শুভম বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতাঃ
রাজ্যে প্রথম মারণ থাবা বসালো করোনা ভাইরাস। ১৭ মার্চ কলকাতায় প্রথম চিহ্নিতকরণের এক সপ্তাহের মধ্যেই রাজ্যে মৃত্যু হলো এক করোনা পজিটিভ আক্রান্তের। সল্টলেকের একটি হাসপাতালে মৃত্যু হওয়া ওই ব্যক্তি দমদমের যোগীপাড়ার বাসিন্দা ছিলেন।
প্রসঙ্গত এখন পর্যন্ত এ রাজ্যে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৭। তার মধ্যে ঘটল প্রথম মৃত্যু। জানা গিয়েছে, বাকি আক্রান্তদের মধ্যে তিনজনের বিদেশযাত্রার রেকর্ড এবং বাকি তিনজনের এক সংক্রামিতের সঙ্গে একই ঘরে থাকার ঘটনা থাকলেও এই প্রৌঢ় কখনো বিদেশ যাননি।
তবে ২৬ ফেব্রুয়ারি তিনি উত্তরপ্রদেশের বিলাসপুরে একটি বিয়ে বাড়ি আমন্ত্রণে গিয়েছিলেন। সেখান থেকেই তিনি করোনা সংক্রমণ নিয়ে ফিরেছেন বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা। আবার চিকিৎসকদের আরেক অংশের ধারণা, ফেরার সময়ে ট্রেন থেকেও সংক্রামিত হতে পারেন, কারণ ওই সময়ে বিলাসপুরে কোনও সংক্রামিত ছিলেন না।
জানা গিয়েছে, ফেরার পর তিনি ২ মার্চ থেকে ৮ মার্চ পর্যন্ত ফেয়ারলি প্লেসে নিজের অফিসে নিয়মিত এসেছেন। ৯ মার্চ নিউটাউনে শপিং মলে বাজার করেন এবং তারপর সস্ত্রীক রেস্তোরাঁয় ডিনার করে বাড়ি ফেরেন। এরপর হোলিতেও অংশগ্রহণ করেন।
আরও পড়ুনঃ বালিগঞ্জে বিদেশ ফেরত তরুনের বেনিয়মেই প্রসারিত হলো সংক্রামণ
এরপর ১০ মার্চ থেকে অসুস্থ হয়ে পড়লে তার রক্তপরীক্ষা করানো হয়। রক্তপরীক্ষায় প্রাথমিক ভাবে নিউমোনিয়া ধরা পড়লে বাইপাসের ধারে সল্টলেকের এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এরপরেই ১৯ মার্চ তার শরীর মাত্রাতিরিক্ত খারাপ হলে এবং কাশি ও শ্বাসকষ্ট বেড়ে গেলে করোনা টেস্টের জন্য তার রিপোর্ট পাঠানো হয়। ওই সময় থেকেই তিনি ছিলেন ভেন্টিলেশনে। ২১ মার্চ জানা যায়, তিনি করোনা পজিটিভ।
সোমবার তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে ইসিএমও যন্ত্রের সাহায্যে কৃত্রিম শ্বাসপ্রশ্বাস দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু সমস্ত চেষ্টা ব্যর্থ করে করোনা সংক্রমণের জেরে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে সোমবার দুপুর সাড়ে ৩ টে নাগাদ মৃত্যু হয় ৫৭ বছরের ওই প্রৌঢ়ের।
তবে নবান্ন সূত্রের দাবি, ওই প্রৌঢ়ের দেহ পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হবে না। এদিকে ওই প্রৌঢ়ের চিকিৎসা করা এক চিকিৎসকও অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। ওই চিকিৎসক এবং তার পরিবারের ৯ জনকে কোয়ারেন্টাইন এ রাখা হয়েছে। তাদের সকলের লালারসের নমুনা করোনা টেস্টের জন্য পাঠানো হয়েছে।
স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা বলেন, ”যদি ওই চিকিৎসক কোনওভাবে করোনায় আক্রান্ত হন, তাহলে স্বাস্থ্যকর্মীদের বিষয়ক আমাদের অনেক বাড়তি সচেতনতা অবলম্বন করতে হবে।”
যদিও চিকিৎসকদের যথেষ্ট সাবধানতা অবলম্বন করিয়ে চিকিৎসা পরিষেবা দিতে দেওয়া হচ্ছে বলে দাবি করেছেন সল্টলেক আমরি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এদিকে ওই প্রৌঢ়ের পরিবারের সকলের লালারসের নমুনাও পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। তাঁরা এমআর বাঙুর হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।
শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী, হাবরার তরুণী এবং বালিগঞ্জের তরুণের বাবার শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক। তবে সমস্ত রকম চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন চিকিৎসকেরা।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584