ইচ্ছাপূরণ হল ২ সন্তানের জননী প্রতিমা গঙ্গোপাধ্যায়ের

0
66

মোহনা বিশ্বাস, কলকাতাঃ

পড়াশুনা করার কোনো বয়স হয় না। একথা আমার-আপনার মুখে প্রায়ই শোনা যায়। আর কথাটা যে সত্যি তার প্রমাণ আমরা অনেক পেয়েছি। এমনই এক নজিরবিহীন ঘটনা ঘটলো উত্তর ২৪ পরগনার খড়দহতে। ৫২ বছর বয়সে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করলেন খড়দহের প্রতিমা গঙ্গোপাধ্যায়। বাড়িতে দিদির বিয়ের জন্য পাত্র দেখতে এসেছিলো পাত্র পক্ষ। দিদিকে পছন্দ না হওয়ায় পাত্র পক্ষকে আর না ফিরিয়ে প্রতিমা দেবীর সঙ্গে বিয়ে দিয়ে দেন বাড়ির পরিজনরা।

Result | newsfront.co
ফলাফল হাতে প্রতিমা গঙ্গোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র

তাই মাধ্যমিক পরীক্ষা দিতে না দিতেই একেবারে তড়িঘড়ি বিয়ে হয়ে গিয়েছিল প্রতিমাদেবীর। বিয়ের পর মাধ্যমিকের ফল বেরোলে দেখা যায় অকৃতকার্য হয়েছেন তিনি। সেই থেকে লেখাপড়ায় ইতি। কিন্তু, কলেজে না যেতে পারার আক্ষেপ চিরকালই যন্ত্রণা দিয়েছে প্রতিমা দেবীকে। প্রৌঢ়ার স্বামী একটি বড় বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত। তাঁর দুই ছেলেও উচ্চশিক্ষিত। একজন আইনজীবী এবং অন্যজন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র।

Pratima Ganguly | newsfront.co
নিজস্ব চিত্র

প্রতিমাদেবী বলেন, “ছেলেরা যখন স্কুলে যেত, তখন মন খারাপ করতো খুব। ওদের বলতাম, ইশ! আমিও যদি তোদের মতো লেখাপড়া করতে পারতাম। আমার এই আক্ষেপ, এই কষ্ট বুঝেছিল আমার বড় ছেলে। তাই যখন আমি এমন বলতাম তখন বড় ছেলে আমাকে বলেছিল, “মা! ভেবো না। আমি বড় হয়ে তোমায় পড়াব।”

আরও পড়ুনঃ ভবিষ্যতের সেবিকা হওয়ার স্বপ্নে পায়েলের বাধা দারিদ্র্যতা

ছেলে মাকে দেওয়া সেই কথা রেখেছে। প্রতিমাদেবীর বড় ছেলে অয়ন গঙ্গোপাধ্যায় আইন পাস করে ওকালতি শুরু করার পর মায়ের সেই স্বপ্নপূরণ করার চেষ্টায় মরিয়া হয়ে ওঠেন। ২০১৭ সালে রবীন্দ্র মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে মাকে ভর্তি করেন অয়নবাবু। ওই বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই মাধ্যমিক পাশ করেন প্রতিমাদেবী। এরপর ২০১৮ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য খড়দহ আইডিয়াল বালিকা বিদ্যালয়ে রেগুলার কোর্সে তিনি ভর্তি হন। ছেলেদের কাছে অংক, বিজ্ঞান ও ইংরেজি দেখে নিতেন। বাকী বিষয় গুলি স্কুলের দিদিমনিরা সাহায্য করতেন।

আরও পড়ুনঃ ভার্চুয়াল শুনানির জন্য উন্নতমানের ১০টি ভিস্যুয়াল ক্যামেরা কিনছে হাইকোর্ট

উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় পাশ করার জন্য গত দু’বছর পুরোদমে স্কুলছাত্রীর জীবন কাটিয়েছেন উত্তর ২৪ পরগনার রহড়া রামকৃষ্ণপল্লির বাসিন্দা প্রতিমাদেবী। সংসারের যাবতীয় কাজ সেরে সকাল দশটা বাজতেই ইউনিফর্ম পরা স্কুলে ছুটেছেন প্রৌঢ়া। নাতনির বয়সি মেয়েদের সঙ্গে রোজ ক্লাস করেছেন। বাড়ি ফিরে সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত পড়শোনা করেছেন। প্রতিমাদেবীর এই ইচ্ছাশক্তি এবং শ্রম সত্যিই তাঁর জীবনে সাফল্য এনে দিয়েছে। উচ্চমাধ্যমিকে ২৫৯ নিয়ে পাশ করেছেন তিনি। কলেজে ডিগ্রি কোর্সে ভর্তি হচ্ছেন প্রতিমা দেবী।

তারপর ইতিহাস অথবা এডুকেশন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিও করতে চান তিনি। ইচ্ছে ছিল সরকারি চাকরিজীবী বা আইনজীবী হওয়ার। কিন্তু তা যদি না হয় তাহলে এই শিক্ষা তিনি সমাজের কাজে লাগাতে চান। পঞ্চাশোর্ধ্ব প্রতিমাদেবীর এই অদম্য ইচ্ছাশক্তিকে কুর্ণিশ জানায় নিউজ ফ্রন্ট বাংলা।

নিউজফ্রন্ট এর ফেসবুক পেজে লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here