৃশ্য করে দিয়ে শুধুমাত্র আধারের ভিত্তিতে সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্প গুলি থেকে বঞ্চিত করতে?
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584