নিজস্ব সংবাদদাতা, ওয়েব ডেস্কঃ
ক্যাপিটল হিল সংঘর্ষে উস্কানি দেওয়ার অভিযোগে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেনেটের হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভসে ইমপিচমেন্ট বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের।
গত ৬ জানুয়ারি, মার্কিন কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশন চলাকালে ক্যাপিটল হিল ভবনে নজিরবিহীন হামলার ঘটনা ঘটায় ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থকরা। ঘটনায় চার জনের মৃত্যু হয়, পরিস্থিতি আয়ত্বে আনতে ন্যাশনাল গার্ড নামাতে হয়। এই ঘটনায় সরাসরি উস্কানি দেওয়ার অভিযোগ ওঠে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে।
রিপাবলিকান পার্টির ১০ জন সদস্য ট্রাম্পের বিপক্ষে গিয়ে ভোট দিয়ে তাঁর ইমপিচমেন্টকে সমর্থন করেন।ট্রাম্পের ইমপিচমেন্টের পক্ষে ২৩২ এবং বিপক্ষে ১৯৭ ভোট পড়ে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একমাত্র প্রেসিডেন্ট যিনি দুবার ইমপিচড হলেন এবং কংগ্রেসের পক্ষ থেকে অপরাধ মূলক সংগঠনে জড়িত থাকার কারণে যাঁকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেও একজন রিপাবলিকান, এরপর তিনি সেনেটে বিচারের সম্মুখীন হবেন। দোষী সাব্যস্ত হলে তিনি ভোটে প্রার্থী হওয়ার বা ক্ষমতায় ফেরার সুযোগ চিরতরে হারাতে পারেন।
তবে এখনই হোয়াইট হাউজ ছাড়তে হচ্ছে না তাঁকে কারণ আর এক সপ্তাহ পরেই জো বিডেনকে ক্ষমতা হস্তান্তর করার পূর্বনির্ধারিত দিন। এই সময়ের মধ্যে আবার সেনেট গঠন করা সম্ভব নয়। আগামী ২০ জানুয়ারি জো বিডেনের হাতে ক্ষমতা ছাড়তেই হবে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে। ইতিমধ্যে ফেসবুক, টুইটার সকলেই বন্ধ করে দিয়েছে ট্রাম্পের একাউন্ট।
আরও পড়ুনঃ ফেসবুক-টুইটারের পর এবার বন্ধ হল ট্রাম্পের ইউটিউব চ্যানেলও
বুধবার ইমপিচমেন্টের ভোট হওয়ার আগে কয়েক ঘণ্টা ধরে বিতর্ক হয়, ডেমোক্রেট নিয়ন্ত্রিত হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভসে। সেসময় ক্যাপিটলের ভেতরে এবং বাইরে ন্যাশনাল গার্ডের সশস্ত্র সেনা মোতায়েন করা হয়।
আগামী ২০ জানুয়ারি, নব নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি জো বিডেনের শপথ অনুষ্ঠানের দিন ওয়াশিংটন ডিসি সহ ৫০টি অঙ্গরাজ্যের সবকটিতে সশস্ত্র বিক্ষোভের পরিকল্পনা রয়েছে বলে ফেডারেল তদন্ত সংস্থা(এফবিআই) সতর্ক করেছে।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ইমপিচমেন্টের অভিযোগ শুধুমাত্র রাজনৈতিক বা অপরাধমূলক নয়। তাঁর বিরুদ্ধে কংগ্রেসের অভিযোগে বলা হয়েছে যে, ৬ জানুয়ারি হোয়াইট হাউসের বাইরে তিনি তার বক্তব্যের মাধ্যমে ক্যাপিটল হিলে হামলা চালিয়ে দখলে নেওয়ার ঘটনায় উস্কানি দিয়েছেন।
আরও পড়ুনঃ করোনা ভাইরাসের উৎস খুঁজতে উহান পৌঁছাল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিজ্ঞানীরা
তিনি তার সমর্থকদেরকে “শান্তিপূর্ণভাবে এবং দেশপ্রেমের সাথে” নিজেদের আওয়াজ তোলার আহ্বান জানিয়েছিলেন। একই সঙ্গে নির্বাচনে তিনি “কারচুপির শিকার” হয়েছেন, সমর্থকদের তা আবার মনে করিয়ে দিয়ে তার বিরুদ্ধে “ভয়ংকর লড়াইয়ের” ও আহ্বান জানান। এর জেরেই সেদিন ক্যাপিটল হিল বেনজির আক্রমনের মুখে পড়ে।
ইমপিচমেন্টের বিবৃতিতে বলা হয়েছে যে, ডোনাল্ড ট্রাম্প বারবার মিথ্যা বক্তব্য দিয়ে প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন যে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফলে কারচুপি হয়েছে। ট্রাম্পের এই বক্তব্য কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়। এছাড়া বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে যে, তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে বারংবার একই দাবি তুলে সমর্থকদের উত্তেজিত করেছেন এবং একারণেই ক্যাপিটল হিলে অরাজক, হিংসাত্মক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় এমনকি প্রাণহানির ঘটনাও ঘটে।”
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প চরমভাবে যুক্তরাষ্ট্র এবং তার সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলির নিরাপত্তা বিপন্ন করেছেন, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে হুমকির মুখে ফেলেছেন, ক্ষমতার শান্তিপূর্ণ হস্তান্তরকে বাধা দিয়েছেন এবং সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখাকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়েছেন,”ইমপিচমেন্টের বিবৃতিতে একথাও উল্লেখ করা হয়।
এখনও পর্যন্ত কোন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ইমপিচমেন্টের মাধ্যমে ক্ষমতা থেকে অপসারিত হননি। ২০১৯ সালে একবার হাউসে ইমপিচড হয়েছিলেন ট্রাম্প। কিন্তু সেনেটে পার পেয়ে যান তিনি। একই ধরণের ঘটনা ১৯৯৮ সালে বিল ক্লিনটনের সাথে এবং ১৮৬৮ সালে অ্যান্ড্রু জনসনের সাথে ঘটেছিল।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584