পিয়া গুপ্তা, উত্তর দিনাজপুরঃ
উত্তর দিনাজপুর জেলার ইসলামপুর মহকুমা আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির নিরিখে আগাগোড়াই অতি স্পর্শ কাতর। স্পর্শ কাতর পরিস্থিতির সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ইসলামপুর জেলা পুলিশের অধীনে থাকা বিভিন্ন থানা এলাকায় অস্ত্র মাফিয়ারা সক্রিয় হয়ে উঠেছে।
আগ্নেয়াস্ত্র এবং গোলাবারুদ মজুদ করার পিছনে দুষ্কৃতীদের কি ব্লুপ্রিন্ট রয়েছে তা নিয়ে বিভিন্ন স্তরের গোয়েন্দাদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। বিশেষ করে মহাকুমার বিভিন্ন এলাকার প্রত্যন্ত অঞ্চলে বহিরাগতদের আনাগোনা পুলিশ প্রশাসনের কাছেও উদ্বেগের হয়ে উঠেছে। ইসলামপুর জেলা পুলিশ আনাগোনার বিষয়টি স্বীকার করলেও গোলাবারুদের মজুদ নিয়ে তাদের কাছে সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই বলে দাবি।
এর ফলে যাতে নতুন করে অশান্তির বাতাবরণ না তৈরি হয় তার জন্যে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে জেলার ইন্টারনেট পরিষেবাও বন্ধ করে রাখা হয়।
প্রসঙ্গত ইসলামপুর মহাকুমায় অস্ত্র বিক্রেতা শিকড় গেড়ে বসার ঘটনা নতুন নয়। ইতিপূর্বে এলাকার নেতা বিধায়ক থেকে শুরু করে মন্ত্রী এবং পুলিশের শীর্ষ কর্তারা বারবার এই কথা স্বীকার করছেন। চলতি মাসে উত্তরবঙ্গের এডিজি সিদ্ধনাথ গুপ্তা ইসলামপুরে পুলিশকর্তাদের নিয়ে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক শেষেও আগ্নেয়াস্ত্র মজুদ থাকার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে গিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে ফিড অস্ত্র মাফিয়াদের এলাকায় সক্রিয়তার খবরে বিভিন্ন মহলে উদ্বেগ ছড়িয়েছে।
নির্ভরযোগ্য সূত্রের খবর নাগরিকত্ব আইন নিয়ে তৈরি হওয়া জটিল পরিস্থিতির মধ্যে এলাকায় আগ্নেয়াস্ত্রের রমরমা কারবার কার্যত আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির জন্য বড় চিন্তার বিষয়। উল্লেখ্য ইসলামপুর মহাকুমার প্রায় ৫২ কিলোমিটার বিহার সীমান্ত। বৃষ্টির নয় সীমান্তে যৌথ ভাবে দুই রাজ্যের পুলিশের কড়া নজরদারির ব্যবস্থা নেই বললেই চলে।
৩ থেকে ৫ কিলোমিটার রাস্তা অতিক্রম করলেই বিহারের চলে যাওয়া যায়। জানা গিয়েছে বিহার সীমান্ত দিয়েই প্রচুর মাত্রায় গোলাবারুদ মহাকুমায় ঢুকছে। দেশি পাইপগান, দামি পিস্তল, দোনালা বন্ধুক সহ বোমা তৈরীর রসদ নিয়ে বহনকারীরা এগুলো আদানপ্রদান করছে।
সূত্রটি বলেছে যে পাইপগান মাত্র ৫০০০ টাকায় পাওয়া যেত বর্তমান বাজারে সেটির মূল্য ৮০০০ টাকায় গিয়ে উঠেছে।একইভাবে ২৫ হাজার ৩৫ হাজারের পিস্তলের দাম লাফিয়ে তিন থেকে চার হাজার টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। একটি বুলেটের দাম ২৫০ টাকা থেকে ৪০০ টাকার মধ্যে ছিল। তার মূল্য বেড়ে ৬০০ টাকা থেকে বারোশো টাকা পর্যন্ত পৌঁছেছে বলে সূত্রে জানা গিয়েছে।
আরও পড়ুনঃ৩৪ তম যোগাসন চ্যাম্পিয়নশিপের আয়োজন দক্ষিণ চব্বিশ পরগণায়
একটি শক্তিশালী বোমা তৈরি করতে খরচ করে সাত থেকে আট হাজার টাকা সেই বোমার ভারত সহ অন্যান্য উপকরণের মূল্য বাজারে চাহিদা অনুসারে অনেকটাই বেড়েছে। এছাড়াও অপর একটি সূত্র অনুসারে সস্তায় পেট্রোল বোমা তৈরি এবং মজবুত করার প্রবণতা বিভিন্ন এলাকায় লক্ষ্য করা গিয়েছে।
গোয়ালপুকুর চাকুলিয়া ইসলামপুর এবং চোপড়া থানা এলাকায় আর্মস ডিলারদের বর্তমান সক্রিয়তা চোখে পড়ার মতো। উল্লেখ্য চোপড়া এবং ইসলামপুর থানার বিভিন্ন এলাকায় অবৈধ গোলাবারুদের কারবার ও ব্যবহার নিয়ে পুলিশ প্রশাসন দীর্ঘদিন থেকেই চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে।
তারমধ্যে আর্মস ডিলিং এর কিংপিনরা অতি সক্রিয়। যা গোয়েন্দার ধন্দে ফেলে দিয়েছে। বিশেষ করে বহিরাগতদের এলাকায় আনাগোনার সঙ্গে গোলাবারুদের কোন যোগ রয়েছে কিনা তা নিয়ে বড় প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তাৎপর্য পূর্ণ বিষয় হলো আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির নিরিখে উত্তরদিনাজপুর ‘স্পর্শকাতর’ তালিকায় রয়েছে।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584