কোটাসুরের পিতৃহারা অনিশা মেধাতালিকায় অষ্টম

0
722

পিয়ালী দাস,বীরভূম:- বড়ই আনন্দের দিন, উচ্চমাধ্যমিকে রাজ্যে প্রথম দশজনের মধ্যে সেও একজন। কিন্তু এই আনন্দের দিনে সবাইকে ছেড়ে তার যাকে মনে পড়ছে তিনি হলেন  বাবা। আজ থেকে সাত বছর আগে বাবাকে হারিয়েছিল অনিশা। তারপর পড়াশোনায় এসেছিল অনিশ্চয়তা। সেই অনিশ্চয়তাকে কাটিয়ে দাদু, কাকাদের সহযোগিতায় আজ অনিশা উচ্চমাধ্যমিকে রাজ্যে অষ্টম স্থানাধিকারী, জেলায় দ্বিতীয় এবং জেলায় মেয়েদের মধ্যে প্রথম।

পঞ্চম শ্রেণীতে পড়াকালীন বাবাকে হারিয়ে অনিশা এবং তার মা বড়ই অসহায় হয়ে পড়ে। পড়াশোনা বন্ধ হওয়ার মতো অবস্থা ছিল। কিন্তু তা হতে দেননি অনিশার কাকা, ঠাকুরদা, ঠাকুমা সকলে মিলে। আর আজ সেই কষ্টের ফল মিললো। উচ্চমাধ্যমিকে ৪৮৩ নাম্বার পেয়ে গোটা রাজ্যে অষ্টম, জেলায় মেয়েদের মধ্যে প্রথম এবং জেলায় সবার মধ্যে দ্বিতীয়।

অনিশা ময়ূরেশ্বরের কোটাসুর হাইস্কুলের ছাত্রী। তার এমন ফলাফলে স্কুল, পরিবার, প্রতিবেশী সবাই খুব খুশি।
এত ভালো ফলাফলের পর অনিশা বলে, “ফলাফলে খুবই ভালো লাগছে। দিনে ৫ থেকে ৬ ঘন্টা পড়াশুনা করতাম। মা সব সময় পাশে বসে থাকতো। তবে সব থেকে সাহায্য করে দাদু আর কাকু। কাকু উৎসাহ দিতেন, আর দাদু তো আমার মেরুদন্ড। তবে এগিয়ে যাওয়ার পিছনে একজন নয় সকলেই শিক্ষক শিক্ষিকা থেকে আরম্ভ করে বাড়ির সকলেরই অবদান অনস্বীকার্য।”
মেয়ের এত ভালো ফলাফলের পর চোখের কোনে জল নিয়ে মা মিতালি মণ্ডলের প্রতিক্রিয়া, “দারুন লাগছে, এর থেকে খুশি আর কিছু হতে পারে না। আমি শুধু বাড়ির রান্নার কাজ করি, অন্যান্য সকলের সহযোগিতায় আজ মেয়ের এত ভালো রেজাল্ট। ওর বাবা মারা যাওয়ার পর আমি তো ওকে পড়াশুনা করাতে পারতাম না, কারন রোজগারের কিছু ছিল না। তারপর দাদু, ঠাকুমা, কাকার সাহায্যে ও পড়াশুনা করেছে।”
অনিশার ছোটো কাকা অমরেন্দ্র নাথ মণ্ডল বলেন, “সাফল্যের পিছনে খুব খুশি আমরা, পরিবারের আমাদের সকলের আনন্দ। তবে ওর কষ্টই ওর সাফল্যের চাবি কাঠি। প্রচন্ড কষ্ট করেছে। ওর বাবা অর্থাৎ আমার দাদা মারা যায় অনিশা যখন পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ে। তারপর ওর পড়াশোনার প্রতি আগ্ৰহ এবং আমরা সংগ্রামে  পাশে থেকে উৎসাহ দিয়েছি। গ্রাম্য রাস্তা পেরিয়ে স্কুলে যাওয়া, জীবনে বাবাকে হারানো-প্রতি ক্ষেত্রেই অনিশার লড়াইয়ের আজ এই ফল।”
সকলের সঙ্গে আনন্দের মাঝে কথা বলার সময়  আজকের এই দিনটিতে যাকে সে সবচেয়ে বেশি খুঁজছে তিনি হলেন বাবা। অনিশা তো শেষমেষ বলেই ফেলল “আজ যদি বাবা থাকত !”

নিউজফ্রন্ট এর ফেসবুক পেজে লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here