নিজস্ব সংবাদদাতা, পশ্চিম মেদিনীপুরঃ
অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলার রাজনৈতিক জগতে নক্ষত্র পতন। প্রয়াত হলেন অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলার বামপন্থী কৃষক আন্দোলনের প্রবীণ প্রাক্তন নেতা ও সিপিআইএম’র রাজ্য কমিটির প্রাক্তন সদস্য শেখ ইসরাইল। ক্যানসার এবং বার্ধক্যজনিত নানা শারীরিক সমস্যায় দীর্ঘদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন তিনি।
রবিবার সন্ধ্যা ৭টা ১৫ মিনিট নাগাদ পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ঘাটাল মহকুমার রাধনগর এলাকার শালিকা গ্রামে নিজের বাসভবনেই তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮২ বছর।
দলের প্রবীণ নেতা শেখ ইসরাইলের জীবনাবসানে গভীর শােকজ্ঞাপন করেছেন সিপিআইএমের পলিটব্যুরাে সদস্য বিমান বসু, দলের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা কমিটির সম্পাদক তরুণ রায়, দীপক সরকারসহ অন্যান্য নেতৃত্ব।
আরও পড়ুনঃ বিমল গুরুং ভয়ের বিষয় নয়, আমি ওদের জন্য ভয়ের বিষয়ঃ বিনয় তামাং
১৯৩৮ সালে তৎকালীন অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলার রাধানগর এলাকার শালিকা গ্রামের অত্যন্ত দরিদ্র কৃষক পরিবারে শেখ ইসরাইল জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম ছিল শেখ ইব্রাহিম ও মায়ের নাম হাসিনা খাতুন। ছাত্রাবস্থায় দারিদ্রের সঙ্গে লড়াই করে পড়াশােনা করেন তিনি। পড়েছেন মেদিনীপুর কলেজেও। হিন্দিতেও ডিপ্লোমা ডিগ্রি ছিল। পেশাগত জীবনে ঘাটালের একটি হাইস্কুলে শিক্ষাকতা করতেন। সেই সঙ্গে সুনাম অর্জন করেছিলেন রেজিস্টার্ড হােমিওপ্যাথি চিকিৎসক রূপেও।
আরও পড়ুনঃ সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের শারীরিক অবস্থার আরও কিছুটা অবনতি, বাড়ছে উদ্বেগ
১৯৬৮-৬৯ সালে রাধানগরে জমির আন্দোলনের মধ্য দিয়ে রাজ্যে বামপন্থী আন্দোলনের সংস্পর্শে আসেন শেখ ইসরাইল। কৃষক আন্দোলনের সংগঠক হিসাবে জনপ্রিয়তা তাকে নেতৃত্বে উত্তীর্ণ করে। ১৯৭০ সালে সিপিআইএমের সদস্যপদ পান। সেই সময় কৃষক আন্দোলনে নেতৃত্বদানের জন্য তাকে জোতদারদের করা অনেকগুলি মিথ্যা মামলার আসামীও হতে হয়। কিছুদিন আত্মগোপনেও কাটাতে হয়।
রাজ্যে বামফ্রন্ট সরকার প্রতিষ্ঠার পরে রাজ্যে প্রথম পঞ্চায়েত নির্বাচনে ১৯৭৮ সালে ঘাটাল পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন শেখ ইসরাইল। সারা ভারত কৃষকসভার জেলা সভাপতি ছিলেন তিনি। পরবর্তীতে হন পশ্চিমবঙ্গ প্রাদেশিক কৃষকসভার সহ-সভাপতি।
আরও পড়ুনঃ ‘মুখ্যমন্ত্রী পাহাড়ে আগুন জ্বালাতে চাইছে’, বাগডোগরা বিমান বন্দরে বললেন লকেট
সিপিআইএমের খড়্গপুর জেলা সম্মেলন থেকে তিনি পার্টির অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলা কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। ছিলেন পার্টির জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যও। পরে পার্টির রাজ্য কমিটির সদস্য হন। তার শারীরিক অসুস্থতার কারণে পরবর্তী কালে তাকে দলীয় কাজ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
সহজ সরল জীবনযাপন ও আন্দোলন সংগ্রামের নেতৃত্বদানের কারণে ঘাটালসহ অন্যান্য এলাকায় অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিলেন শেখ ইসরাইল। বিরোধীদের সন্ত্রাস মােকাবিলাতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন তিনি। ২০১১ সালে রাজ্য সরকার পরিবর্তনের পরে সিংহভাঙার মােড়ে তার গাড়ি থামিয়ে তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা তার ওপর হামলা চালায় বলে অভিযোগ।
ছাত্র অবস্থা থেকেই তিনি বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় লেখালেখি করতেন । কমিউনিস্ট পার্টির সংগঠন, আন্দোলন ও সংগ্রাম এবং সাহিত্য নিয়ে অনেক বইও লিখেছেন। মেদিনীপুর জেলার কমিউনিস্ট আন্দোলনের ইতিহাস উপযােগী তথ্যাদি এবং অনেকগুলি কবিতার বই রয়েছে তার। নন্দন ও গণশক্তিতে বিভিন্ন সময়ে তার একাধিক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। তার লেখা উল্লেখযোগ্য বই হল “মেদিনীপুর জেলার কমিউনিস্ট আন্দোলনের ইতিহাস উপযোগী তথ্যাদি”।
শেখ ইসরাইল রেখে গেলেন স্ত্রী সেলিমা বিবি ও ৫ পুত্রসহ পরিবারকে। শেখ ইসরাইলের মৃত্যুতে শােকাহত ঘাটালের সিপিআইএম সহ অন্যান্য বামপন্থীদলের কর্মীরা। গভীর শােকজ্ঞাপন করেছেন ঘাটাল এলাকার দলের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অশােক সাঁতরা, সুবােধ রায় প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584