নিজস্ব সংবাদদাতা, ঝাড়গ্রামঃ
শহর ঝাড়গ্রাম থেকে জাম্বনির জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র চিল্কিগড় কনক দূর্গা মন্দির যাওয়ার পথে ৯ কিমি দূরে ‘পাখিদের গ্রাম’ কেন্দুয়া৷কেন্দুয়া গ্রামের জনৈক বিধান মাহাতোর বাড়ি লাগোয়া বহু প্রাচীন দুটি তেঁতুল গাছের মগডালে প্রায় ২০০-৩০০ টি পরিযায়ী এশিয় শামুকখোল পাখির রোজনামচা দেখা যায়৷ বর্ষায় ক্রান্তিয় অঞ্চলের ভ্যাপসা গরম আর স্যাঁৎসেঁতে পরিবেশ শামুকখোলের প্রজননের জন্য আদর্শ৷
তাই শামুকখোল প্রতি বছর বর্ষার আগে বহু পথ পাড়ি দিয়ে সম্ভবত সুদূর সাইবেরিয়া থেকে কেন্দুয়া আসে৷ বাসাবাঁধে,ডিম পাড়ে, বাচ্চার জন্মদেয়, আর বাচ্চারা উড়তে শিখলেই হেমন্তের শুরুতে দল বেঁধে ফিরে যায় নিজেদের স্থায়ী ঠিকানায়৷ফলে এই ছয় মাস দক্ষিন বঙ্গের বিভিন্ন জেলা এবং সংলগ্ন ওড়িশা, ঝাড়খন্ড থেকেও কয়েক হাজার পর্যটক বিপন্ন প্রজাতির শামুকখোল দেখতে ভিড় করেন৷শহরাঞ্চল তো দূরঅস্ত,এখন প্রত্যন্ত এলাকাতেও পাখির দেখামেলা ভার৷ হারিয়ে যেতে বসেছে কাক, চড়ুই, বকের মতো নানা প্রজাতির দেশীয় পাখি৷সে রকম আবহে কেন্দুয়া এখনও পাখির ডাকে ঘুমোয়, পাখির ডাকেই জাগে৷ সারাদিন পাখির কিচিরমিচির যেন এ গ্রামের আবহসংঙ্গীত৷ ছবি তুলতে গেলে স্থানীয় বাসিন্দারা জানান তারা এই পাখিদের ভবিষ্যৎ নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন৷ চোরাশিকারিরা রোজ রাতে গাছে উঠে পাখির ছানা চুরি করে৷ সব জেনেও তারা ঝুটঝামেলায় আর যেতে চাননা৷কেননা কয়েক পুরুষ ধরে পাখিদের দেখভাল করে,আগলে রেখেও কোনরকম সরকারি সাহায্য সহযোগিতা না পেয়ে তারাও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে৷ পাখিদের নিরাপত্তার বিষয়ে প্রশাসনও উদাসিন৷বছর আঠার আগে ঝাড়গ্রাম বনবিভাগ চোরাশিকারিদের হামলা ঠেকাতে কয়েক জন পাহারাদার নিয়োগ করেছিল,তাও বছর পাঁচেক পরেই তুলে নেওয়া হয়৷ কয়েকশ বছরের পুরন তেঁতুল গাছ গুলিও আগের মতো মজবুত নেই৷ যেকোন সময় অল্প ঝড়েই ভেঙে পড়তে পারে৷ চাষের কাজে রাসায়নিকসার, কীটনাশক ব্যবহারের ফলে শামুকখোলের খাওয়ার ঝিনুক, শামুক, ছোট ছোট ব্যাঙ ও কাঁকড়াও কমছে দিন দিন৷
পাখিদের নিরাপত্তার জন্য গ্রামের কোন অনুষ্ঠানে তারস্বরে মাইক বাজানোয় লাগাম, শব্দবাজি রোধ, সংলগ্ন এলাকা সাইলেন্স জোন হিসেবে ঘোষনা করা ইত্যাদি কোন প্রশাসনিক উদ্যোগই নেই৷এভাবে চলতে থাকলে পরিযায়ী পাখিরা সাঁতরাগাছি ঝিলের মতো আর কেন্দুয়ার পথ মাড়াবেনা৷তখন কমবে জীববৈচিত্র,ভেঙে পড়বে খাদ্যশৃঙ্খল, ফলে প্রভাব পড়বে বাস্তুতন্ত্রের উপর৷আর কেন্দুয়া গ্রামকে নিয়ে পর্যটন দফতরের পরিবেশ পর্যটনের চিন্তাভাবনা বাধা পাবে৷ হয়তো বা ঝড়গ্রামের পর্যটন মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে পাখি গ্রাম কেন্দুয়া
আরও পড়ুনঃ এন আর সি নিয়ে সঠিক আইনি তথ্য দিতে আলোচনা সভা কোচবিহারে
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584