পিয়া গুপ্তা ,উত্তর দিনাজপুরঃ
“তালের পাখা প্রাণের সখা, শীতকালে যার হয়না দেখা” আর সেই হাত পাখা তৈরি করেই জীবিকা নির্বাহ করছে
উত্তর দিনাজপুর জেলার প্রায় শতাধিক পরিবার। একদিকে গ্রীষ্ম অন্যদিকে জামাইষষ্ঠী তাই পাখার যোগান দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে হাত পাখা তৈরির শ্রমিকেরা । আর পাঁচজন যখন প্রচণ্ড গরমে কাহিল হয়ে পড়ছে ঠিক তখন এইসব শিল্পীদের মুখে দেখা যাচ্ছে চাওয়া হাসি।তার উপরে সামনেই জামাই ষষ্ঠী।এই ষষ্ঠীতে জামাই বাবাজীবন দের সব শ্বাশুড়ি তালপাখা নিয়ে তাদের মাথায় হাওয়া দিয়ে শুভ কামনা করবেন প্রতিবছরের মতো করে ।তাই এই মাসে তাল পাখার চাহিদা গগনচুম্বি।তাল গাছ থেকে পাতা কেটে শুকানো ও পাখা তৈরি করতে হয়। তাই শিল্পীদের এখন আর চোখে ঘুম নেই। পাখা তৈরির সব জিনিস পত্রের দাম বৃদ্ধি হওয়ায় এবং সঠিক পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে যদিওবা সমস্যায় পড়তে হয় শিল্পীদের । তবুও সামান্য কিছুর লাভের আশায় প্রতিনিয়ত ঘাম ঝরা পরিশ্রম করে চলছেন গ্রাম্য শিল্পীরা ।
উত্তর দিনাজপুর জেলার মুস্তাফানগর,ধনকৈল,রাধিকাপুর সহ বহু গ্রামের শতাধিক পরিবার বিগত কয়েক দশক ধরে তাল পাতা দিয়ে বাহারি হাত পাখা তৈরি ও বাজারজাত করে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। শুকনো তালপাতা, বাঁশ, সুতা ও রং দিয়ে তৈরি করা হয় বাহারি এসব হাত পাখা। হাত পাখা তৈরির এ সমস্ত উপকরণের দাম বিগত বছরের তুলনায় দ্বিগুণ বেড়ে যাওয়ায় খরচ পুষিয়ে উঠতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা।
পাইকাররা গ্রামবাংলার তালপাখার শিল্পীদের খুঁজে নিয়ে তাদের কাছথেকে তাদের তৈরি তালপাখা
পাইকারি মূল্যে নিয়ে পাড়ি দিচ্ছে দূর দূরান্তে।তাই নাওয়াখাওয়া ভুলে এই গরমের
ফাইদা তুলতে তালপাখার শিল্পীরা একেরপর এক তালপাখা তৈরী করে চলছে।শুধু তাই নয় কি শহরে কি গ্রাম জামাইষষ্ঠী উপলক্ষে সব জায়গায় এখন খুব চাহিদা এই তালপাখাগুলির।
দোকানগুলির এই তালপাখার বিক্রি এখন দারুন ভাবে বেড়ে গেছে।
পাখা কারিগররা জানায়, হাত পাখার তৈরির প্রধান উপকরণ তাল পাতা যা শীতের মরসুমে বিভিন্ন জেলা থেকে চারা গাছের পাতা কিনে আনেন। তারপর পাতা রোদে শুকিয়ে জলে ভিজিয়ে রাখেন। পরে জল থেকে উঠিয়ে নরম ভেজা পাতা গোলাকার করে কেটে মাঝখান থেকে দু’খন্ড করেন। এরপর বোঝা বেঁধে পাতা ঘরে রেখে দেন এবং সেখান থেকে নিয়ে সারাবছর বাড়িতে বসে পাখা তালপাখা তৈরি করেন। একটি তাল পাতা থেকে দুটি তালপাখা তৈরি হয়। তিনি আরও জানান পুঁজি না থাকায় এবং অনেক দূর থেকে পাতা কেনার কারণে অনেক বেশি খরচ পড়ে যায়। কারিগর মজনু মিয়া জানান,
বছরে ২/৩ মাস তাল পাখার বেশি চাহিদা থাকত আগে। চৈত্র থেকে শুরু করে জৈষ্ঠ্য মাস পর্যন্ত।তবে এখন শুধু জামাইষষ্ঠীতেই তালপাতার চাহিদা দেখা যায় ।
প্রচন্ড তাপদাহ ও বিদ্যুতের লোডশেডিং এ সময়টাতে বেশি হওয়ার কারণে আগে এসময়টাতে তাল পাখার চাহিদা থাকত।তবে এখন বহু বাড়িতে বাড়িতে ইনভাইটার চলে আসায় লোডশেডিং এর সমস্যা তেমন দেখা যায় না।যদিও গ্রাম বাংলার কিছু কিছু বাড়িতে এখনো পাখার চাহিদা রয়েছে ।
তিনি জানান, পরিবারের ছোটরাও বাবা মায়েদের ব্যস্ততা দেখে বসে থাকতে পারে না। পড়াশোনার পাশাপাশি পাখা তৈরির বিভিন্ন কাজ করে তার বড়দের সাহায্য করে। নুর আলী নামের একজন কারিগর জানান, গত বছরগুলোর চেয়ে এবছর একটি পাখাতে দাম বেড়েছে প্রায় ৫ টাকা। কিন্তু লাভ হচ্ছে কম। কারণ পাখা তৈরির প্রতিটি জিনিসেরই দাম বেশি। তিনি জানান, প্রতিটি পাখায় তৈরি পর্যন্ত প্রায় ১২ থেকে ১৫ টাকা খরচ হচ্ছে। বিক্রি হচ্ছে প্রায় ১৫ থেকে ২০ টাকা টাকা। অবশ্য পাইকার ব্যবসায়ীরা উপরোক্ত দামে পাখাগুলি তাদের কাছ থেকে নিয়ে যায়। জামাই ষষ্ঠীতে তারা একটি পাখা ৩০ থেকে ৩৫ টাকায় বিক্রি করে।
জোছনা নামের এক গৃহবধূ জানান, পাতা দিয়ে পাখা তৈরি করে, শরীর ঘেমে মাটিতে পড়লেও বাতাস নেওয়ার সময় তাদের হয় না। কারণ রান্নবান্না ও গৃহস্থলীর কাজের পাশাপাশি তাদেরকে পাখা তৈরির কাজে ব্যস্ত থাকতে হয়। অমেলা বেগম নামের বৃদ্ধা মহিলা জানান, প্রায় ৪০ বছর ধরে তিনি পাখা তৈরির কাজ করছেন। তিনি জানান, বাড়ির বৌদেরকেও পাখা তৈরির কাজ শিখিয়েছেন। ফলে তার ব্যস্ততা এখন একটু কমেছে।তাই একদিকে গরম অন্য দিকে জামাইষষ্ঠী দুইয়ে পাখার যোগান দিতে ব্যস্ত শিল্পীরা ।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584