নিজস্ব সংবাদদাতা, আলিপুরদুয়ারঃ

শতবর্ষের দুর্গা পুজা ঘিরে আবেগে ভাসেন আলিপুরদুয়ার জেলার ফালাকাটার জটেশ্বর হেদায়েতনগর। জেলার ঐতিহাসিক এই দুর্গা পুজার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে পরাধীন ভারতের অনেক কাহিনী। আলিপুরদুয়ার জেলার ফালাকাটা ব্লকের জটেশ্বর হেদায়েত নগর গ্রাম। এই গ্রামেই এক সময় বিশাল জমিদার বাড়ি বেদেঙ চন্দ্র রায়। সালটা প্রায় ১৯২২ তখন ও স্বাধীনতা পায়নি ভারত তখন থেকে নিয়ম নিষ্ঠার সঙ্গে পুজো হয়ে আসছে বেদেঙ ধনীর বাড়ির । সেই মণ্ডপে ধুমধাম করে দুর্গাপুজোতে উৎসবের আমাজে ভাসতেন জমিদার বাড়ির সদস্য ও এলাকার মানুষ জন। তখনকার পুজোর আয়োজনে কোনও কিছুর খামতিও ছিল না। বজরায় করে আসা কাপড় বিলি করা হতো এলাকার মানুষকে।
পুজোতে আলোর রোশনাই, নহবতের সুর, যাত্রাপালা, কবিগান, তরজা সবমিলিয়ে গমগম করতো পালদের দুর্গা মণ্ডপ এবং ধনী বাড়ি। এলাকায় রয়েছে পুরানো একটি হরি মন্দির তার বয়স ও প্রায় ৩০ পেরিয়ে । সেই সব প্রাচীন দেওয়াল থেকে এক একটা ইট মনে করিয়ে দিচ্ছে সেই বেদেঙ ধনীর নানান স্মৃতি। সমস্ত মন্দির প্রাঙ্গণ মনে করিয়ে দিচ্ছে সেই সব দিনের ইতিকথা।

ওই পরিবারের বেদেঙ ধনীর প্রথম ছেলের তার ছেলে শিবেন রায় জানান, “আমার জ্ঞান হবার আগের থেকে পুজো হয়ে আসছে। তখন আনুমানিক ১৯২২ সেই বেদেঙ ধনীর দ্বিতীয় ছেলে শিবেশ্বর রায় এই পূজা শুরু করেন। সেই সময় ৮-১০ দিন ধরে চলত মেলা বস্ত হরেক দোকান পাঠ। গ্রামে ছিল না কোন অভাব। পরে দেশ স্বাধীন হবার পর রাজনৈতিক পরিবর্তন আসল। আর অভাবের প্রভাব পড়তে লাগলো রাজ্য। সেই সময় অনেক পুজা বন্ধ হতে লাগলো তখন আমার এলাকার সকলকে নিয়ে একটা কমিটি গঠন করে এই পুজোটা কে আজও চালিয়ে আসছি। ” তবে আজ বেদেঙ ধীন নেই, কিন্তু সেই ধনী পরিবারের প্রতিষ্ঠিত প্রাচীন দুর্গা পুজো আজও আঁকড়ে রেখেছে বর্তমান প্রজন্ম। সেই জেল্লা নেই, কিন্তু রয়েছে ঐতিহ্য এবং আভিজাত্য।
জানা গেছে, বর্তমানে সেই বেদেঙ ধীন নেই পূজা করে আসছেন পরিবারের সদস্যরা ও এলাকার যুবকরা মিলে চাঁদা কেটে প্রাচীন পুজোকে আজও চালিয়ে নিয়ে আসছেন । বর্তমানে এই বেদেঙহাটি হরি মন্দির দুর্গা পূজা কমিটির সম্পাদক রাতুল রায় জানান,” এটি জটেশ্বরের একটি পুরানো ও প্রাচীন পূজা । নিয়ম নিষ্ঠার সাথে আমার পূজা করে আসছি । বর্তমানে চাঁদা কেটেই পূজা করা হচ্ছে । গোটা এলাকার নতুন প্রজন্ম রাও এগিয়ে আসছে সকলে মিলে পূজা তাকে চালিয়ে যাচ্ছি । নবমীর সন্ধ্যা আমরা সংস্কৃতি অনুষ্ঠানে আয়োজন করে থাকি ।”
আরও পড়ুনঃ বিভেদকে চ্যালেঞ্জ করে ভালোবাসার কথা নব আঙ্গিকে বলেছেন বহরমপুরের মৃদুল
প্রাচীন নিয়ম মেনেই আজও দেবী দুর্গা পুজিত হচ্ছেন বর্তমান প্রজন্মের হাতে। পরিবারর সদস্য এবং আত্মীয় ও এলাকার মানুষ পুজোর কটা দিন সেই অতীতের দিনগুলিতেই যেন ফিরে যান। এভাবেই আজও চলে আসছে বেদেঙ হাটি হরি মন্দিরের দুর্গা পুজো।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584