পিয়ালী দাস, বীরভূমঃ
স্কুলে অর্ধনগ্ন করে শিশু পড়ুয়াদের ক্লাস করানোর অভিযোগ উঠল প্রিন্সিপালের বিরুদ্ধে। এই অভিযোগ এনেছেন বীরভূম জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বাসু।

তদন্ত কমিটির রিপোর্ট জমা পড়তেই শিক্ষামন্ত্রীর কাছে সেই রিপোর্ট পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। জেলাশাসক জানিয়েছেন স্কুলের প্রিন্সিপাল সিস্টার অর্চনা শিশুদের অর্ধনগ্ন করে ক্লাশ করানোর বিষয়টি তদন্ত কমিটির কাছে স্বীকার করেছেন এবং প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনা যাতে না ঘটে, সে বিষয়ে তিনি যত্নবান হবেন।
ঘটনার সূত্রপাত গত সোমবার। প্রথম শ্রেণীর এক ছাত্রী বাড়িতে আসার পর শিশুটির মা দেখে, শিশুর পরনের গরম ফুল প্যান্ট নেই। জিজ্ঞাসা করতেই সে বলে, স্কুলের দিদিমণি খুলে নিয়েছে, কারণ স্কুল থেকে যে নির্দিষ্ট পোশাক ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছিল সেই পোশাকের সঙ্গে মিল না হওয়ার জন্য স্কুলের তরফে শিশুদের প্যান্ট খুলে নিয়ে স্কুলে জমা রাখা হয়।

সোমবার স্কুল ছুটির পর অভিবাবকরা ঘটনার কথা জানতে পেরে সাথে সাথে শান্তিনিকেতন থানায় অভিযোগ জানান কিন্তু শান্তিনিকেতন থানার আইসি কস্তুরী মুখোপাধ্যায় স্কুলের পর কর্তৃপক্ষকে ডেকে অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলিয়ে বিষয়টি মীমাংসা করে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়। এমনকি এও বলা হয় বাচ্চার ভবিষ্যতের কথা ভেবে বিষয়টি মিটমাট করে নিতে।
এরপর মঙ্গলবার সকালে স্কুলের সামনে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে অভিভাবকরা।
বিষয়টি নিয়ে কড়া প্রতিক্রিয়া দিয়ে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দেন, বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করে তদন্ত রিপোর্ট দ্রুত জমা দিতে।
আরও পড়ুনঃ আপত্তিকর শাস্তি স্কুলে, প্রতিবাদ অভিভাবকদের
সেই অনুযায়ী বৃহস্পতিবার তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি, তদন্ত রিপোর্ট জেলাশাসককে জমা দেয়। বীরভূমের জেলাশাসক সেই রিপোর্ট শিক্ষামন্ত্রীর কাছে পাঠিয়ে দেন।
তদন্ত কমিটি সূত্রে জানা গিয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে স্কুলে অভিভাবকদের সঙ্গে স্কুল শিক্ষকদের কোনও বৈঠক হয়নি। বাচ্চাদের পড়াশোনার উন্নতি নিয়ে, পাশাপাশি পোশাক নিয়ে যে বিতর্ক তৈরি হয়েছে তা নিয়েও শিশুদের ডায়েরিতে কোনও নির্দেশিকা দেওয়া হয়নি স্কুলের তরফে।
তদন্ত কমিটির নেতৃত্বে থাকা ডিআই প্রাইমারি সমরেন্দ্রনাথ সাঁতরা জানিয়েছেন, পোশাক খুলে শিশুদের শাস্তি দেওয়ার কারণে শিশুরা মানসিকভাবে অসুস্থ বোধ করবে এবং ভবিষ্যতে এই ঘটনার কোনও প্রভাব শিশুদের জীবনে যাতে না পড়ে, সেজন্য স্কুলকে দায়িত্ব নিয়ে শিশুদেরকে কাউন্সিলিং করতে হবে।
যদিও অভিভাবকদের দাবি, স্কুলের বর্তমান প্রিন্সিপাল সিস্টার অর্চনা যদি আগামী দিনে এই স্কুলের দায়িত্বে থাকেন, তাহলে শিশুরা খোলা মনে পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে পারবে না। তাই প্রিন্সিপালের অপসারণের দাবিতে অভিভাবকরা এখনও দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।
অন্যদিকে স্কুলের এক ছোট্ট শিশু অভিযোগ করেছে, বুধবার স্কুলে আসার পরে দিদিমণিদের তরফে বলা হয় সোমবার যাদের প্যান্ট খুলতে বলা হয়েছিল সেই ব্যাপারে যদি কেউ জিজ্ঞাসা করে তাহলে শিশুরা যেন মুখ না খোলে। বিষয়টি শুনে জেলাশাসক প্রতিক্রিয়া দিয়ে বলেন, এটি অত্যন্ত লজ্জাজনক ঘটনা।
মিথ্যা কথা বলার জন্য শিক্ষিকারা যদি শিশুদের উপর চাপ সৃষ্টি করে তাহলে শিশুরা ভুল পথে পরিচালিত হবে। বৃহস্পতিবার সকালে স্কুলে স্কুল কর্তৃপক্ষের প্রতিক্রিয়া নেওয়ার জন্য সাংবাদিকরা গেলে দেখা যায় গেটের বাইরে ‘সাংবাদিক প্রবেশ নিষেধ’ বলে নোটিশ দেওয়া রয়েছে স্কুল কর্তৃপক্ষের তরফে।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584