খলিদ মুজতবা,স্পোর্টস ডেস্কঃ
রুদ্ধশ্বাস ম্যাচ। নতুন চ্যাম্পিয়ন। নতুন নায়ক। নতুন ইতিহাস। দম বন্ধ করা পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে শেষ হল বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ১২তম সংস্করণ ।
ইতিহাসের লর্ডসে মুখোমুখি হয়েছিল ইংল্যান্ড-নিউজিল্যান্ড। আগের রাতের বৃষ্টিতে মাঠ ভিজে থাকায় এদিন টস নির্ধারিত সময়ের ১৫ মিনিট দেরিতে হয় ৷ এদিন টস জিতে প্রথমে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন ৷
যে দেশ বিশ্বকে ক্রিকেট উপহার দিয়েছিল ১৬৪৬ সালে। অবশেষে সেই দেশ বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ১২তম সংস্করণ এসে প্রথমবারের মতো ট্রফি ঘরে তুলল।
কথা বার্তা, আলোচনা সব শেষ। এবার ক্রিকেট যুদ্ধ। সাতাশ বছর পর কাপের কাছাকাছি ব্রিটিশরা। অবশেষে দমবন্ধকর পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে সুপার ওভারে ম্যাচ টাই ও বেশি সংখ্যক বাউন্ডারি মারার সুবাদে প্রথমবারের মতো ক্রিকেট বিশ্বকাপকে নিজের ঘরে তুলে নিল ‘ক্রিকেটের জন্মদাতা’ ইংল্যান্ড।
লর্ডসে মেগা ফাইনালে টস জিতে প্রথমে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন। হেনরি নিকলস ধীরে শুরু করলেও কিছুটা আক্রমনাত্মক ব্যাটিং শুরু করেন আর এক ওপেনার মার্টিন গাপটিল।
কিন্তু বিশ্বকাপে অফ ফর্মে থাকা গাপটিলকে ১৯ রানে ফিরিয়ে কিউই শিবিরে প্রথম আঘাত হানেন ক্রিস ওকস। এরপর অবশ্য নিকোলস ও উইলিয়ামসন জুটি নিউজিল্যান্ডকে টানতে থাকে।
কিন্তু ৩০ রানে উইলিয়ামসনকে ফেরান লিয়াম প্লাঙ্কেট। নিকলসকেও ৫৫ রানে ফেরান সেই প্লাঙ্কেট। ১৫ রানে আউট রস টেলর। জিমি নিশাম করেন ১৯ রান।
১৬ রান করেন কলিন ডি গ্র্যান্ডহোম। শেষ দিকে টম লাথাম করেন ৪৭ রান। শেষ পর্যন্ত নিউজিল্যান্ড প্রথমে ব্যাটিং করে ৮ উইকেট হারিয়ে ২৪১ রান তোলে। ইংল্যান্ডের হয়ে লিয়াম প্লাঙ্কেট ও ক্রিস ওকস ৩টি করে উইকেট নেন।
২৪২ রানের টার্গেট নিয়ে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই ট্রেন্ট বোল্টের প্রথম বলে জেসন রয়ের বিরুদ্ধে এলবিডব্লিউ-র আবেদন। আম্পায়ারস কলে বেঁচে যান। এরপর ঝড় তোলার চেষ্টা করেন রয়-বেয়ারস্টো জুটি। কিন্তু ১৭ রানে ম্যাচ হেনরির বলে আউট বলেন রয়।
জো রুটকে ৭ রানে ফেরালেন কলিন ডি গ্র্যান্ডহোম।ফার্গুসনের বলে বোল্ড হয়ে ৩৬ রানে ফিরে যান বেয়ারস্টো। ৯ রানে নিশামের বলে দুরন্ত ক্যাচ ধরে ইয়ন মর্গ্যানকে ফেরালেন লকি ফার্গুসন। এরপর জোস বাটলার এবং বেন স্টোকস জুটি ইংল্যান্ডকে টানতে থাকে।
শতরানের পার্টনারশিপে জয়ের গন্ধ পেতে শুরু করে ব্রিটিশরা। কিন্তু ৬০ বলে ৫৯ রান করে প্যাভিলিয়নে ফিরে গেলেন জোস বাটলার। লড়াই চালিয়ে যান বেন স্টোকস। ৪৯ তম ওভারে জিমি নিশামের জোড়া ধাক্কা। ৫০ তম ওভারে টান টান উত্তেজনা।
জয়ের জন্য ইংল্যান্ডের প্রয়োজন ছিল ১৫ রান। বোল্টের দ্বিতীয় বলে ছক্কা আর তার পরের বলে ২ রানের পাশাপাশি ওভার থ্রোতে আরও ৪ কান। শেষ বলে জয়ের জন্য ইংল্যান্ডের প্রয়োজন ছিল ২ রান । এক রান নিলেও দ্বিতীয় রান নিতে গিয়ে রান আউট হলেন উড। ২৪১ রানে অল আউট ইংল্যান্ড। স্কোর সমান সমান। ম্যাচ গড়ায় সুপার ওভারে। নিউজিল্যান্ডের হয়ে জিমি নিশাম ও লকি ফার্গুসন ৩টি করে উইকেট নেন।
তখন শেষ ওভারের খেলা চলছিল ৷৬ বলে ইংল্যান্ডের দরকার ১৫ রান ৷ এই সময় দুটি ডট বলের পর হঠাৎ করেই একটি বলের দুরন্ত ফিল্ডিং করে বাটলারের এন্ডে বল ছোঁড়েন ৷ কিন্তু সেই বল বাটলারের ব্যাটের খোঁচায় লেগে বাউন্ডারি পেরিয়ে যায় ৷ সেই সময়ে সেই বলটি ডেড বল না ডেকে এক বলে ইংল্যান্ডকে ছ’রান দেন আম্পায়ার কুমারা ধর্মসেনা ৷
বল হ্যান্ডেলিংয়ের কারণে ওই বলটি ডেড বল হলে ফল কী হত তা জানা যায় না ৷ তবে এই বল লাইফলাইন পেয়ে যায় ইংল্যান্ড ৷ তারপরেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল সেই রান ও বল ৷
অবশেষে লড়াই শেষ। নতুন বিশ্বকাপ জয়ী দেশ পেল ক্রিকেট বিশ্ব। অবশেষে ক্রিকেট বিশ্বকাপ না পাওয়ার দীর্ঘদিনের কলঙ্ক থেকে মুক্তি পেল ইংল্যান্ড। অবশেষে দক্ষিণ আফ্রিকার থেকে চোকার্সের শিরোপা ছিনিয়ে নিল নিউজিল্যান্ড। অবশেষে ইংল্যান্ড বিশ্বকাপ জিতলেও ক্রিকেট বিশেষজ্ঞদের মতে চ্যাম্পিয়ন হয়ে রইলো দুটি দেশ ইংল্যান্ড নিউজিল্যান্ড।
অবশেষে চরম নাটকের মধ্য দিয়ে শেষ হলো ২০১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপ।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584