নবনীতা দত্তগুপ্ত, বিনোদন ডেস্কঃ
নতুন বছরের ৪ জানুয়ারি থেকে বাংলা টেলিভিশনের পর্দায় আসছে ‘দেশের মাটি’। সন্ধে সাড়ে ৬ টা থেকে রাত সাড়ে ৮ টার স্লটে বিরাজ করবে লীনা গঙ্গোপাধ্যায় এবং শৈবাল ব্যানার্জির ‘ম্যাজিক মোমেন্টস মোশন পিকচার্স প্রাইভেট লিমিটেড’। এ ছাড়া ‘কোড়া পাখি’ তো আছেই।
চ্যানেল আয়োজিত ভারচুয়াল প্রেস কনফারেন্সে ধারাবাহিকের কাহিনিকার লীনা গঙ্গোপাধ্যায় জানান- “দেশের মাটি বলবে মাটির গল্প। গল্প আবর্তিত হয় মফস্বলের একটি ব্যস্ত জায়গা স্বরূপ নগরকে কেন্দ্রে রেখে। এই স্বরূপ নগরেরই একটি একান্নবর্তী পরিবার গল্পের মূল কেন্দ্রবিন্দু।
সেখানে থাকে দুজন বর্ষীয়ান নাগরিক দাদান ও দিদা। স্বরূপ নগরের সকলে তাদের দাদান ও দিদা বলেই ডাকে। তাদের সন্তান সন্ততিরা সব কর্মসূত্রে বিদেশে। দাদানের বিশ্বাস তাদের উত্তরসূরীরা একদিন দেশের মাটিতে ফিরবে। তারা দেশের মাটির মর্ম বুঝবে এবং নিজেদের মাটির উন্নতিসাধন করবে। সেটা কি সম্ভব হয় আদৌ? কিংবা হলেও কী ভাবে হয়, কবে হয় সেটাই গল্প।”
সব গল্পেই কেন্দ্রীয় চরিত্র যাকে বলে নায়ক-নায়িকা থাকে। এই ধারাবাহিকে তাদের কী ভূমিকা, জানতে চাইলে লীনা গঙ্গোপাধ্যায় জানান- “নায়ক-নায়িকা কনসেপ্টে আমি আর বিশ্বাস করি না। মানে সব ঘটনা তাদের কেন্দ্রে রেখেই ঘটবে তেমনটা আমার গল্পে আর হয় না। আমার লেখার স্টাইলে অনেক বদল এসেছে শ্রীময়ী থেকে। আমার গল্পে পার্শ্ব চরিত্ররাও সমান গুরুত্ব বহন করে। শ্রীময়ী, মোহর, খড়কুটোর পর এবার সেই ধারা দর্শক দেখবেন দেশের মাটিতেও।
তবুও যদি নায়ক-নায়িকার কথা ওঠে তাহলে বলব এখানে নায়িকা নোয়া নামে একটি মেয়ে। নোয়া নামটা থেকেই বোঝা যায় সে কতটা মানুষকে বেঁধে রাখতে পারে। স্বরূপ নগরের নাগরিকদেরও সে বেঁধে রাখে। তার জীবনে তেমন কোনও বড় লক্ষ্য নেই। স্বরূপ নগরই তার এক এবং অদ্বিতীয় ডেস্টিনেশন। এহেন নোয়ার সঙ্গে কীভাবে একজন বিলিতি ডাক্তারবাবু দিব্যাংশুর ভাগ্যচক্র জড়িয়ে যায় সেটাই দেখার।
এই বিলিতি ডাক্তারবাবুই গল্পের নায়ক। সে বিদেশে লেখাপড়া করে ডাক্তার হয়েছে। তার এক প্রেমিকাও আছে। নায়কের ছকে বাঁধা গোছানো জীবনে নোয়া কীভাবে চলে আসে সেটাই আসলে দেখার। এই দুই চরিত্রে শ্রুতি দাস এবং দিব্যজ্যোতি দত্ত।”
আরও পড়ুনঃ ‘ফিরকি’ ফেরানোর দাবিতে সোচ্চার সোশ্যাল মিডিয়া
গল্পে রয়েছে আরও বহু চরিত্র। তাদের মধ্যে স্বরূপ নগরের রাজা একজন। সে কলকাতায় লেখাপড়া করা ডাক্তার। তাকে অনেকে হাতুড়ে ডাক্তার বলে৷ যেহেতু সে বিলেত ফেরত ডাক্তার নয়। রাজা চনমনে প্রকৃতির ছেলে। সে গোটা স্বরূপ নগরকে এক সুতোয় বেঁধে রাখে। সে সু সংগঠক। সে একজন দাতিত্ববান ছেলে, সে দাদানের প্রিয় নাতি, স্বরূপ নগরের ধারক। সবাই তাকে মান্যি করে। এককথায় তাকে নেতা মানে। তার আদর্শ মেনে কাজ করে নোয়া।
এই নোয়া আর রাজার সঙ্গে দাদান, দিদার কোনও রক্তের সম্পর্ক না থাকলেও আছে আরও বেশি কিছু। দাদানের পরিবারের আরেক সদস্য বউরানি। সে ভাল গান গায়। বড় সুযোগ পেয়েও সে স্বরূপ নগর ছেড়ে যায়নি। সেখানকার ছেলেমেয়েদের গান শেখায় সে। গানের একটি দল আছে তার। তার জীবনে একটা ক্রাইসিস আছে। সেটা খোলসা করতে চাননি লীনা গঙ্গোপাধ্যায়। বউরানির চরিত্রে রয়েছেন ঋতা দত্ত চক্রবর্তী।
আরও পড়ুনঃ বাবার ঘর ছেড়ে গদাধরের পথে সারদা
রাজার চরিত্রে রাহুল অরুণোদয় বন্দ্যোপাধ্যায়। নিজের চরিত্র নিয়ে লীনা গঙ্গোপাধ্যায়ের কথার রেশ টেনেই তিনি জানান- “রাজার মাটিতে পা, আকাশে চোখ। স্বপ্নের দিকে চোখ তার। রবির ভাষায় বলতে গেলে বিশ্ব ভরা প্রাণ- এই তিনটে শব্দে রাজা বেঁচে আছে। স্বরূপ নগর ওর কাছে গোটা একটা পৃথিবী৷ ওকে ঘিরেই সংস্কৃতি গড়ে ওঠে স্বরূপ নগরে, যার ধারক নোয়া। ১৯ বছর বয়সে আমায় প্রথম ডেট টা দেয় শৈবাল ব্যানার্জি। আরও একবার লীনা দি এবং শৈবাল দার সঙ্গে কাজ করতে পেরে আমি খুশি।”
এই ধারাবাহিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে রয়েছেন রুকমা রায়। ভারচুয়াল প্রেস কনফারেন্সে তিনি জানান- “একান্নবর্তী পরিবারে একটা সময় ছিলাম আমি। এখন আর নেই। একান্নবর্তী পরিবারের ছোট ছোট ভালোবাসা, চাওয়া পাওয়াগুলো আমায় খুব টানে। চেয়েছিলাম পর্দায় কোনও একান্নবর্তী পরিবারের সদস্য হতে। লীনা দি’র আরেকটি ধারাবাহিক খড়কুটোতে আমি আছি। সেখানে একান্নবর্তী মুখার্জি পরিবারের আমি কেউ নেই। ওরকম একটা পরিবারের প্রতি খুব লোভা আমার৷ এই ধারাবাহিকে সেটা পেয়ে ভাল লাগছে।”
এখানে তথাগত মুখোপাধ্যায়কে দেখা যাবে একজন সাংবাদিকের চরিত্রে। তাঁর চরিত্রের নাম সৌরাংশু। তার স্ত্রী’ও সাংবাদিক। একই পেশায় থাকার দরুণ দুজনের মধ্যে একটা প্রতিযোগিতা থাকে। মতানৈক্য থাকে বলে জানান লীনা গঙ্গোপাধ্যায়। তথাগত জানান- “সাংবাদিকদের এই মুহূর্তের অবস্থান এবং কাজের প্রতি তাঁদের নিষ্ঠা, সততা সহ যাবতীয় দিক তুলে ধরা হবে ধারাবাহিকে।”
ভারচুয়াল প্রেস কনফারেন্সে শ্রুতি দাস বলেন- “ত্রিনয়নী শেষ হওয়ার পর আমি লীনা দিকে টেক্সট করি যে আপনার সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পেলে কৃতজ্ঞ থাকব। অদ্ভুতভাবে দিদি মেসেজটা দেখার আগেই আমি ডাক পাই নোয়া চরিত্রের জন্য। আমি সত্যিই খুশি। মন থেকে চাইলে সব কিছুই পাওয়া যায়। প্রমাণ পেলাম আবার।”
দিব্যজ্যোতি জানান- “চুনি পান্না শেষ হওয়ার পর দেড় মাসের মধ্যেই এই কাজটা পেলাম। একটা ইন্টারভিউ হয় আমার। সিলেক্ট হই। আমি আমার চরিত্রের জন্য ২০০% শ্রম দেওয়ার চেষ্টা করব।”
ধারাবাহিকের পরিচালক শৈবাল ব্যানার্জি জানান- “অনেক লোকেশন ঘুরে কাজ চলবে। স্বরূপ নগর গড়ে তোলা হয়েছে বারুইপুর রাজবাড়ি ও তার আশেপাশের জায়গা নিয়ে। সেট করছি কলকাতাতেও৷ গানের ব্যবহার আছে ধারাবাহিকে। সঙ্গীত পরিচালনায় দেবজ্যোতি মিশ্র। প্রভাতফেরির একটা সিকোয়েন্স বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে শুট করা হয়েছে। শুটিং প্যাটার্নে অন্য স্বাদ দেওয়া হচ্ছে, যেটা দর্শকের চোখে আরাম দেবে।”
৪ জানুয়ারি থেকে প্রতিদিন সন্ধে সাড়ে ৬ টায় দেখুন ‘দেশের মাটি’ স্টার জলসায়।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584