‘কী করে বলব তোমায়’ ধারাবাহিকের সোহিনী ম্যাডাম এবং ‘রানী রাসমণি’ ধারাবাহিকের মা ভবতারিণীরূপিণী তনুশ্রী ভট্টাচার্য বসুর সঙ্গে ফোনে আড্ডা জমালেন নবনীতা দত্তগুপ্ত।
নবনীতাঃ তনুশ্রী তোমার অভিনয়ের জার্নি শুরু কবে?
তনুশ্রীঃ ২০১৩ সালের ১৫ জানুয়ারি আমি প্রথম ক্যামেরার সামনে দাঁড়াই। ওইদিন থেকেই জার্নি শুরু।
নবনীতাঃ প্রত্যেকের জীবনেই সাফল্যের পিছনে কারো না কারো অবদান থাকে। তোমার ক্ষেত্রে সেই মানুষটি কে?
তনুশ্রীঃ আমার মা। লেখাপড়া, নাচ, গান, অভিনয় সব ক্ষেত্রে মায়ের ভূমিকা ছিল, আজও আছে সবার থেকে বেশি। টিউটর খোঁজা থেকে শুরু করে আমার সঙ্গে সবসময় শুটিং ফ্লোরে যাওয়া- সবেতে ছিল মায়ের সাহচর্য। মা আমাকে সাপোর্ট না করলে আমার লেখাপড়া, নাচ, গান, অভিনয় কিছুই করা হত না। মা এবং বড়দের আশীর্বাদ, ভগবানের আশীর্বাদ না থাকলে যেটুকু এগোতে পেরেছি সেটুকুও হত না।
নবনীতাঃ এই মুহূর্তে একদিকে মা ভবতারিণীর লুকে অন্যদিকে কোট-প্যান্ট পরে সোহিনী ম্যাডামের লুকে তোমায় দেখা যাচ্ছে৷ দুটো একেবারে দুরকম। কেমন এনজয় করো?
তনুশ্রীঃ মা ভবতারিণী এবং সোহিনী ম্যাডাম দুটো দুই জনারের চরিত্র। ঠিক যেন উত্তর এবং দক্ষিণ মেরু। দুটো চরিত্রই আমার খুব কাছের। দুটো চরিত্রই আমাকে দর্শকের কাছাকাছি পৌঁছে দিয়েছে। আমি নিজেও এই চরিত্রদুটো করতে দারুণ ভালোবাসি। সত্যি কথা বলতে কি, এই বছরটা তো খুব খারাপ সকলের জন্য। মন খারাপের একটা বছর বলা যায়। সব খারাপের মাঝেও আমি এই বছরেই মা ভবতারিণী চরিত্রের জন্য অফার পাই। এটা আমার কাছে আশীর্বাদস্বরূপ।
চরিত্রটা পেয়ে নিজেকে ধন্য মনে করি আমি৷ চ্যানেলের কাছে আমি কৃতজ্ঞ৷ সোহিনী ম্যাডামের একটা আলাদা পার্সোনালিটি। এটাও দারুণ এনজয় করি। সাধারণত সোহিনী ম্যাডাম জাতীয় চরিত্ররা পজিটিভ হন না। কিন্তু এখানে সোহিনী ম্যাডাম দারুণ পজিটিভ৷ সে কর্ণ স্যারকেও সামাল দেয় আবার অন্য কলিগদেরও কাছের ম্যাডাম। আমি বাস্তবেও সোহিনীর মতোই খুব কর্মপ্রিয় মানুষ। কাজের খিদেটা প্রচুর। এই মুহূর্তে এই দুটো চরিত্র আমার কাজের খিদেও মেটায় আবার আনন্দও দেয়।
নবনীতাঃ ভবতারিণী থেকে যখন সোহিনীর ফ্লোরে যাও তখন নিজের মধ্যে বদলটা আনো কীভাবে?
তনুশ্রীঃ সিরিয়াসলি জানিনা কীভাবে বদলে যেতে পারি৷ তবে, বাড়িতে যখন একা থাকি, তখন আমি আমার ঘরের আয়নার সঙ্গে একা একা কথা বলি। আমার বেস্ট ফ্রেন্ড আয়না। আয়নার দিকে তাকিয়ে থাকি দীর্ঘ সময় ধরে। চরিত্র নিয়ে ভাবি। আর তাই হোম ওয়ার্ক করি প্রচুর। বই পড়ি, সিনেমা দেখি। হয়ত তারই প্রভাবে নিজেকে বদলে নিতে পারি চট করে। হয়ত বা অনেকদিন ধরে কাজ করার ফলে সেই ক্ষমতাটা জন্ম নিয়েছে আমার মধ্যে।
আরও পড়ুনঃ এক্সক্লুসিভ ইন্টারভিউঃ কিছু কন্ডিশন আসায় চান্স পেয়েও বড়পর্দার কাজ ছেড়েছেন ইন্দ্রাক্ষী দে
নবনীতাঃ স্বপ্নের কোনও চরিত্র?
তনুশ্রীঃ অনেক আছে জানো তো। এই মুহূর্তে মনে আসছে তিনটে প্রিয় চরিত্রের কথা। ‘মার্গারিটা উইথ আ স্ট্র’ ছবির কালকির চরিত্রটা আমি করতে চাই, ‘ট্র্যাপড’ ছবিতে রাজকুমার রাওয়ের চরিত্রটা করতে চাই, আর চাই ‘ব্ল্যাক’- এর রানি মুখার্জির চরিত্রটা।
নবনীতাঃ প্রত্যেক অভিনেতা-অভিনেত্রীরই নিজের সম্বন্ধে একটা সম্যক জ্ঞান থাকে যে “আমাকে এমন চরিত্রে মানাবে”, তোমার নিজেকে ঠিক কীরকম চরিত্রে দারুণ ফিট করবে বলে মনে হয়?
তনুশ্রীঃ এরকম কোনও মনে হওয়া আমার নেই। আমি মনে করি, একজন অভিনেতা বা অভিনেত্রী যে কোনও চরিত্র ফুটিয়ে তোলার ক্ষমতা রাখে। আমাকে যে চরিত্রই দেওয়া হোক না কেন তা আমি ফুটিয়ে তুলব। আর এমনভাবে ফুটিয়ে তুলব যে সেই চরিত্রের জন্য দর্শকের মনে হবে আমিই ফিট। আমি ছাড়া অন্য কারোকে তারা এই চরিত্রে ভাবতেই পারে না।
নবনীতাঃ দারুণ উত্তর৷
তনুশ্রীঃ থ্যাঙ্কস!
নবনীতাঃ টলি এবং বলির কোন তারকার সঙ্গে স্ক্রিন শেয়ার করার খুব ইচ্ছে?
তনুশ্রীঃ যিশু দা (সেনগুপ্ত), ঋত্বিক চক্রবর্তী, টুম্পা দি মানে সুদীপ্তা চক্রবর্তী আর দামিনী বেনি বসুর সঙ্গে স্ক্রিন শেয়ার করার খুব ইচ্ছে। বেনি দি’র কাছে আমি ওয়ার্ক শপ করেছি। এঁরা প্রত্যেকেই আমার প্রিয় অভিনেতা- অভিনেত্রী। আর বলিউডেও আছেন কয়েকজন। আয়ুস্মান খুরানা, নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকি, ভিকি কৌশল। জানিনা সেই সৌভাগ্য কবে আসবে আমার জীবনে৷ তবে, আমি আশায় বাঁচি। আমি স্বপ্ন দেখি। স্বপ্ন নিয়ে বাঁচি। কবে, কখন, কীভাবে স্বপ্ন বাস্তবে পরিণত হয়ে যায় কেউ বলতে পারে না।
আরও পড়ুনঃ এক্সক্লুসিভ ইন্টারভিউঃ ফাইট সিনে শাড়ি পরে দুষ্কৃতী দমনে রূপা ভট্টাচার্য
নবনীতাঃ এবার একটু অন্য প্রশ্ন। পরিচালক শমীকের সঙ্গে প্রেম কী ভাবে? কে প্রথম প্রোপোজ করো?
তনুশ্রীঃ মিঃ বোস-এর সঙ্গে প্রথম দেখা একটা অডিশনে। এরপর আস্তে আস্তে কথা শুরু। ফোনে বন্ধুত্ব জমে। ৩-৪ বছর ফোনেই গল্প হত৷ কাজের কথা থাকত না সেখানে। থাকত ইয়ারকি, ঠাট্টা, দুজনের দুজনকে লেগপুল করা। বন্ধু হিসবেই মিশতাম তখন। ২০১৭-র এপ্রিল মাসে ও একদিন দেখা করতে চায়।আমিও রাজি হই। আড্ডার মাঝে হঠাত করেই ও বলে ফেলে- “আমি জানি তোর প্রেমিকের লাইনটা তো অনেক লম্বা। তো প্রথম ইটটা আমিই পেতে দিলাম। বিয়ে করব তোকে।”
আমি ভাবি ইয়ারকি মারছে হয়ত। কিন্তু ও বলে বাড়িতে গিয়ে কথা বলবে আমার বাবা-মায়ের সঙ্গে। সত্যিই আসে একদিন। লাঞ্চ করে। মার সঙ্গে আড্ডা জমায়। এরপর মাকে বলে বসে, আমি তোমার মেয়েকে বিয়ে করতে চাই। গমগমে ঘরটা হঠাতই পিন ড্রপ সাইলেন্স হয়ে যায় সেদিন। মা ওকে বলে আমি এখনই বলতে পারব মা কিছু। তোমার কাকুর সঙ্গে আলোচনা করে জানাচ্ছি। মা চটে গেছিল সেদিন খুব।
এরপর আস্তে আস্তে বরফ গলে৷ মা বোঝে শমীক ভাল ছেলে৷ তারপর ২০১৯-এর ১৩ মার্চ আমাদের বিয়ে হয়। আমি তো জানতাম না যে শমীক আমার বন্ধু থেকে বর হয়ে যাবে কখনও। তবে ওর সঙ্গে বিয়ে করার পর বুঝেছি একজন ভাল বন্ধু সবথেকে ভাল হাজব্যান্ড হয়ে উঠতে পারে। ওর সঙ্গে আমার সবকিছু ম্যাচ করে৷ গাইড করে আমায় বন্ধু হিসেবে।
সবথেকে মজার কথা হল, রিসেপশনের দিন শমীক আমার মাকে বলে- “মা কাকুর সংগে কথা বলে কিছু জানালে না তো?”… মা তখনও চটে গেছিল। শমীক এ ভাবেই সকলের সঙ্গে মজা করে সবসময়। আরেকটা কথা শেয়ার করতে ইচ্ছে করছে তোমার সঙ্গে, শমীক আমায় একবার বলেছিল, যখন ওর মন খারাপ থাকত ঠিক তখনই নাকি আমি ফোন করতাম ওকে। আমার সঙ্গে কথা বলার পর ওর নাকি মন ভাল হয়ে যেত। আরেকটা কথা জানার পর আমি খুব চটে গেছিলাম। আমার সঙ্গে বন্ধুত্ব হওয়ার পর অনেকদিন নাকি আমার নম্বর ওর ফোনে সেভ ছিল না। নম্বর চিনে বুঝত যে আমি ফোন করেছি।…
আরও পড়ুনঃ এক্সক্লুসিভঃ দেবের মতো হিরো হওয়ার ক্ষমতা আমার নেই
নবনীতাঃ তোমরা দুজনেই একই প্রফেশনের৷ শমীক তার উপরে পরিচালক মানুষ। দুজনে একসঙ্গে কাজ করেছো কখনও?
তনুশ্রীঃ একটাই কাজ করেছি একসঙ্গে। ‘অর্ধাঙ্গিনী’ ধারাবাহিকে।
নবনীতাঃ ওয়েব সিরিজ বা বড়পর্দায় কাজের অফার এসেছে কোনও?
তনুশ্রীঃ ২০১৪ সালে ‘গেম’ ছবিতে জিত’দার দুই বোনের মধ্যে ছোট বোনের চরিত্রটা প্লে করি৷ তারপর থেকে আজ অবধি বড় পর্দা কিংবা ওয়েব সিরিজের জন্য অফার পাইনি। তবে, পেলে তো করবই।
নবনীতাঃ অসংখ্য ধন্যবাদ তোমাকে। ভাল থেকো।
তনুশ্রীঃ তুমি এবং তোমরাও ভাল থেকো৷
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584