নবনীতা দত্তগুপ্ত, বিনোদন ডেস্কঃ
সুদীপ্তা চক্রবর্তী এবং দামিনী বেনি বসুর অভিনয় ফলো করেন পারমিতা মুখোপাধ্যায়। পছন্দের চরিত্র এবং চাওয়া পাওয়া নিয়ে অনেক কথা বললেন নিউজ ফ্রন্টের প্রতিনিধি নবনীতা দত্তগুপ্তকে।
নবনীতাঃ কেমন আছো আগে বলো।
পারমিতাঃ আমি তো মন্দ থাকি না নবনীতা। সবসময় ভালই থাকি। আসলে ভাল থাকার ম্যাজিকটা আমি জানি। শরীরে এবং মনে এই মুহূর্তে খুব ভাল আছি। আগামীতেও থাকব আশা রাখি।
নবনীতাঃ অভিনয় জার্নির শুরুয়াত কবে বলো তো?
পারমিতাঃ ২০১৫ তে। সত্যি কথা বলতে কি, আমি একেবারে হাউজ ওয়াইফ ছিলাম তখন। সেখান থেকে খানিকটা আগ্রহের তারণাতেই অভিনয়ে আসা। এনজয় করতাম। অ্যাডভেঞ্চার করছি মনে হত। সিরিয়াসলি অভিনয়টা করতে শুরু করি যেদিন থেকে আমি দামিনী বেনি বসুর অভিনয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হই। তখন থেকে অভিনয়ের প্রতি আমার দৃষ্টিভঙ্গি পালটে যায়। সেদিক থেকে বলতে গেলে তিন-সাড়ে তিন বছর হল আমি সিরিয়াসলি অভিনয়টা করছি।
নবনীতাঃ ছবিও তো করা হয়ে গেল অনেক। অনেক পরিচালকের সঙ্গেই তো কাজ করলে। সবথেকে বেশি কমফর্ট কার সঙ্গে কাজ করে পেয়েছো?
পারমিতাঃ আমি খুব লাকি যে পশ্চিমবঙ্গের নামজাদা পরিচালকদের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়, অনীক দত্ত, দেবারতি গুপ্ত, ধ্রুব ব্যানার্জি, পৃথা চক্রবর্তী, রাজেশ দত্ত, ইপ্সিতার সঙ্গে কাজ করেছি। সকলের সঙ্গে অভিজ্ঞতা আমার দারুণ। আমি আসলে ডিরেক্টরস অ্যাকট্রেস। পরিচালকরা যেভাবে আমাকে দেখতে আর দর্শককে দেখাতে চান আমি ঠিক সেভাবে পরিচালকের কথা মেনে করে যাই। হ্যাঁ, অবশ্যই তাতে নিজেরটুকুও থাকে নিজের মতোভাবে। কিন্তু পরিচালকের চাওয়াকে গুরুত্ব দিই ভীষণভাবে। আমি যাদের সঙ্গে কাজ করেছি তা সে ছোট রোল হোক বা বড় রোল তাঁরা আমায় যোগ্য সম্মান দিয়েছেন।
ধ্রুব ব্যানার্জির পরিচালনায় ‘দুর্গেশগড়ের গুপ্তধন’, ‘গুপ্তধনের সন্ধানে’ ছবিতে কাজ করেছি। পৃথা চক্রবর্তীর সঙ্গে ‘মুখার্জি দা’র বউ’, দেবারতি গুপ্ত’র সঙ্গে ‘অনেকদিনের পরে’ ছবিতে অভিনয় করেছি। শৈবাল মিত্রর পরিচালনায় তৈরি হয়েছে ‘তখন কুয়াশা ছিল’। এখনও রিলিজ করেনি ছবিটা। তাছাড়া অরিন্দম শীলের আসন্ন ছবি ‘তীরন্দাজ শবর’-এ একটা গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করার সুযোগ পেয়েছি আমি। অরিন্দম দা’র সঙ্গে এটা আমার প্রথম কাজ। আমি চেষ্টা করব ওনার মান রাখার।
আরও পড়ুনঃ বিবাহ অভিযান সম্পন্ন
নবনীতাঃ বেশিরভাগ ধারাবাহিকেই আটপৌরে পোশাকে দেখা যাচ্ছে৷ এই নিয়ে কোনও বক্তব্য?
পারমিতাঃ এটা ভাল বললে কিন্তু। আমি তো চাই কোনও কঠিন চরিত্রে অভিনয় করতে। কিন্তু পরিচালক, প্রযোজকরা আমাকে তেমন চরিত্র না দিলে কী করব বলো তো? আমি নানা ধরনের চরিত্রে অভিনয় করতে চাই। জানি না কবে সেই সুযোগ আমার আসবে টেলিভিশনে। আমি এক মাসের রোলও করেছি, সাত মাসের রোলও করেছি আবার ‘মুখোশের আড়ালে’ ধারাবাহিকে টানা এক বছরের রোলও করেছি। কিন্তু নানা ধরনের চরিত্র পাইনি।…
নবনীতাঃ আচ্ছা।… এবার একটা প্রশ্ন, প্রত্যেক অভিনেতারই কোনও না কোনও চরিত্র খুব পছন্দের থাকে। সেটা সে করতে চায়। এমন কোনও চরিত্র কি তোমার আছে যেটা তুমি করতে চাও ভীষণভাবে?
পারমিতাঃ ও বাবা, অনেক আছে তো। তবে, এক্ষুণি ঝট করে মনে পড়ছে ‘মেমোরিজ ইন মার্চ’ ছবিতে দীপ্তি নাভালের করা মায়ের চরিত্রটার কথা। ওটা করার খুব ইচ্ছা বা লোভ আছে আমার৷ এ ছাড়া ‘মাণ্ডি’ ছবিতে শাবানা আজমির চরিত্রটার প্রতি খুব লোভ আছে। আর আর আর… হ্যাঁ, ‘নয়নচাঁপার দিন রাত্রি’ ছবিতে রূপা গাঙ্গুলির করা চরিত্রটা চাই আমি। আর যদি জানতে চাও আমি কাদের অভিনয় ফলো করি তাহলে বলব সুদীপ্তা চক্রবর্তী এবং বেনি বসুর কথা। আমি এঁদের দুজনকে খুব ফলো করি।
নবনীতাঃ পারমিতার কি নাট্যচর্চা করা হয়?
পারমিতাঃ আমার প্রথম প্রেম থিয়েটার। সবথেকে বেশি ভালোবাসি মঞ্চে অভিনয় করতে। ধারাবাহিকে কাজের সুবাদে সময় একটু কমই পাই আজ। তবে, বেশ রিস্ক নিয়েই একটা নাটকের স্ক্রিপ্টের সঙ্গ জড়িয়ে পড়েছি। বাকি চমকটা পরে দেব। এখন থাক।
আরও পড়ুনঃ টেলিপর্দায় ‘সরস্বতীর প্রেম’, নতুন ভূমিকায় পল্লবী দে
নবনীতাঃ প্রথম খবরটা আমি যেন পাই।
পারমিতাঃ একদম। তবে এটুকু বলি, পরিচালনায় সৌম্য বলে একটি ছেলে। আমাদের থেকে অনেক ছোট বয়সে। স্ক্রিপ্ট লিখছে সৌপ্তিক।
নবনীতাঃ অভিনয় ছাড়া আর কী করা হয়?
পারমিতাঃ আর তো কিছু তেমন পারি না নবনীতা (সহাস্যে)। ওটাই আমি করি। তবে, বাড়িতে বসে অনেক ছোট ছোট ভিডিও বানাই। যেগুলো আমি পোস্টাই না ফেবু বা অন্য কোথাও। নিজেকে নিজে দেখার জন্য বানাই ভিডিওগুলো। তাছাড়া আমি সুদীপ্তা চক্রবর্তীর কাছে ওয়ার্কশপ করি। ওঁকে আমার অনেকসময় নিজের কাজ ভিডিও করে পাঠাতে হয়।
নবনীতাঃ অবসরে শুটিং না থাকলে কী করা হয়?
পারমিতাঃ তুমি তো জানোই আমি খুব ফিটনেস ফ্রিক। রোজ ভোরবেলা ১৫-২০ কিলোমিটার আমি সাইকেল চালাই। বই পড়ি, সিনেমা দেখি, ছেলেকে সময় দিই। আমার একটি মেয়েও আছে। তার সঙ্গে আমার রক্তের সম্পর্ক নেই। তবে, সে রক্তের সম্পর্কের থেকেও বেশি কিছু। তার জন্য আমায় সপ্তাহে দু-তিন দিন সময় রাখতেই হয়। আর এই লকডাউনের অখণ্ড অবসরে আমি প্রচুর সিনেমা, ওয়েব সিরিজ দেখেছি।
আর সংসার তো আছেই। আমি আড্ডাবাজ নই। বন্ধুও লিমিটেড। আড্ডা মারলেও সেখানে অভিনয়, চরিত্র এসবই থাকে। আর আমার দুটি পোষ্য আছে। একটি বিড়াল, একটি কুকুর। ওরা আমার বড় আদরের।
নবনীতাঃ সংসার, ফ্লোর- দুদিক ম্যানেজ করো কীভাবে?
পারমিতাঃ আমি ম্যানেজ মাস্টার। এক্ষেত্রে আমি নিজের ঢাক নিজেই পেটাই। আমি সব সামাল দিতে পারি। প্রথম যখন অভিনয়ে আসি তখন এই ফিল্ডে কাজের ধরন বাড়ির সকলকে বোঝাতে একটু যে অসুবিধা হয়নি তা নয়। তবে পরে তাঁরা বুঝেছেন। আমার পরিবারের কেউ কোনওদিন অভিনয় করেনি। আমিই প্রথম। সুতরাং অসময়ে বেরিয়ে যাওয়া, ফেরার সময়ের ঠিক না থাকা এগুলোর সঙ্গে কেউ অভ্যস্ত ছিল না কোনওদিন। আমিই বুঝিয়েছি এহেন রুটিন ততদিন বহাল থাকবে যতদিন আমি অভিনয় করব। বাড়ির সকলে খুব সাপোর্টিভ। তা না হলে একজন ঘরের বউ হয়ে, এক সন্তানের মা হয়ে আমি এভাবে অভিনয় চালিয়ে যেতে পারতাম না।
নবনীতাঃ তোমার চলার পথ মসৃণ হোক এটাই কামনা করে নিউজ ফ্রন্ট।
পারমিতাঃ আমিও চাই তোমাদের পোর্টাল আজ যত বড় হয়েছে তার থেকেও যেন বড় হয় আগামী দিনে। ভাল থেকো সবাই।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584