জৈদুল সেখ, বহরমপুর:
চোখের সামনে “পুকুর চুরি” দেখেও যারা চুপ করে থাকেন তাদের কাছে উদ্বেগজনক না হলেও জলাভূমি অবৈধভাবে ভরাটের ফলে আগামী ভবিষ্যৎ যে অন্ধকার সে বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরেই সচেতন করে চলেছেন পরিবেশকর্মীরা এবং বহরমপুর চেতনা পন্থী সচেতন নাগরিক বৃন্দ। কিন্তু প্রশাসনকে বার বার জানিও কোনো সুরাহা না পেয়ে বুধবার সকাল থেকেই বহরমপুরে গান্ধীমূর্তির পাদদেশে জলাভূমি রক্ষার দাবিতে শুরু হয়েছিল অনশন। বহরমপুরের সেই অনশনমঞ্চ থেকে পরিবেশকর্মীদের এবং অনশকারীদের আটক করল পুলিশ।
বুধবার সকাল থেকে রিলে অনশন ও অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেছিলেন পরিবেশকর্মীরা। শামিল হয়েছিলেন শহরের শিক্ষক, শিল্পীসহ বিশিষ্টজনেরাও। বিশিষ্টজনেরা প্রত্যেকেই উদ্বিগ্ন জলাভূমি নির্বিচারে ভরাট নিয়ে। জলাভূমি ভরাট বন্ধের দাবিতে এদিন রিলে অনশন শুরু হয় জলাভূমি রক্ষা কমিটির ডাকে। বহরমপুরের মহকুমা শাসক প্রভাত চট্টোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে বিশাল পুলিশ বাহিনী এসে আন্দোলনকারীদের অনশন ও অবস্থান মঞ্চ থেকে আটক করে। আটক ঘিরে শুরু হয় উত্তেজনা ।
উল্লেখ্য পরিবেশকর্মীরা জানান, বহরমপুর শহরে একের পর এক পুকুর, জলাশয় বুজিয়ে ফেলা হচ্ছে। বারবার প্রশাসনের দারস্থ হয়েও, বিভিন্ন রকমের প্রতিবাদ সভা করেও কোন সমাধান হয়নি। প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্যই অনশনের পথ বেছে নিয়েছেন তারা। জলাভূমি রক্ষা কমিটির আশঙ্কা যেভাবে জলাশয় গুলিকে বুজিয়ে ফেলা হচ্ছে, তাতে বহরমপুর শহর খুব শীঘ্রই ভূগর্ভস্থ জলের বিরাট সংকট দেখা দেবে ।
বহরমপুরের মহকুমা শাসক প্রভাত চট্টোপাধ্যায় জানান, জলাভূমি ভরাট রোধে সক্রিয় প্রশাসন। আমরা অনুরোধ করেছিলাম ওনাদের সরে যেতে। ওনারা অনুরোধ রাখেননি। তাই একটু হাতে ধরে তুলে নিতে হয়েছে। কারো ওপর বলপ্রয়োগ করা হয়নি। কোন রকম অশান্তি ঘটেনি।
অনশন মঞ্চ থেকে পরিবেশকর্মীদের আটক করে তোলা হয় পুলিশ ভ্যানে। ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছেন পরিবেশ কর্মীরা। সুবর্ণা নাথ বলেন- আমরা শান্তি পূর্ণ আন্দোলন করছিলাম। আজকের ঘটনায় পরিষ্কার হল প্রশাসন কাদের সমর্থন করছেন। তাছাড়া পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে প্রশাসনের উচিৎ ছিল আলোচনা করার কিন্তু তা করেনি।
বহরমপুর শহরের জলাভূমি রক্ষার দাবিতে অনশনে শামিল হয়েছিলেন শহরের বিশিষ্টজনেরা। বয়সের ভার অগ্রাহ্য করে বুধবার সকাল থেকে গান্ধী মুর্তির নীচে অনশনে বসেছিলেন প্রবীণ শিক্ষক নির্মল সরকার, শিক্ষিকা শুক্লা মন্ডলরা।
এছাড়াও অনশনে শামিল ছিলেন পরিবেশ কর্মী, গবেষক, জলাভূমি রক্ষার আন্দোলনের কর্মীরাও। মঞ্চে এসে কবিতা আবৃত্তি করেন বাচিকশিল্পী অভিজিৎ সরকার, সংহতি জানান ইতিহাসবিদ বিষাণ গুপ্তও।সকাল থেকে অনশন কর্মসূচি নিয়ে পুলিশ ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে দফায় দফায় কথা চলছিল পরিবেশকর্মীদের। কিন্তু জমায়েতকে অবৈধ ঘোষণা করে প্রশাসন। এরপর বিশাল পুলিশ বাহিনী এনে আটক করা হয় পরিবেশকর্মীদের।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584