সুদীপ কুমার খাঁড়া, নিউজফ্রন্ট ,পশ্চিম মেদিনীপুর:-
প্রায় টান তিন মাসের লুকোচুরি খেলার অবসান ঘটলো। গত কয়েক মাস লালগড়ের জঙ্গলে হঠাৎ আবির্ভাব হওয়া বাঘকে ঘিরে জঙ্গলমহল ছিল সরগরম। অবশেষে আজ জঙ্গলমহলের বাঘপর্বের যবনিকা পড়ল। লালগড়ের বাঘ ঘরার জঙ্গল থেকে উদ্ধার হলেন দক্ষিনারায়। তবে জীবিত নয়,মৃত। শুক্রবার সকালেই বাঘরার জঙ্গলে শিকার করতে যান এলাকার কিছু আদিবাসি সম্প্রদায়ের মানুষ । তারা শিকার করতে যাওয়ার সময় বাঘ মামার সেই পুরাতন স্থান,যেখানে কিছুদিন আগেই তিন জন শিকারিকে আহত করে বাঘ নিজে ক্যানেলে পড়েগিয়েছিল। সেই ক্যানেলের নীচে বাঘকে বসে থাকতে দেখেন শিকারিরা । বাঘ মামাকে দেখেই তারা পিছু হটতে শুরু করে । কিন্তু কথায় আছে বাঘের দেখা । বাঘ মামাও হালুম শব্দ করে ঝাঁপিয়ে পড়ে তাদের উপর-আহত হয় দুই ব্যাক্তি । এরা হলেন বাবলু হাঁসদা ও বাদল হাঁসদা । এদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কা জনক । আহতদের মেদিনীপুর হাসপাতালে ভর্তি করা হয় । খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয় বনদপ্তরের আধিকারিকরা । ঘটনাস্থলের পাশে একটি মৃত বনশুয়োরের দেহাবশেষ পাওয়া যায় এবং লক্ষ্য করা যায় অসংখ্য বাঘের পায়ের ছাপ । যা দেখে বনদপ্তরের আধিকারিকরা নিশ্চিত হন মৃত বন শুয়োরটিকে বাঘ মেরে খেয়েছে । আশেপাশে আরো মৃত দেহাবশেষ পাওয়া যায় কিনা তার খোঁজ করতে গিয়ে হঠাৎ করেই বাঘের মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখা যায় । যা নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে চাঞ্চল্য । কিভাবে বাঘটি মারা গেল ? নিজের শারিরীক কোনো সমস্যার জন্য মৃত্যু ঘটেছে না কেউ মেরে ফেলেছে সেটাই এখন বড় প্রশ্ন ।
বাঘ মামার হঠাৎ করেই এই মৃত্যুর খবর চাউর হতে না হতেই ঘটনাস্থলে অসংখ্য মানুষ ভীড় জমিয়েছেন বাঘ মামাকে একবার শেষ দেখা দেখতে । বাঘের এই মৃত্যুর খবর পেয়ে এলাকার মানুষ কিছুটা আশ্বস্ত হলেও এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া । কারন বাঘ মামা জঙ্গলে থাকলেও সেইভাবে মানুষেরতো কোন ক্ষতি করেনি বরং বাঘ মামা থাকার ফলে জঙ্গলে মানুষ গাছ কাটতে যেতে ভয় পেত । ফলে পরিবেশের রক্ষাকর্তা হয়ে উঠেছিল এই বাঘমামা । বাঘের এই মৃত্যু সংবাদ পেয়ে ঘটনা স্হলে হাজির হওয়া পশুপ্রেমীরা চোখের জল ধরে রাখতে পারেন নি । তাঁরা সজল নয়নে বন দপ্তরের প্রতি ক্ষোভ উগরে দিয়ে বলেন , যেদিন বাঘ গর্তে পড়েগিয়েছিল সেই দিন যদি বনদপ্তর একটু নিজেদের দায়িত্ব সঠিক ভাবে পালন করতো তাহলে এই ধরনের একটি বিরল পশুকে আমরা হারাতাম না ।
কি কারনে বাঘ মামার এই মৃত্যু হল তার সঠিক কারন জানা যাবে ময়না তদন্তের পরে । তবে বাঘ মামা মরে ফের প্রমান করে দিল যে , ” বন্যেরা বনে সুন্দর , শিশুরা মাতৃক্রোড়ে ” ।আর সমাপ্তি ঘটলো রয়েল বেঙ্গল রহস্যের।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584