শ্যামল রায় ,কালনাঃ
যেন বিখ্যাত উপন্যাস বারো ঘর এক উঠোন এর বৃহত্তর রূপ দেখা যাবে মন্তেশ্বর থানার সিংহলি গ্রামে। এক গ্রামে আট পারিবারিক পুজো ঘিরে চলছে প্রবল উৎসাহ উদ্দিপনায় প্রস্তুতির শেষ পর্যায়ে। তবে এই গ্রামে আটটি পারিবারিক পুজো হলেও পুজোর বৈশিষ্ট্য নানান ধরনের রয়েছে। দেবী দুর্গাকে ঘিরে ও বৈচিত্রময় ধরা পড়ে এই গ্রামের পারিবারিক পুজোতে। এক দিকে এক গ্রামে আটটি পারিবারিক পুজো অন্যদিকে পুজো গুলির মধ্যে রয়েছে বৈচিত্র্যময় ভাবনা।
শুক্রবার ওই গ্রামে গিয়ে দেখা গেল যে প্রতিমা তৈরীর কাজ চলছে।
এক গ্রামে আট পুজোর কাহিনী যা মনে করিয়ে দেয় সেই বিখ্যাত কহবতকে। যদি হয় সুজন তেতুল পাতায় নয় জন। ৮ সেখানে সংখ্যা মাত্র আসলে পুজোই মিলে মিশে যাওয়া মন্তেশ্বর থানার কুসুম গ্রাম পঞ্চায়েতের বর্ধিষ্ণু সিংহালি গ্রাম সমস্ত সংখ্যা তত্ত্ব কে যেন হার মানাচ্ছে আজ।
আর মহামায়ার আরাধনায় সেই বৈষ্ণব ধর্মের প্রভাব।
অদূরেই শ্রী চৈতন্যের নবদ্বীপ ধাম।
আর মন্তেশ্বর থানা আর সিংহালি গ্রামে একাধিক পারিবারিক পুজো ঘিরে যেন আলাদা একটা অনুভূতি , উপলব্ধি করতে পারছেন গ্রামের বাসিন্দারা।পারিবারিক পুজো হয় আটটি। পরিবারের সংখ্যা ৫হাজার। গ্রামটি অতি প্রাচীন।
কৃষি নির্ভর ও চাকুরীজীবিদের সংখ্যা বেশি। এখানে পুজো শুরু হয়ে যায় আগেই। জানা গিয়েছে যে এখানে মূর্তি গড়ে নয়। পটে পুজো শুরু হয় বোধন থেকে। তাই পুজো ঘিরে সকলে মধ্যে যেন একটা টান টান আনন্দ ইতিমধ্যেই দোল খাওয়া কাশফুলের মতো ঢেউ খেলে যাচ্ছে গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে।
রেষারেষি নেই কিন্তু নেই প্রতিযোগিতা ও শুধুমাত্র আন্তরিক ভালবাসা আর নিষ্ঠা সহকারে পুজো হয়ে থাকে গ্রামের আটটি পারিবারিক পুজো ঘিরে।
আটটি পুজোর মধ্যে সবথেকে পুরনো পুজো হচ্ছে সাড়ে চারশ বছরের আদি বুড়ো মা।
তার পরে রয়েছে ছোট কুন্ডু বাড়ি, ব্যানার্জি বাড়ি, মুখার্জী বাড়ি, রায় বাড়ী, হাজরা বাড়ি, ভট্টাচার্য বাড়িতে পুজো হয়ে থাকে।
তবে রায় বাড়ির পুজোয় মূর্তি থাকে না বোধন থেকেই ঘটের পুজো হয়। ভট্টাচার্য্য বাড়ির তিন পুতুলের পুজো ঘিরে জাকজমক লক্ষ্য করা যায়।
আদি বুড়ো মা বাড়ির বংশধর সব্যসাচী চক্রবর্তী এদিন জানিয়েছেন যে থোড় দিয়ে ভোগ দেয়া হয় দেবী দুর্গাকে তারপরে পুজো । বুড়ো মার দুর্গার মুখ সিংহবাহিনী। দুর্গার রয়েছে চারটি হাত। মূর্তির কাঠামোর কোন পরিবর্তন করা হয় না।
অন্যদিকে দূর্গা মাতা ঠাকুরানীর বড় কুন্ডু বাড়ির সত্যনারায়ন কুন্ডু জানিয়েছেন যে দুর্গাপুজোর আয়ের জন্য রয়েছে প্রায় ৩৬ বিঘা জমি। উৎপাদিত এই জমির ফসল থেকেই প্রতিবছর দেবীর পুজো হয়ে থাকে ।
একশো কুড়ি বছরের পুজো। পুজোর কটা দিন পুজো গুলির মধ্যে আরেকটি প্রধান বৈশিষ্ট্য রয়েছে যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বার্তা বহন করে থাকে পাশাপাশি রয়েছে একাধিক মুসলিম গ্রাম। বাঙালির শ্রেষ্ঠ দূর্গা উৎসব দেখতে মুসলিমরাও অংশগ্রহণ করে । সম্প্রীতির পুজো হিসাবে এলাকায় শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় থাকে উৎসব যেন মিলন মন্দিরে পরিণত হয়।
এইসব পুজোয় নেই কোন বলি প্রথা।
ইতিমধ্যে প্রত্যেক পরিবারের মধ্যেই আত্মীয়-স্বজনদের আনাগোনা শুরু হবে কদিন পর থেকেই ,যেন এক মিলন মেলায় দুর্গাপুজোর হাট বসতে চলেছে মন্তেশ্বরের সিংহালি গ্রামে। পূর্ব বর্ধমান জেলার একটি বিশিষ্ট গ্রাম এই সিংহা লিতে আটটি দুর্গা পুজো ঘিরে সকলের কাছে সুনাম অর্জন করে ফেলেছে জেলায় এবং প্রশাসনিক স্তরে এমনটাই জানিয়েছেন স্থানীয় বিধায়ক সৈকত পাজা।
আরও পড়ুনঃ শিববাড়ি পূজা কমিটির ৬০তম বছরের দুর্গোৎসবের প্রস্তুতি
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584