মানসী’র মুখোমুখি নবনীতা দত্তগুপ্ত
বাংলা টেলিভিশনের দর্শক তাঁর উপর বেজায় ক্ষ্যাপা। রাধিকাকে যারা ভালোবাসে তারা সহ্য করতে পারে না পায়েল সেনকে। সেই পায়েল সেন আজ হাজির নিউজ ফ্রন্ট আড্ডায়। ফোন ঘোরাতে জানা গেল তিনি এখন কলকাতার বাইরে৷ কিন্তু ইন্টারভিউ দিতে প্রস্তুত অহংকারী পায়েল সেন। সাক্ষাৎকার নিলেন নবনীতা দত্তগুপ্ত।
নবনীতাঃ পায়েল সেন চরিত্রটা কেমন এনজয় করছ?
মানসীঃ পায়েল সেন আমার হৃদয়ে অবস্থান করে৷ আমি মনে মনে ঠিকই করেছিলাম কখনও লিড চরিত্র না পেলে নেগেটিভ চরিত্র করব। পায়েল সেন খুব গ্ল্যামারাস একটা চরিত্র। তাই সৃজিত (রায়) দা আমাকে চরিত্রটা করার জন্য বলার পর আমি দুবার ভাবিনি। আর সৃজিত দা আমায় কোনও চরিত্রের কথা বললে আমি দু’বার ভাবি না। এতটাই সম্মান আমি করি সৃজিত দা’কে।
নবনীতাঃ দর্শক কিন্তু তোমার উপর বেজায় চটে আছে পায়েল।
মানসীঃ জানি তো। আর সেখানেই আমার সাফল্য। লোকে এত গালাগালি দিচ্ছেন, আমায় নাগিন বলেও সম্বোধন করে সোশ্যাল মিডিয়ায় গলা ফাটাচ্ছেন ওগুলো আমার কাছে কমপ্লিমেন্ট জানো তো? পায়েল সেনকে লোক মনে রাখুক এটাই আমি চাই। আমার শিক্ষিকা বেনি’দি। যতটুকু শিখি, ওঁর কাছেই শিখি।
নবনীতাঃ মানসী পায়েলকে কেমন চোখে দেখে?
মানসীঃ মানসী পায়েলকে পছন্দ করে। কেননা পায়েল শুধু শুধু বদমাইশি করে না। ওর বদমাইশিটা জাস্টিফাইড। পায়েল নিজেরটুকু বুঝে নিতে চায়। ওর বর অর্ঘ কোম্পানিতে কোণঠাসা। কোন স্ত্রী মেনে নেয় সেটা? যেখানে ওর বাবার সেন ক্রিয়েশনে কন্ট্রিবিউশন আছে। পায়েল কারোকে মেরেও ফেলে না, বিষও খাওয়ায় না। শুধু প্রতিশোধ নেয়। ওর বোনের সঙ্গে কর্ণর মতো হ্যান্ডসাম, প্রতিষ্ঠিত পাত্রের বিয়ে দিতে চেয়েছিল। অপরাধ সেটা? কোন দিদি চায় না তার আদরের বোন ভাল থাক?
সুতরাং, পায়েল সবমিলিয়ে খারাপ না। সে আসলে নিজের প্রতিদ্বন্দ্বী রাখতে চায় না তার আশেপাশে। তাই সে রাধিকাকে সরাতে চায়। আবার বাবলিকে রাধিকা ডিজাইন শেখাতে এলে সে রাধিকাকেও বলে -“রাধিকা বেকার সময় নষ্ট কোরো না বাবলির পিছনে।” পায়েলকে বুঝতে হবে৷ নিজের আশেপাশে তার সঙ্গে টক্কর করার মতো কারোকে রাখতে চায় না সে। বাকিদের নিয়ে ওর কোনও সমস্যা নেই। সকলের কাছে কিন্তু ও খারাপ নয়। সবার সঙ্গে বদমাইশি কিন্তু করে না পায়েল। বোঝাতে পারলাম?…
নবনীতাঃ বাপ রে! মারাত্মক ভালোবাসো পায়েলকে?
মানসীঃ হান্ড্রেড পারসেন্ট। চরিত্রটা খুব কাছের আমার। আমি সারাদিন ভাবি কীভাবে আরও ইম্প্রোভাইজ করা যায়। একটা এপিসোড আমি দশবার দেখি। ভাবি, আমি ওভাবে এন্ট্রি না নিয়ে এভাবে এন্ট্রি নিলে আরও ভাল হত৷ কেন নিলাম না? রাধিকা চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে পায়েলকে, প্রোমোটা আমি বারবার দেখছি। বাড়িতে সবাই বলছে- এতবার কেন দেখছিস? আমি দেখি এই কারণে যে আরেকটু অন্য কীরকম করতে পারতাম?…
নবনীতাঃ টেলিভিশনে ভিলেনের ছড়াছড়ি। পায়েলের চরিত্রটা পাওয়ার পর কারোকে কি রেফারেন্স হিসেবে নিয়েছিলে?
মানসীঃ কারোকে না। বিশ্বাস করো আমি নিজে পায়েল সেন হতে চেয়েছি। ভাবার চেষ্টা করেছি পায়েল কেন এরকম। কেন সে রাধিকা আর বাবলিকে সহ্য করতে পারে না। আমি কারোকে দেখে এই চরিত্রটা করতে চাইনি। আমি পায়েল সেনকে গড়ে তুলতে চাই প্রতিমুহূর্তে। যাতে দশ বছর বাদেও মানুষ পায়েলের কথা মনে রাখে। আমি চাই পায়েল নেগেটিভ রোল হিসেবে পায়েল টেলিভিশনে মাইলস্টোন হয়ে থাক।
আরও পড়ুনঃ মা হলেন শুভশ্রী, রাজ পরিবারে এল নতুন সদস্য
নবনীতাঃ কী ধরনের চরিত্র করতে ভাল লাগে তোমার?
মানসীঃ মানসিক প্রতিবন্ধীর চরিত্র করতে চাই। ‘জলনূপুর’-এ যে রোলটা করেছিলেন অপা দি মানে অপরাজিতা আঢ্য। ওরকম একটা চরিত্র করতে চাই আমি। জানি না অপাদি’র মতো পারব কিনা। তবে, করতে চাই।
নবনীতাঃ পায়েলের লুকটাও দারুণ।
মানসীঃ আমার মেক আপটা আমি প্রথম থেকেই নিজে করি জানো তো? চুলটা হেয়ার ড্রেসার করিয়ে দেয়।
নবনীতাঃ তার মানে পায়েলের ষড়যন্ত্রী চোখ, তাচ্ছিল্যের হাসিমাখা ঠোঁট সব তোমার নিজের সৃষ্টি?
মানসীঃ একদম। আমি আমার সাজগোজের ব্যাপারে খুব খুঁতখুঁতে। একটা মেক আপ রুমে অনেক মেয়ে একসঙ্গে মেক আপ করি৷ সবসময় যে এক লোকই আমাদের মেক আপ করে তা নয়। ফলে, রোজ একইরকমের সাজ নাও হতে পারে। একটা চরিত্রের ঝাঁঝ বোঝাতে সাজগোজের গুরুত্ব অস্বীকার করা দায়। আমি নিজেই সাজি৷ করোনা আসার অনেক আগে থেকেই আমি এভাবে অভ্যস্ত। স্যানিটাইজ করে নিই নিজের সবকিছু সবসময়। ফলে, আমি অভ্যস্ত। নিজে প্রচুর জুয়েলারি কিনি। যেগুলো অফস্ক্রিনে পরব না সেগুলো অনস্ক্রিনে পরি। আসলে আমি সাজতে খুব ভালোবাসি। তাই নিজের মেক আপ নিজে করে বেশি মজা পাই।
নবনীতাঃ বড়পর্দায় কাজের অফার এসেছে?
মানসীঃ করেছি তো, ‘বিবাহ অভিযান’-এ। আমার মনে হয়, টেলিভিশনে একটু লোকজন চিনে ফেললে বড় পর্দায় কাজ পাওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। তাতে কিছু যায় আসে না জানো তো? আমি মনে করি, টেলিভিশন একজন অভিনেতাকে অনেক তাড়াতাড়ি দর্শকের কাছে পৌঁছে দেয়৷ প্রতিদিন নিজেকে তৈরি করার সময় পাওয়া যায়। প্রতিদিন মানুষের ঘরে চলে যাওয়া যায় এক নিমেষে। এতে দর্শকের কাছে কদর বাড়ে অভিনেতার৷ অনেক বাঙালিই আছেন যাঁরা বাংলা সিরিয়ালের কথা উঠলে বলেন- “উফ! বাংলা সিরিয়াল? অসহ্য!” তাঁদের কিছু বলার নেই আমার। যাঁদেরকে তারা বড়পর্দায় দেখার জন্য ছোটেন তাঁরা কিন্তু ইন্ডাস্ট্রিতে পরিচিত হয়েছেন টেলিভিশনের হাত ধরেই।
নবনীতাঃ এক কথায় যদি মানসী কেমন মানুষ জানতে চাই কী বলবে?
মানসীঃ বাচাল আর ভ্রমণপিপাসু।
নবনীতাঃ ‘সৌদামিনীর সংসার’-এও তোমার চরিত্রটা বেশ মজার।
মানসীঃ কেন করছি জানো? কমেডি আছে। অনেকটা অন্যরকম চরিত্র। লোকে দেখছে। আমার একটা ডায়লগ “ও মাই গড লোকু” ইতিমধ্যেই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। অনেকে মিম বানাচ্ছে সেটা নিয়ে। এটা আমার বড় প্রাপ্তি। তোমাকে আরেকটা কথা জানিয়ে রাখি, আমার বোন রাইমা সেনগুপ্ত সম্প্রতি ‘রানী রাসমণি’ তে একটা রোল করছে।
নবনীতাঃ আচ্ছা! দিদি তার মানে বোনকে গাইড করছে?
মানসীঃ হ্যাঁ তা তো করিই। আমরা তিন বোন। একে অন্যের খুব ভাল বন্ধু আমরা। নিজেদের মধ্যে গল্প আড্ডায় সময়ে কেটে যায় দিব্যি। বোন অভিনয়ে এল, দিদি হয়ে আমি খুব খুশি। “আমি খুশি কিনা বোন অভিনয়ে আসায়?”- প্রশ্নটা তুমি করার আগেই আমি উত্তরটা দিয়ে দিলাম। (সহাস্যে)
নবনীতাঃ গ্রেট। ভেরি ইন্টেলিজেন্ট।
মানসীঃ হ্যাঁ সেটা তো অর্ঘও বলল আমি বুদ্ধিমতী। না হলে ও সেন ক্রিয়েশনের সিইও হতে পারত না জীবনেও।… নবনীতা, তোমাকেও অনেক ধন্যবাদ। তুমি আমাকে কথা বলতে বলতে দু’বার পায়েল ডাকলে। এখানেই আমি সফল।
নবনীতাঃ একদম। ভাল থেকো।
মানসীঃ তুমিও।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584