মনিরুল হক, কোচবিহারঃ
২০২১ এর বিধানসভা নির্বাচনকে পাখির চোখ করে নতুন ভাবে দলকে সাজাতে গিয়ে বারবার হোঁচট খাচ্ছে বিজেপি। একে রাজ্যের তিনটি উপনির্বাচনে ভরাডুবি হয়েছে তাঁদের। তার উপর মন্ডল কমিটি গঠন নিয়ে সারা রাজ্য জুড়ে শুরু হয়েছে দলের অন্দরে বিক্ষোভ। সব মিলিয়ে বেকায়দায় রাজ্য বিজেপি। দিন কয়েক আগে কোচবিহার জেলাকে ঢেলে সাজাতে ৪০টি মণ্ডল কমিটির মধ্যে ৩৮টি মণ্ডল কমিটির নাম ঘোষণা করে বিজেপি। বাকি দুটি গোষ্ঠী কোন্দলের জেরে ঘোষণাই করতে পারেনি তাঁরা। এই কমিটি ঘোষণার পরেই আদি এবং নব্য বিজেপির মধ্যে গোষ্ঠী কোন্দল প্রকাশ্যে আসে জেলার সর্বত্রে। ওই ঘটনার জেরে কোচবিহার জেলার বেশ কয়েকটি বিজেপির দলীয় কার্যালয়ে থাকা পতাকা, ফ্লেক্স, ব্যানার খুলে বন্ধ করে দেওয়া হয় কার্যালয়। এমতবস্তায় কোচবিহার জেলায় দ্বিতীয় বারের জন্য বিজেপির সভানেত্রী হন মালতী রাভা। তা নিয়েও দলের অন্দরে ক্ষোভ-বিক্ষোভ রয়েছে। তারই বহিঃপ্রকাশ হয় এদিন।
রবিবার দলের পুনঃনির্বাচিত জেলা সভানেত্রী মালতী রাভাকে বিজেপির জেলা কার্যালয়ে সংবর্ধনা দেওয়া হয় বিভিন্ন মণ্ডল কমিটির পক্ষ থেকে। হাসিহাসি মুখের সেই ছবিও সোশ্যাল মিডিয়া সহ বিভিন্ন হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপেও পোস্ট করা হয়। কিন্তু শুরুটা ভালো হলেও খুব কম সময়ের মধ্যেই বদলে গেল ভারতীয় জনতা পার্টির কোচবিহার জেলা কার্যালয়ের চিত্র। এরপরে ওই কার্যালয় এলাকাই রণক্ষেত্রের চেহারা নেয়। সে খবর করতে গিয়ে আক্রান্ত হয় সংবাদ মাধ্যমের এক প্রতিনিধি।
অভিযোগ, বিজেপির অভ্যন্তরীণ এই গোলমালের জেরে আক্রন্ত হয়েছে বেশ কিছু পথ চলতি সাধারণ মানুষও। বিজেপি কার্যালয়ে এধরনের গোলমালের ঘটনা এই প্রথম নয় এর আগেও একাধিক বার এই ধরনের ঘটনা ঘটেছে। নিশীথ প্রামাণিক লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী ঘোষণার দিনও একই ঘটনা ঘটে বিজেপি জেলা কার্যালয়ে। এরপরও একাধিকবার দলের গোষ্ঠী দন্দের নগ্ন চেহারা সামনে আসে। কিন্তু এবারে দলের ভিতরে বিধ্বংসী রূপ যেভাবে বাইরে বেড়িয়ে এলো তা অত্যন্ত লজ্জা জনক বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
জানা গেছে, এদিনের বিজেপির সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে একদল বিক্ষুব্ধ কর্মী দলীয় কার্যালয়ের সামনে আসতে চাইলে, ক্ষমতাশীল গোষ্ঠীর কর্মীরা তাঁদেরকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে লাঠি নিয়ে তেরে যায়। এরপর বিক্ষুব্ধরা পিছু হটে। ঘটনায় বেশ কিছু সাধারণ পথ চলতি মানুষও আক্রান্ত হয়। যাদের মধ্যে দিনহাটা নিগমনগর এলাকার মিঠুন বর্মণ নামে এক যুবক বিজেপি কর্মীদের হাতে নিগৃহীত হয় বলে অভিযোগ। একই সাথে একটি বাংলা চ্যানেলের কোচবিহার জেলার চিত্র সাংবাদিক শুভ সাহা বিজেপি কর্মীদের হাতে আক্রান্ত হয়। তার মোবাইল কেঁড়ে নিয়ে সংবাদের জন্য তোলা তথ্য মুছে ফেলা হয়।
এই বিষয়ে কোচবিহার প্রেস ক্লাবের সম্পাদক সুমন কল্যাণ ভদ্র বলেন, আজকের এই ঘটনা নিন্দনীয় অপরাধ,এই ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করে দোষীদের উপযুক্ত শাস্তির দাবি করে পুলিশের কাছে অভিযোগ জানাব।
সাংবাদিকদের সুরক্ষায় আমরা এর আগেও বিজেপি সভানেত্রীকে একটি চিঠি দিয়েছিলাম। তিনি আশ্বস্ত করেছিলেন এধরনের কোন ঘটনা কোনদিনও ঘটবে না। অথচ বিজেপি নেতৃত্বের সামনে এদিন যে ঘটনা ঘটল তা লজ্জার। আমরা তাকে ধিক্কার জানাই।
এদিনের ঘটনা প্রসঙ্গে কোচবিহার জেলার বিজেপি সম্পাদক সঞ্জয় চক্রবর্তী বলেন, বেশ কিছু বহিষ্কৃত বিজেপি কর্মী তৃণমূলের মদতে এদিন দলীয় কার্যালয় আক্রমণ করতে এসেছিল তাঁদেরকে দলের পক্ষ থেকে প্রতিরোধ করলে তাঁরা পিছু হটে। দলীয় কার্যালয়ে বিক্ষোভ বিজেপির সংস্কৃতি নয় গোটা ঘটনার সাথে তৃণমূলের যোগ রয়েছে বলে দাবি করেন সঞ্জয় বাবু।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584