এক্সক্লুসিভ ইন্টারভিউঃ কলকাতায় গেলেই মোটা হয়ে যাই নবনীতাকে জানালেন রাজেশ্বর

0
169

পরিচালক বিদুলা ভট্টাচার্য চারটি গল্প সম্বল করে বানাচ্ছেন একটি ‘তাসের ঘর’। আর সেখানেই একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করছেন প্রবাসী বাঙালি অভিনেতা রাজেশ্বর। তবে, শুধু অভিনয়ই নয়, তিনি একজন মিউজিশিয়ান সর্বোপরি সঙ্গীত শিল্পী। পাশাপাশি ফ্যাশন দুনিয়াতেও ছাপ ফেলেছেন রাজেশ্বর। আলাপ জমানোর বাসনায় ফোন ঘোরাই তাঁকে। রাজেশ্বরের সঙ্গে কথোপকথনের নির্যাস রইল আপনাদের জন্য।

Tollywood actor | newsfront.co

নবনীতাঃ তুমি প্রবাসী বাঙালি। ওখানেই জন্ম ও বেড়ে ওঠা। এত ভাল বাংলা বলো কী ভাবে?
রাজেশ্বরঃ এটা আমার কাছে একটা বড় কমপ্লিমেন্ট। আমার তো মনে হয় আমার বাংলাটা অতটা স্পষ্ট নয়। একটা অন্যভাষী টান আছে আমার বাংলায়। আমি দিল্লির চিত্তরঞ্জন পার্কের বাঙালি সমাজে থাকি৷ আমার ঠাকুরদা এবং বাবা সিলেটি। এরপর তাঁরা চলে আসেন দিল্লিতে। আমার জন্ম দিল্লিতেই। বেড়ে ওঠা, লেখাপড়া, সংস্কৃতিকে আত্মস্থ করা সবই হয়েছে দিল্লিতে। কিন্তু আমি মনে প্রাণে একজন খাঁটি বাঙালি।

Taser Ghar | newsfront.co
‘তাসের ঘর’ -এ অঙ্কিতার সঙ্গে রাজেশ্বর

নবনীতাঃ কলকাতায় আসা হয়?
রাজেশ্বরঃ হ্যাঁ। ওখানে তো আমার অনেক আত্মীয়স্বজন আছে। কমই যাওয়া হয়। তবে যাই তো বটেই। আর কলকাতায় গেলেই আমার ওজন বেড়ে যায়। এত ভাল ভাল খাবার ওখানে, আমি লোভ সামলাতে পারি না। খেতেই থাকি।

Actor Rajeswar | newsfront.co

নবনীতাঃ কোন কোন খাবার ফেভারিট কলকাতার?
রাজেশ্বরঃ কোনটা ছেড়ে কোনটা বলি? সবথেকে পছন্দ ক্ষীরকদম্ব। কোনও কারণে মুড ঠিক না থাকলে আমি ক্ষীরকদম্ব খাই। ব্যস, মন ভাল হয়ে যায়। দিল্লিতে আমার অবাঙালি বন্ধুদের আমি খাইয়েছি ক্ষীরকদম্ব। ওদেরও দারুণ লাগে। আমি কলকাতায় গেলে ক্ষীরকদম্ব না নিয়ে ফিরতে পারি না দিল্লিতে। তা ছাড়া কলকাতার ময়দানের ফুচকা, কলেজস্ট্রিটের পুঁটিরামের কচুরি, দক্ষিণেশ্বরের হিংয়ের কচুরি আমার ফেভারিট। ফুচকা অবশ্য কলকাতার যেকোনও জায়গারই ভাল লাগে। কলকাতার জলটাও অন্যরকমের ভাল লাগে আমার। চায়না টাউন, ৬, বালিগঞ্জ প্লেস সব জায়গায় খাওয়াদাওয়া সেরেছি আমি। জাস্ট অসাধারণ কলকাতার খাওয়াদাওয়া।

Rajeswar Nag | newsfront.co

নবনীতাঃ আর এখানকার সংস্কৃতি?
রাজেশ্বরঃ সেটা নিয়ে তো নতুন করে কিছু বলার নেই। ভারতীয় সংস্কৃতি বলতে আমরা এক লহমায় যেটা বুঝি সেটা কলকাতার থেকে ভাল কোথাও নেই। মহানগরে মহিলারা যে ঢঙে শাড়ি পরেন সেটাই তো ভারতের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রথম প্রমাণ বহন করে।

Rajeswar Nag | newsfront.co

নবনীতাঃ তোমার প্রথম কাজও তো বাংলায়।
রাজেশ্বরঃ হ্যাঁ। স্টার জলসার ‘আঁচল’ মেগাতে আমার প্রথম কাজ। অভিনয় শুরু ওখান থেকেই। আসলে আমি যখন ন্যাশনাল স্কুল অফ ড্রামা থেকে অভিনয়ের কোর্স করছি তখন যেকোনও একটা ভাষায় অভিনয় করার দরকার পড়েছিল। তখন এক আত্মীয়ের বাড়িতে যাই। বিভিন্ন জায়গায় অডিশন দিই। চান্স পাই স্নেহাশিস চক্রবর্তীর ‘আঁচল’ ধারাবাহিকে অভিনয় করার। ওঁর মতো মানুষ আমি কম দেখেছি। কী ভাল ব্যবহার! কী ভীষণ আন্তরিক! আর কত গুণী! একজন বাবার মতো গাইড করেন সকলকে। আমি ওঁর কাছে কৃতজ্ঞ। তিন মাস অভিনয় করি সিরিয়ালটাতে। এরপর চলে আসি দিল্লিতে। কেরিয়ারের শুরু ওখান থেকেই। এরপর স্টার ওয়ার্ল্ডের একটা অ্যাড ফিল্মে কাজ করি। চিভাস স্টুডিওতে চেতন ভগত এবং প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার সঙ্গে স্ক্রিন শেয়ার করি। তারা মিউজিক বাংলায় দীপ্তি নাভালের সঙ্গে ‘রিড মাই ল্যাঙ্গোয়েজ’ নামে একটা প্রোমোশনাল অ্যাড ফিল্ম করি।

নবনীতাঃ হিন্দি ধারাবাহিকে কাজ করেছো কখনও?
রাজেশ্বরঃ না। তবে, শর্ট ফিল্ম করেছি প্রচুর। তার মধ্যে রয়েছে- তেরি মেরি ক্রিস্টমাস, লাভি ডাভি, বিনোদিনী, আই অ্যাম হোম, রেহাব, কাবাব মে কাত্তাপ্পা, ফ্লিপসাইড।

নবনীতাঃ হলিউডেও কাজ করেছো তুমি ‘বেবি সেলার্স’-এ।
রাজেশ্বরঃ হ্যাঁ। ওটাই আমার হলিউডে ডেবিউ ফিল্ম। শিশু পাচার নিয়ে গল্পটা। আমার চরিত্রের নাম ছিল জাভেদ। আমিই যুক্ত ছিলাম শিশু পাচারের সঙ্গে। এবং ছবিটা খুব জনপ্রিয় হয়। ‘জয় হিন্দ’ নামে একটা ওয়েব সিরিজেও অভিনয় করেছি।

নবনীতাঃ তুমি সুগায়কও বটে।
রাজেশ্বরঃ গানটা আমার খুব একান্তের জিনিস। আমি কোনওদিন সেটা প্রচারের আলোয় আনতে চাইনি। তুমি নিয়ে এলে সকলের সামনে। তা হলে বলি, আমি রবীন্দ্রসঙ্গীতে ডিপ্লোমা করেছি ‘বঙ্গীয় সঙ্গীত পরিষদ’ থেকে। ডিস্ট্রিংশনও পেয়েছি। গানটা আমার বড় আপনজন৷ আমি ‘লাভি ডাভি’ শর্ট ফিল্মে গানও গেয়েছি। এ ছাড়া ইন্ডিয়ান আইডলের ফাইনালিস্ট চারু সেমুয়ালের সঙ্গে একটা মিউজিক ভিডিও করি। গানটা ছিল ‘ইয়াদ কিয়া দিলনে কাহা হো তুম’। ‘ইয়ে নয়না ডারে ডারে’ গানটাও।আমার গলায় এসেছে ইউটিউবে। হেমন্ত মুখার্জির কণ্ঠের অনবদ্য গান ‘কহি দূর যব দিন ঢাল যায়ে’ গেয়েছি নতুন ফরম্যাটে। গত বছর মিউজিক ডিরেক্টর সজন প্যাটেলের কণ্ঠে গাওয়া গান ‘তুম চলে গ্যায়ে’ গানের সঙ্গে অভিনয় করি। গানের ব্যাপারে আমি একদম কনফিডেন্ট ছিলাম না। গান গাইতে ভালোবাসাতাম, শিখেছি- সব ঠিক আছে। কিন্তু স্টুডিওতে গান গাইব এ ব্যাপারে নিজের উপর আস্থা ছিল না একদম। বন্ধুদের উৎসাহদানে সাহস পাই স্টুডিওতে গান গাওয়ার।

আরও পড়ুনঃ মহালয়াতে ‘তারাদের শেষ তর্পণ’

নবনীতাঃ মডেলিং-এও তো গুণ দেখিয়েছো।
রাজেশ্বরঃ হেয়ার ইন্ডিয়ার ফ্যাশন শো তে শো স্টপার ছিলাম। এটাও একটা পছন্দের কাজ।

নবনীতাঃ আসলে তুমি দক্ষ সব ফিল্ডে। অস্বীকার করার উপায় নেই। এবার আবার তো কলকাতায় কাজ হল। বিদুলার সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা কেমন?
রাজেশ্বরঃ অসাধারণ। সবথেকে বড় কথা এই পরিস্থিতিতে একটা কাজ বাংলা ও হিন্দি দুই ভাষায় এগিয়ে নিয়ে যাওয়া ছোটখাটো ব্যাপার নয়। আমার তো মনে হয় এভাবে এই প্যান্ডেমিক সিচ্যুয়েশনে কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়া বিদুলা দি আর ওঁর টিম ছাড়া কেউ করতে পারত না। অসম্ভব এনার্জেটিক বিদুলা দি। আমি ওঁকে ‘সুপার ওম্যান’ ডাকি। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে কাজ হয়েছে। যারা অভিনয় করতাম তারা তো মাস্ক পরতে পারতাম না সবসময়, তবে ইউনিটের সবাই সবসময় মাস্ক পরে থাকতেন। খুব সংকটের মধ্যে কাজ এগিয়েছি আমরা।

নবনীতাঃ আচ্ছা, এমন যদি কখনও হয় যে বাংলায় বেশি কাজের সুযোগ পেতে শুরু করলে; তা হলে কি কলকাতায় চলে আসবে? রেসিডেন্ট গড়বে এখানে?
রাজেশ্বরঃ দেখো, কাজ যদি মনে ধরে কাজ করব নিশ্চই। যে কাজে নিজেকে দেখতে পাব না মানে আমার নিজের খুব বেশি কিছু করার থাকবে না সেরকম কাজ আমি করব না। তা ছাড়া রুচিসম্পন্ন কাজই করব। নচেত নয়। তবে, পাকাপাকিভাবে কলকাতায় থাকব না হয়ত। একটা পা দিল্লিতে রাখব আরেকটা পা কলকাতায়। সবটাই সময় বলবে অবশ্য।

আরও পড়ুনঃ এবার ক্রাইম থ্রিলারের পথে সত্যজিৎ

নবনীতাঃ কলকাতার পুজো দেখেছো কখনও?
রাজেশ্বরঃ দেখেছি তো। কলকাতার পুজো মানে তো একটা এক্সিবিশন। প্যাণ্ডেল দেখেই আমার চোখ ধাঁধিয়ে যায়। আমি দিল্লির পুজোয় সরাসরিভাবে যুক্ত। আমি পুজোর এক্সিকিউটিভ মেম্বার। ভোগ বিতরণ থেকে শুরু করে অনুষ্ঠান সবেতে থাকি সরাসরিভাবে। আমাদের এখানে পুজো মানেই ছেলেরা ধুতি পাঞ্জাবি পরবে। কলকাতার পুজো প্রথম দেখি ২০১৬ সালে। আলাদা অনুভব আছে ওখানকার পুজোতে৷ কলকাতার পুজোর সঙ্গে একটা বেসিক পার্থক্য আছে দিল্লির সঙ্গে। দিল্লিতে পুজোর কদিন জমিয়ে স্টেজ শো হয়। কলকাতায় সেটা সেভাবে দেখিনি। মানুষের ঢল দেখেছি। আর দেখেছি প্যাণ্ডেলের বাহার। আমি অবাক হয়ে গেছি দেশপ্রিয় পার্ক, ত্রিধারা, একডালিয়া পার্কের প্যাণ্ডেল দেখে। আরও একটা পার্থক্য আছে। দশমীতে দিল্লির বাঙালিরা কাঁদে। কলকাতায় মানুষ দ্বাদশী অবধি ঠাকুর দেখে। সুতরাং মাকে দশমীতেই মিস করতে হয় না কলকাতাবাসীকে। দিল্লি এবং কলকাতার পুজোতে একটা জিনিস কমন। দু জায়গাতেই জমিয়ে খাওয়া দাওয়া হয়। আমি খুব ফুডি। তাই ঘুরে ফিরে খাওয়ার কথাই বলি বারবার। ওর বাইরে যেতে পারি না।

নবনীতাঃ তুমি বহু স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান থেকে অভিনয়ের তালিম নিয়েছো, সেগুলি তোমাকে আরও বেশি সমৃদ্ধ করেছে। তোমার আগামী দিনগুলো আরও রঙিন, সুর-ছন্দময় এবং ফিল্মি হোক সেই কামনাই করে টিম নিউজ ফ্রন্ট। ভাল থেকো।
রাজেশ্বরঃ থ্যাঙ্ক ইউ সো মাচ নবনীতা দি। থ্যাঙ্ক ইউ নিউজ ফ্রন্ট ওয়েব পোর্টালকেও আমার কথা জনগণের সামনে তুলে ধরার জন্য। তুমি এবং তোমরা সবাই ভাল থেকো। টাটা।

নিউজফ্রন্ট এর ফেসবুক পেজে লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here