উজ্জ্বল দত্ত, কলকাতাঃ
ওয়েস্ট বেঙ্গল ক্লিনিক্যাল এস্টাব্লিশমেন্ট রেগুলারি কমিশন ( ডাবলুবিসিইআরসি) করোনার সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য বেসরকারি হাসপাতালের আউটডোরে ইনফেকশন কন্ট্রোল চার্জ হিসাবে রোগীর কাছ থেকে মাথাপিছু পঞ্চাশ টাকা করে নেওয়ার কথা নির্দেশ দিয়েছিল।
কিন্তু সেই নির্দেশ অমান্য করে মাথাপিছু আড়াই শো টাকা করে এই ফি নেওয়ায় মুকুন্দপুরের এক বেসরকারি হাসপাতালে দশ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে বলল কমিশন। এই টাকায় অপুষ্টিতে ভুগতে থাকা শিশুদের জন্য প্রতিদিন একটি করে ডিম খাওয়ানোর পরিকল্পনা নিয়েছে এই কমিশন।
রাজ্যের স্বাস্থ্য কমিশনের চেয়ারম্যান জাস্টিস (অবসরপ্রাপ্ত) অসীম বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আগামী এক মাসের মধ্যে ওই দশ লাখ টাকা বেসরকারি ওই হাসপাতালকে দিতে বলা হয়েছে। যাঁদের কাছ থেকে ইনফেকশন কন্ট্রোল চার্জ হিসাবে অতিরিক্ত টাকা নিয়েছে বেসরকারি ওই হাসপাতাল, তাঁদের সকলকে অতিরিক্ত ওই টাকা ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে কি না, কমিশন তাও নজরে রাখবে।”
আরও পড়ুনঃ ফালাকাটায় ২৪৫ জন বিএলও-র প্রশিক্ষণ শুরু
কমিশন জানিয়েছে, গত ১৫ অক্টোবর ঢাকুরিয়া এলাকার বাসিন্দা ষাটোর্ধ্ব এক প্রৌঢ় তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে মুকুন্দপুরে অবস্থিত বেসরকারি একটি হাসপাতালের আউটডোরে চিকিৎসা করাতে যান। সেখানে তাঁদের কাছ থেকে ইনফেকশন কন্ট্রোল চার্জ হিসাবে আড়াইশো টাকা করে মোট পাঁচশো টাকা নেওয়া হয়। এই চার্জ দেওয়ার আগে এই প্রৌঢ় ওই হাসপাতালে বলেছিলেন, ইনফেকশন কন্ট্রোল চার্জ হিসাবে পঞ্চাশ টাকা করে নেওয়া যাবে বলে রাজ্যের স্বাস্থ্য কমিশন জানিয়েছে। তারপরও ওই হাসপাতালে প্রৌঢ় ও তাঁর স্ত্রীর জন্য আড়াই শো করে মোট পাঁচশো টাকা নেওয়া হয়। পরের দিন এই বিষয়ে কমিশনে অভিযোগ দায়ের করেন ওই প্রৌঢ়।
করোনা প্রতিরোধের জন্য বেসরকারি বিভিন্ন হাসপাতালে ইনফেকশন কন্ট্রোল চার্জ হিসাবে বিভিন্ন রকমের চার্জ নেওয়ার বিষয়টি জানতে পারে কমিশন। এর জেরে ১ অগাস্ট নির্দেশিকা জারি করে কমিশন জানিয়েছিল, বেসরকারি কোনও হাসপাতালের আউটডোরে চিকিৎসা করাতে গেলে ইনফেকশন কন্ট্রোল চার্জ হিসাবে রোগীর কাছ থেকে পঞ্চাশ টাকার বেশি নেওয়া যাবে না। হাসপাতালের ডাক্তার যদি রোগী দেখার জন্য পিপিই ব্যবহার করেন, এ জন্য সংশ্লিষ্ট রোগীর কাছ থেকে আরও পঞ্চাশ টাকা নেওয়া যাবে। কমিশন জানিয়েছে, কমিশনের এই নির্দেশিকা না মানার জন্য বেসরকারি ওই হাসপাতালকে জরিমানা করা হয়নি। তবে কর্পোরেট সোশ্যাল রেসপন্সিবিলিটি হিসাবে ওই বেসরকারি হাসপাতালকে দশ লাখ টাকা জমা করতে বলা হয়েছে। এই টাকা অপুষ্টিতে ভুগতে থাকা শিশুদের জন্য খরচ করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে রাজ্যের স্বাস্থ্য কমিশন।
আরও পড়ুনঃ প্রয়াত আরএসপি নেতার স্মরণসভা জটেশ্বরে
কী রকম এই পরিকল্পনা? স্বাস্থ্য কমিশন জানিয়েছে, কলকাতার লেডি ব্রেবোর্ন কলেজের আশপাশের অঞ্চলে অপুষ্টিতে ভুগতে থাকা যে সব শিশু রয়েছে, তাদের মধ্যে অন্তত একশো শিশুকে বেছে নিয়ে প্রতিদিন তাদের জন্য একটি করে ডিম দেওয়া হবে। যতদিন পর্যন্ত এই দশ লাখ টাকা থেকে প্রতিদিন অন্তত একশো শিশুকে ডিম দেওয়া যাবে, ততদিন দেওয়া হবে। এই বিষয়টি দেখবেন লেডি ব্রেবোর্ন কলেজের প্রিন্সিপাল, কমিশনের এক মহিলা সদস্য ও পার্কসার্কাসে অবস্থিত বেসরকারি একটি শিশু হাসপাতালের এক মহিলা ডাক্তার। তাঁদেরকে সহায়তার জন্য কলকাতা পুলিশ কমিশনারকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। তবে ওই বেসরকারি হাসপাতাল যদি মনে করে তাহলে তাদের তরফেও তারা একজন মহিলা প্রতিনিধিকে রাখতে পারবে। তবে নির্দেশিকা অমান্য করার জেরে শুধুমাত্র যে এই দশ লাখ টাকা বেসরকারি ওই হাসপাতালকে দেওয়ার কথা বলেছে কমিশন তা নয়। কমিশন জানিয়েছে, গত পনের অক্টোবর এই প্রৌঢ়র কাছ থেকে আড়াই শো টাকা করে ইনফেকশন কন্ট্রোল চার্জ হিসাবে নেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুনঃ বিধায়ক পদ থেকে বেচারাম মান্নার পদত্যাগ ঘিরে জল্পনা
কমিশনের অ্যাডভাইসরি ইস্যু হওয়ার দেড় মাস পরেও যখন এই ঘটনার সম্মুখীন হতে হয়েছে ওই প্রৌঢ়কে। এই দেড় মাসের মধ্যে এভাবে লাখ লাখ টাকা সংগ্রহ করেছে বেসরকারি ওই হাসপাতাল। যাদের কাছ থেকে ইনফেকশন কন্ট্রোল চার্জ হিসাবে এভাবে বেশি টাকা নেওয়া হয়েছে ৷ তাঁদের সকলকে অতিরিক্ত ওই টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য কমিশন নির্দেশ দিয়েছে বেসরকারি ওই হাসপাতালকে।
এরপর ইনফেকশন কন্ট্রোল চার্জ হিসাবে নেওয়া অতিরিক্ত ওই টাকা এই প্রৌঢ়কে ফিরিয়ে দিতে চেয়েছিল হাসপাতাল। তবে ওই প্রৌঢ় তা নেননি। কমিশনকে ওই হাসপাতাল জানিয়েছে, কম্পিউটারাইজ়ড সিস্টেমের ভুলের জন্য এভাবে অতিরিক্ত টাকা নেওয়া হয়েছে। যদিও ওই হাসপাতালের এই ধরনের যুক্তিকে মান্যতা দেয়নি কমিশন।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584