কোচবিহার জেলা জুড়ে পালিত হল গান্ধী জয়ন্তী

0
101

নিজস্ব সংবাদদাতা, কোচবিহারঃ

আজ অহিংসার প্রতীক মহাত্মা গান্ধীর জন্মদিন। যার আসল নাম ছিল মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী। ১৮৬৯ সালের ২ অক্টোবর গুজরাটের পরবন্দরে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। বিশ্বজুড়ে এই দিনটি আন্তর্জাতিক অহিংসা দিবস হিসেবে পালিত হয়।

Mahatma Gandhi | newsfront.co
নিজস্ব চিত্র

তাই সারা দেশের সাথে আজ জাতির জনক গান্ধীজির ১৫১ তম জন্মদিবস উদযাপিত হল কোচবিহার জেলা জুড়ে। শুক্রবার সকালে কোচবিহার শহরের সাগরদিঘী সংলগ্ন সদর মহকুমা শাসকের দপ্তরের পাশে গান্ধীজীর মূর্তিতে মাল্যদান এবং পুষ্পার্ঘ দিয়ে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও কোচবিহার পুরসভার কর্মীরা।

Gandhi Jayanti | newsfront.co
নিজস্ব চিত্র

পাশাপাশি জেলার দিনহাটা, সিতাই, হলদিবাড়ি, মেখলিগঞ্জ, মাথাভাঙ্গা, শিতলখুচি তুফানগঞ্জ-সহ বিভিন্ন এলাকায় এবং জেলার বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পক্ষ থেকেও দিনটি সাড়ম্বরে পালিত হয়।অন্যদিকে, কোচবিহার জেলায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল গুলি তাদের দলীয় কার্যালয়ে মহাত্মা গান্ধীর ১৫১ তম জন্মদিন পালন করেন।

এদিন এবিষয়ে কোচবিহার জেলা কংগ্রেসের কার্যকরী সভাপতি রবিন রায় বলেন, “কংগ্রেস প্রথম থেকেই গান্ধীজীর পথ অনুসরণ করে আসছে। এই মহামারীর পরিস্থিতিতেও সামাজিক বিধি মেনে কংগ্রেসের পক্ষ থেকে গান্ধীজীর মূর্তিতে মাল্যদান করা হলো। তবে প্রতিবছর শ্যামল চৌধুরী গান্ধীজির মূর্তিতে মাল্যদান করলেও এবছর তার অনুপস্থিতি বেদনা দিচ্ছে।”

আরও পড়ুনঃ ফাঁসিদেওয়ায় লাঙ্গল নিয়ে কৃষি আইনের সমর্থনে মিছিল বিজেপির

অপরদিকে, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আস্থা ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে কোচবিহার দাস ব্রাদার্স মোরে গান্ধীজীর প্রতিকৃতিতে মাল্যদানের পাশাপাশি, পথচলতি মানুষদের হাতে বাচ্চাদের জন্য ছড়ার বই তুলে দেওয়া হয়।

প্রসঙ্গত, মহাত্মা গান্ধী হলেন, ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের অগ্রগামী ব্যক্তিদের একজন এবং প্রভাবশালী আধ্যাত্মিক নেতা। তিনি ছিলেন সত্যাগ্রহ আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা। এর মাধ্যমে স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে জনসাধারণ তাদের অভিমত প্রকাশ করে।

আরও পড়ুনঃ ঝাড়গ্রামে তৃণমূলের উদ্যোগে বিষাক্ত আগাছা নিধন কর্মসূচি

এ আন্দোলন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল অহিংস মতবাদ বা দর্শনের উপর ভিত্তি করে এবং এটি ছিল ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম চালিকা শক্তি, সারা বিশ্বে মানুষের স্বাধীনতা এবং অধিকার পাওয়ার আন্দোলনের অন্যতম অনুপ্রেরণা।

গান্ধী ভারতে এবং বিশ্ব জুড়ে মহাত্মা (মহান আত্মা) এবং বাপু (বাবা) নামে পরিচিত। ভারত সরকার সম্মানার্থে তাকে ভারতের জাতির জনক হিসেবে ঘোষণা করেছে। ২রা অক্টোবর তার জন্মদিন ভারতে গান্ধী জয়ন্তী হিসেবে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হয়।

২০০৭ সালের ১৫ই জুন জাতিসংঘের সাধারণ সভায় ২রা অক্টোবরকে আন্তর্জাতিক অহিংস দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। জাতিসংঘের সকল সদস্য দেশ এ দিবস পালনে সম্মতি জ্ঞাপন করে।

আরও পড়ুনঃ বহরমপুরে তৃণমূলের গান্ধী জয়ন্তী উদযাপন

একজন শিক্ষিত ব্রিটিশ আইনজীবী হিসেবে দক্ষিণ আফ্রিকায় নিপীড়িত ভারতীয় সম্প্রদায়ের নাগরিকদের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে গান্ধী প্রথম তাঁর অহিংস শান্তিপূর্ণ নাগরিক আন্দোলনের মতাদর্শ প্রয়োগ করেন।

ভারতে ফিরে আসার পরে তিনি কয়েকজন দুঃস্থ কৃষক এবং দিনমজুরকে সাথে নিয়ে বৈষম্যমূলক কর আদায় ব্যবস্থা এবং বহুবিস্তৃত বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলেন। ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের নেতৃত্বে আসার পর গান্ধী সমগ্র ভারতব্যাপী দারিদ্র্য দূরীকরণ, নারী স্বাধীনতা, বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠা, বর্ণবৈষম্য দূরীকরণ, জাতির অর্থনৈতিক সচ্ছলতাসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রচার শুরু করেন।

কিন্তু এর সবগুলোই ছিল স্বরাজ অর্থাৎ ভারতকে বিদেশি শাসন থেকে মুক্ত করার লক্ষ্যে। ১৯৩০ সালে গান্ধী ভারতীয়দের লবণ করের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে ৪০০ কিলোমিটার (২৪৮ মাইল) দীর্ঘ ডান্ডি লবণ কুচকাওয়াজে নেতৃত্ব দেন, যা ১৯৪২ সালে ইংরেজ শাসকদের প্রতি সরাসরি ভারত ছাড় আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটায়। তিনি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কারণে বেশ কয়েকবার দক্ষিণ আফ্রিকা এবং ভারতে কারাবরণ করেন।

মহাত্মা গান্ধী সমস্ত পরিস্থিতিতেই অহিংস মতবাদ এবং সত্যের ব্যাপারে অটল থেকেছেন। তিনি সাধারণ জীবনযাপন করতেন এবং একটি স্বায়ত্তশাসিত আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন। তার নিজের পরিধেয় কাপড় ছিল ঐতিহ্যবাহী ভারতীয় ধুতি এবং শাল, যা তিনি নিজেই চরকায় বুনতেন। তিনি সাধারণ নিরামিষ খাবার খেতেন। শেষ জীবনে ফলমূলই বেশি খেতেন। আত্মশুদ্ধি এবং প্রতিবাদের জন্য তিনি দীর্ঘ সময় উপবাস থাকতেন।

নিউজফ্রন্ট এর ফেসবুক পেজে লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here