মনিরুল হক, কোচবিহারঃ
বহিস্কৃত তৃণমূল যুব নেতা নিশীথ প্রামাণিককে দলে ফিরিয়ে আনা হবে কি না তা নিয়ে এখন হাজারও প্রশ্ন তৃণমূল যুব কর্মী ও দিনহাটার সাধারণ মানুষের মধ্যে। হাট, বাজার, চায়ের দোকান, রাস্তা, ঘাট, আড্ডা থেকে দিনহাটার বাসিন্দাদের আলোচনার মুল বিষয়বস্তু হয়ে উঠেছেন নিশীথ। তার রাজনীতির ভবিষ্যৎ পরিস্থিতিতে নিয়ে একদিকে যেমন নিশীথ অনুগামী যুবদের বিরোধীরা উল্লাসিত। আর অন্যদিকে নিশীথ অনুগামী নেতাকর্মীরা হতাশ।যদিও তারা এক বুক আশা নিয়ে বেছে আছে তাদের নেতা নিশীথ প্রামাণিককে খুব শীঘ্রই দলে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে।যদিও এ বিষয় নিয়ে কোচবিহার জেলা তৃণমূল যুব কংগ্রেসের সভাপতি তথা সাংসদ পার্থ প্রতিম রায় কোন মন্তব্য করতে চান নি।
সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যখন তৃণমূল যুব কংগ্রেসের সভাপতি হয়।সেই সময় থেকে দিনহাটা ১নং ব্লকের তৃণমূল যুব কংগ্রেসের দায়িত্ব পান ভেটাগুড়ির ওই যুবক নিশীথ প্রামাণিক।তিনি পেশায় শিক্ষক ছিলেন। সেই নিশীথ প্রামাণিক দিনহাটা ১নং ব্লকে ধীরে ধীরে প্রভাব বাড়তে শুরু করে।পরবর্তী সময়ে তিনি ব্লকের বিভিন্ন এলাকায় স্থানীয় তৃণমূল নেতার উপর ক্ষুব্ধ সাধারণ মানুষের বিক্ষোভকে কাজে লাগিয়ে তাদের যুব’র ছাত্র ছায়ায় নিয়ে আসার কাজ করেন। এরপর পঞ্চায়েত নির্বাচনে দলের টিকিট পাওয়া নিয়ে কোন্দল শুরু হয় তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে।সেই কোন্দলকে তিনি কাজে লাগিয়ে যুবর ব্যানারেই বিক্ষুব্ধদের নির্দল হিসেবে ভোটে দাঁড় করান পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদে। পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূলের মূল সংগঠনের বিরুদ্ধে যুব কর্মীদের ভোটে দাঁড়ানোর ফলে দিনহাটা তথা কোচবিহার জেলার বিভিন্ন এলাকায় শুরু হয় রক্তাক্তক্ষয়ী সংগ্রাম।সেই রক্তাক্তক্ষয়ী সংগ্রাম দিনহাটায় গিতালদহে তৃণমূলের এক প্রাক্তন পঞ্চায়েত সদস্যের মৃত্যু হয়। পরে আরও অনেকে ঘটনায় অনেকে আহত হয়। পরবর্তীতে যখন পঞ্চায়েত নির্বাচনের ফল বেরোলে দেখা যায় যুবরা তিনটি স্তরে ভালো ফল করেছেন। দিনহাটা ১নং ব্লকে ১৬ টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে প্রায় ১২ টি, দিনহাটা ২নং ব্লকে বেশ কিছু জায়গায় তাদের প্রার্থীরা জয়ীও হয়েছে এমনকি কোচবিহার ১ নং ব্লকের ১৬ টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে ৮টি তাদের দখলে। তাছাড়াও মাথাভাঙ্গা, শীতলখুচি, জামালদহ, পুন্ডিবাড়ি, বলবামপুর সহ বিভিন্ন এলাকা তাদের আধিপত্য বিস্তার করেন তিনি। এই ঘটনার পর নিশীথ প্রামাণিকের গুরুত্ব বাড়তে শুরু করে শাসক দলের অন্দরে।
এই পরিস্থিতিতে দিনহাটা ১ নং ব্লকে কোণঠাসা হয়ে পড়েন তৃণমূল কংগ্রেস। এমনকি দিনহাটার বিধায়ক তার কাছে বর্শতা স্বীকার করেন। দিনহাটা ১ নং ব্লকের পাশাপাশি নিশীথের প্রভাব ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ে দিনহাটা ২ নং ব্লক ও সিতাই ব্লকে।এরপর থেকেই তৃণমূল যুব সঙ্গে বিভিন্ন এলাকার সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে তৃণমূল কংগ্রেস। এই পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে গত ৭ ডিসেম্বর কোচবিহার জেলার তৃণমূল যুব কংগ্রেসের সভাপতি তথা সাংসদ পার্থ প্রতিম রায় তার ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে নিশীথ প্রামাণিককে দল থেকে বহিষ্কারের কথা ঘোষণা করেন।এতে একদিকে যেমন উল্লাসিত হয়ে পড়ে তৃণমূল কংগ্রেস। অপরদিকে যুবরা হতাশায় পড়ে অনেকেই তৃণমূল কংগ্রেসের দিকে পা বাড়ান এবং অনেকে আবার চলে গিয়েও যুবতে ফিরে আসেন। যেমন উল্লেখযোগ্য কোচবিহার ১নং ব্লকের পানিশালা গ্রাম পঞ্চায়েত। ইতিমধ্যে নিশীথ বহিষ্কারের দুই সপ্তাহ পেরিয়ে গেল দিনহাটা তথা কোচবিহার জেলার বিভিন্ন এলাকায় এখন লক্ষ টাকার প্রশ্ন নিশীথের ভবিষ্যৎ কি হবে। তা নিয়ে হাট, বাজার, চায়ের দোকান, রাস্তা, ঘাট, আড্ডা থেকে দিনহাটা তথা কোচবিহার জেলার বিভিন্ন এলাকায় বাসিন্দাদের আলোচনার মুল বিষয়বস্তু হয়ে উঠেছেন নিশীথ। যদিও নিশীথ প্রামাণিক অনুগামীরা এখন আশাবাদী তিনি আবার দলে প্রত্যাবর্তন করছেন।
এবিষয়ে তৃণমূল যুব কংগ্রসের কোচবিহার ১নং ব্লকের যুব নেতা আসরাফুল হক, আটিয়াবাড়ি ২নং অঞ্চলের সভাপতি নাজির হোসেন এবং পুটিমারি ২নং অঞ্চলের যুব সভাপতি শামসুল হক বলেন, “যুব নেতা নিশীথ প্রামাণিক শুধু হাজার হাজার মানুষের মনের মধ্যে রয়েছে। তাকে চক্রান্ত করে দল থেকে ফেসবুকের মাধ্যমে বহিষ্কার করা হয়েছে। এটা আমরা কোন দিনও মানতে পারি না। তাই আমরা রাজ্য স্তরের নেতাদের উপর আশ্বাস রয়েছে তারা দিনহাটার তথা কোচবিহারে যুব কর্মীদের কথা মাথায় রেখে আবার আমাদের নেতা নিশীথ প্রামাণিক কে দলে ফিরিয়ে আনবেন এই আশাই রাখছি।”
আরও পড়ুন: সাগরে এখন সাজ সাজ রব
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584