পিয়ালী দাস,বীরভূমঃ
‘অজয় নদে স্নান করলে শুনেছি পুণ্য হয়। রাজ্যের যাঁরা ক্ষমতায় আছেন বেশিরভাগ পাপ তো ওঁরা করছেন।তাই রাজ্যের শাসকদের আগে অজয় নদে স্নান করা উচিত।’ আজ জয়দেবের মেলাতে গিয়ে রাজ্য সরকারকে কটাক্ষ করে একথা বলেন বি.জে.পি-র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ।আজ থেকে অজয় নদের তীরে শুরু হল জয়দেব মেলা।এই মেলা জয়দেব-কেন্দুলি মেলা নামেও পরিচিত।আজ দুপুরে এই মেলার সূচনা করেন মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ।
এই মেলা পরিদর্শনে আজ বীরভূম যান দিলীপ ঘোষ। সেখানে গিয়ে তিনি বলেন, “বীরভূম ও বর্ধমানে এই সংগমস্থল অজয় নদের তীর। কবি জয়দেবের স্মৃতি স্থান।প্রভু রাধা-কৃষ্ণের এখানে মন্দির আছে। সে মন্দির সংস্কারের অভাবে ভেঙে পড়ছে। এই জায়গা বাংলার লোকসংস্কৃতির কেন্দ্র।এখানে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে মেলার প্রস্তুতি প্রায় কিছুই নেই।রাস্তার যা অবস্থা তাতে রাস্তায় মানুষ পড়ে যাবে।একবার মেলাতে ঢুকলে একটা গাড়িকে ১০০ টাকা করে ট্যাক্স দিতে হচ্ছে।যতবার মেলাতে যাবেন ততবার ১০০ টাকা করে গাড়িকে ট্যাক্স দিতে হবে।আমাদের মনে হয় কেন্দুলি মেলার উপর রাজ্য সরকারের আরও বেশি লক্ষ্য দেওয়া উচিত।”
এরপর তিনি অজয় নদে স্নান করার প্রসঙ্গে বলেন, “বীরভূমে পাপ বেশি। যত খুন,লুটপাট, বোম- বন্দুকের আওয়াজ এখানে হয়।যেটা পশ্চিমবাংলার সংস্কৃতি নয়।সেজন্য এখানে বেশি শান্তি হওয়া উচিত।এখানে স্নান করলে মানুষের মন যদি একটু পবিত্র ও শুদ্ধ হয়।যাতে পরিবেশ শান্ত হয়।পরিবেশ শান্ত হলে আমরা শান্তিতে থাকতে পারব।” তিনি আরও বলেন, “নদীর দু’পাশে দু’টি জেলা। তাই দু’জেলার মানুষের জন্য আমি দু’টি ডুব দিয়েছি।আর সারা বাংলার মানুষের আর নিজের জন্য আমি আরও একটা ডুব দিয়েছি।আজকে আমি যে ডুব দিলাম তারজন্য রথযাত্রা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে আমাদের পক্ষে রায় আসবে।যথা সময় রথযাত্রা শুরু হবে। বাংলার মানুষের ইচ্ছাপূরণ হবে।”এরপর ১৯ জানুয়ারি তৃণমূলের ব্রিগেডে সভা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ” ব্রিগেডে তৃণমূল ও সি.পি.আই(এম)-এর এক সঙ্গে যত লোক জমায়েত হোক না কেনও তার থেকে আমরা বেশি লোক জমায়েত করব।”
প্রতি বছরের মতো এবারও মকর সংক্রান্তির দিন ইলামবাজারে জয়দেবে কবি জয়দেবের ভিটের কাছে অজয় নদের জলে পুণ্যস্নান করতে আসেন ভক্তরা। আখড়া গুলিতে শুরু হয়ে যায় ভজন, কীর্তন,খিচুড়ি ভোগ খাওয়ার ভিড়।অন্যান্য বছর অজয় নদের তীরে অগোছালো ভাবে মেলা বসলেও এবার প্রশাসনিক তৎপড়তায় পরিকল্পনা মাফিক মেলা বসানো হয়েছে। মেলা জুড়ে চলছে নির্মল জয়দেব মেলার প্রচার। গত বছর থেকেই ‘জয়দেব মেলা’কে নির্মল মেলা হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে। তারজন্য চলছে প্লাস্টিক বর্জন, শব্দ দূষণ রোধ, উন্মুক্ত মল-মূত্র ত্যাগ না করার জন্য সতর্ক করা হচ্ছে।মন্দিরে পুজো দেওয়ার বিশাল লাইন পড়ে যায় সকাল থেকেই।ড্রোন ক্যামেরার মধ্য দিয়ে নজরদারি চালানো হয় মেলা প্রাঙ্গণ,নদীর চরেও।
অন্যদিকে, নাট্যমঞ্চেও সকাল থেকে চলতে থাকে রায়বেশে,ঝুমুর গান,বাউল গান প্রভৃতি। প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে,এবার জয়দেব মেলায় ১০টি সরকারি স্টল সহ প্রায় ৬০০ স্টল বসেছে। মেলা চত্বর,আখড়াগুলির পাশে,নদীর চরে প্রায় ১ হাজার অস্থায়ী শৌচাগার তৈরি করা হয়েছে। নদীর পাড়ে নজরদারির জন্য বসানো হয়েছে ২০টি ওয়াচ টাওয়ার, রয়েছে ১২ টি সি.সি.টি.ভি ক্যামেরা। প্রায় ১৮০০ পুলিশকর্মী নিয়োগ করা হয়েছে।নদীর পাড়ে পুণ্যার্থীদের স্নানের যাতে ছবি তোলা না হয় তারজন্য বিশেষ নজরদারি চলছে।উন্মুক্ত শৌচকর্ম বন্ধ করতে নজর রাখার জন্য একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে। চোরা বালিতে,নদীর জলে যাতে কোন দুর্ঘটনা না ঘটে তারজন্য বিপর্যয় মোকাবিলার একটি বিশেষ দল রয়েছে।রয়েছে পর্যাপ্ত মোকাবিলার ব্যবস্থা।
আরও পড়ুনঃ হাসপাতালের বেড সংখ্যা বাড়লেও ঘাটতি চিকিৎসকের
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584