মঙ্গলবার থেকেই ‘দুয়ারে দুয়ারে সরকার’, ১০ প্রকল্পে বিস্তারিত সুযোগ-সুবিধা ঘোষণা মুখ্যসচিবের

0
227

শুভম বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতাঃ

আর দেরি করতে চাইছে না রাজ্য প্রশাসন। বাঁকুড়া সফর সেরে মুখ্যমন্ত্রীর নবান্নে ফেরার পরেই সোমবার নবান্নে রাজ্য সরকারের ১০ টি প্রকল্পের সুবিধা কোথায় কিভাবে পাওয়া যাবে তার বিস্তারিত বিবরণ মুখ্য সচিব ঘোষণা করলেন নবান্নের প্রশাসনিক বৈঠকে।

Alapan Banerjee | newsfront.co
সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্যসচিব

তিনি জানিয়েছেন মঙ্গলবার থেকে রাজ্য সরকারের দুয়ারে দুয়ারে সরকার প্রকল্প চালু হচ্ছে, যার মাধ্যমে রাজ্য বাসীদের এই সমস্ত প্রকল্পের সুবিধা পৌঁছে দেওয়া হবে। কিভাবে আবেদন করলে আর কখন রাজ্যবাসী এই প্রকল্পের সুবিধা গুলি পাবেন সেটাই তিনি এদিন জানিয়ে দিয়েছেন।

‘দুয়ারে দুয়ারে সরকার’ প্রকল্পের জন্যে যে ১০টি প্রকল্পকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে তা হল, খাদ্যসাথী, স্বাস্থ্যসাথী, জাতিগত শংসাপত্র দান, শিক্ষাশ্রী, কন্যাশ্রী, রুপশ্রী, ঐক্যশ্রী, জয় জোহর, তফশিলি বন্ধু, একশো দিনের কাজ।

১.- স্বাস্থ্য সাথী

. নগদ বিহীন এবং বিনামূল্যে চিকিৎসার সুবিধা পাওয়ার জন্য গ্রাম পঞ্চায়েত স্তর এবং পুর ওয়ার্ড স্তরে আয়োজিত ক্যাম্পে আসতে হবে।

. প্রথম রাউন্ডে কেউ এসওপি নিয়ে এলে দ্বিতীয় রাউন্ডেই কার্ড পেয়ে যাবেন।

. দ্বিতীয় রাউন্ডে এসওপি দিলে তৃতীয় রাউন্ডে কার্ড পাবেন।

২.- জাতিগত শংসাপত্র

. দ্বিতীয় প্রকল্পটি তফসিলি জাতি/উপজাতি/ এবং অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণীর জন্য জাতিগত শংসাপত্র প্রদান করা হবে।

৩ এবং ৪.- জয় জোহর এবং তফসিলি বন্ধু প্রকল্প

এই দুই প্রকল্পের মাধ্যমে আদিবাসী উন্নয়ন দপ্তর এবং অনগ্রসর শ্রেণী কল্যাণ দফতরের উদ্যোগে ৬০ বছরের উর্ধ্বে আদিবাসী, এবং দলিত সম্প্রদায়ের কোনও বরিষ্ঠ নাগরিক (যিনি আর কোনও সরকারি আর্থিক সুবিধা পান না, তাঁকে) মাসিক ১০০০ টাকা অর্থ সাহায্য পাবেন।

আরও পড়ুনঃ সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণে মুখ্যমন্ত্রীকে ডাকবেন রাজ্যপাল দাবি সৌমিত্রর, জানল কী করে প্রশ্ন সৌগতর

৫.- খাদ্য সাথী

খাদ্য সাথী সংক্রান্ত যে কোনও সমস্যার জন্য এই ক্যাম্পে আবেদন করতে হবে। নাম ঠিকানা সংশোধন করা হবে। সিদা কুপন থেকে কার্ডে রূপান্তরিত করার জন্য ভিন্ন উপায়ে আবেদন করতে হবে।

৬.- শিক্ষাশ্রী

অনগ্রসর শ্রেণী, তফসিলি জাতি এবং আদিবাসী ছাত্রছাত্রীদের বছরে ৮০০ টাকা আর্থিক সাহায্য পাবেন। ঐক্যশ্রী প্রকল্পের মাধ্যমে সংখ্যালঘু ছাত্রছাত্রীরা বৃত্তি পান।

৭.- কন্যাশ্রী

রাজ্যের অধিকাংশ ছাত্রীই এই প্রকল্পের আওতাধীন। কিন্তু কোনও ক্ষেত্রে কোনও সমস্যা হলে এই ক্যাম্পে যোগাযোগ করতে পারেন। রাজ্য জুড়ে ২০,০০০ ক্যাম্প করা হবে।

৮.-রূপশ্রী

এই প্রকল্পের মাধ্যমে একটি সুনির্দিষ্ট বয়সের পর বিবাহের জন্য কন্যাকে আর্থিক সাহায্য করা হয়। এই রূপশ্রী প্রকল্প সংক্রান্ত কোনও সমস্যার সম্মুখীন হলে ক্যাম্পে আসতে হবে।

৯.-কৃষক বন্ধু প্রকল্প

এই প্রকল্প সংক্রান্ত যে কোনও সমস্যা, যেযমন পরচা, নথিভুক্ত করণ ইত্যাদি যে কোনও সমস্যায় ভূমি সংস্কার দফতরের আধিকারিকরা সাহায্য করবেন।

১০. ১০০ দিনের কাজ এবং জব কার্ড সংক্রান্ত যে কোনও সমস্যা হলে সাহায্য করা হবে।

এই কর্মসূচিটিকে জেলা এবং ব্লক স্তরে সাফল্যমন্ডিত করতে একটি বিশেষ টাস্ক ফোর্স গড়ে তোলা হবে। শীর্ষ আইএএস আধিকারিকরা নোডাল অফিসার হিসেবে কাজ করবেন এবং বিডিওদের ক্যাম্প পরিদর্শনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জেলাশাসক, জেলা পুলিশের আধিকারিক, মহকুমাশাসক এবং বিডিওদের সাথে একাধিক আলোচনা সভা সংঘটিত করা হয়েছে। এর পাশাপাশি রাজ্য সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের প্রচারের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা থাকবে। লোকপ্রসার এবং লোক শিল্পীদের প্রচারের কাজে নিযুক্ত করা হবে।

আরও পড়ুনঃ শিলিগুড়িতে সাংবাদিক বৈঠকে, তৃণমূলকে সমুদ্রের সাথে তুলনা করলেন ফিরহাদ

সমস্ত কিছু বর্ণনা করার পর মুখ্য সচিব বলেন, ‘ক্যাম্পে উপস্থিতির হার গণনা করা হবে। এর পাশাপাশি আমরা সমস্যার কতটা সমাধান হয়েছে সেই ব্যাপারেও নজর রাখব। এই কর্মসূচির মুখ্য উদ্দেশ্য হল সরকারি পরিষেবাকে মানুষের হাতের নাগালে পৌঁছে দেওয়া। একটি মাত্র সামগ্রিক ব্যবস্থার মাধ্যমে আমরা বিভিন্ন দফতরের সরকারি সুবিধা এবং সমস্যার সমাধান মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করব।’ জানানো হয়েছে জেলায় জেলায় সব প্রকল্পের প্রধান দায়িত্বে থাকবেন জেলাশাসক। মোট ৪ ভাগে হবে এই প্রকল্পের কাজ।

আরও পড়ুনঃ ডিসেম্বরের মাঝামাঝিতে বিধানসভা ভোটের আসন সমঝোতা নিয়ে বৈঠক বাম-কংগ্রেসের

সম্পূর্ণ প্রকল্পের কাজ ১ ডিসেম্বর থেকে ৩০ জানুয়ারি মধ্যে এই কাজ সম্পন্ন করা হবে। প্রথম ভাগের কাজ হবে ১ থেকে ১১ ডিসেম্বর। দ্বিতীয় ভাগের কাজ হবে ১৫-২৪ ডিসেম্বর। তৃতীয় ভাগের কাজ হবে নতুন বছরের শুরুতে ২ জানুয়ারি থেকে ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত। চতুর্থ ভাগের কাজ হবে ১৮ থেকে ২৮ জানুয়ারি অবধি। প্রতিটি ওয়ার্ডে বসবে ‘দুয়ারে দুয়ারে সরকার’-এর ক্যাম্প। মিলবে গ্রামীণ এলাকাতেও। ক্যাম্প বসবে স্কুল, কলেজ, কমিউনিটি হল, গ্রাম পঞ্চায়েত অফিসে।

নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, কবে কোথায় ক্যাম্প বসবে তা আগে ভাগেই জানিয়ে দেওয়া হবে। সেই ক্যাম্পে গিয়ে মানুষ অভাব অভিযোগ জানাতে পারবেন। বিভিন্ন বিষয়ে আবেদন করতে পারবেন। সেই কাজ দ্রুত করে দেবেন প্রশাসনিক আধিকারিকরা।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইতিমধ্যেই জানিয়েছেন, সরকারি পরিষেবা থেকে রাজ্যের কোনও মানুষ যাতে বঞ্চিত না হন সে বিষয়ে নিশ্চিত করা হবে। তবে শুধু গ্রামে নয়, শহরের মানুষও পাবে “দুয়ারে দুয়ারে সরকার” প্রকল্পের সুবিধা। পুর এলাকায় বাড়ির নকশা বা প্ল্যান অনুমোদন, পানীয় জলের সমস্যা মেটানো, মিউটেশন, সম্পত্তিকরের মূল্যায়ন সংক্রান্ত সমস্যা, জঞ্জাল সমস্যা মেটানোর মত আবেদন এই শিবির থেকেই করা যাবে।

নিউজফ্রন্ট এর ফেসবুক পেজে লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here