শিবশংকর চ্যাটার্জ্জী,দক্ষিন দিনাজপুরঃ

দক্ষিণ দিনাজপুরের কুশমন্ডী ব্লকের করঞ্জী গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত করঞ্জী গ্রামে আজ থেকে তিনদিন ধরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে কংসবধ উৎসব।গ্রামীণ লৌকিক জীবন আবর্তিত হয় কৃষিককাজকে ভিত্তি করে। আর সফল কৃষির উপর নির্ভর করে গ্রামীণ লোকসমাজ।তাই জীবন টিকিয়ে রাখতে সফল কৃষির জন্য সমাজ নিয়েছে নানা লৌকিকতার আশ্রয়। কখনওবা তা হয়েছে নেহাতই সমাজ কেন্দ্রিক,আবার কখনওবা তা হয়েছে ধর্ম কেন্দ্রিক।

এই সমাজ ও ধর্মের মিশেল আজকের এই কংসবধ উৎসব।গোটা গ্রামে তিনদিন ধরে আরন্ধন পালিত হবার পর মাঘী পূর্ণিমা তিথিতে এই কংস রাজার থানে পূজা হয়।অব্রাহ্মণ পুরোহিত তান্ত্রিকমতে এর পূজা করেন। বিশেষ উপাচারে এর মন্ত্র পাঠ হয় যাতে অশ্লীল শব্দ থাকে। পায়রা বলি দেওয়া হয়। মূলত একটি মুক্ত জায়গায় গর্ত করে তাতে স্তরে স্তরে বাঁশ,কাঠ, পাটকাঠি সাজিয়ে ঢাক সহযোগে পূজা করা হয়।
আরও পড়ুনঃ হিন্দুমহাসভা নেত্রীকে গ্ৰেফতারের দাবিতে মেদিনীপুরে বিক্ষোভ
এরপর তান্ত্রিক পুরোহিত একটি মাটির পাত্রে সরিষার তেল রেখে তাতে পায়রা বলি দিয়ে একে একে বিভিন্ন ফসল ওতে দেন।একটি বাঁশের মধ্যে খড় জড়িয়ে তাতে আগুন লাগিয়ে চারদিকে গোল হয়ে ঢাক বাজিয়ে ঘোরার পর অগ্নিসংযোগ করা হয়।আগুন নিভে গেলে স্থানীয় মানুষ একে একে দেখেন হাঁড়ির মধ্যে রাখা বিভিন্ন ফসলের অবস্থা।যে ফসল বেশি পোড়ে লৌকিক ধারনা অনুসারে তা বপন করলে উৎপাদন ভাল হবে না কিন্তু যেগুলি তুলনামূলক কম পুড়েছে তার উৎপাদন হবে আশাব্যঞ্জক।
এরপর ঐ এলাকায় আনুষ্ঠানিক ভাবে শুরু হয় কৃষিকাজের মাধ্যমে বিভিন্ন ফসলের বীজ বপন।এই লৌকিক বিশ্বাসকে ভর করে যুগযুগ ধরে চলে এসেছে হিন্দু-মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের সম্প্রীতির উৎসব। পাশের জেলা উত্তর দিনাজপুর ছাড়াও বহু দূর থেকে জনাসমাগম হয় এই মেলাকে কেন্দ্র করে এই তিনদিন গোটা করঞ্জী গ্রামে।
পূজা কমিটির সম্পাদক নীলেশ বসাক বলেন,বাপ- ঠাকুরদার সময় থেকে চলে আসা এই উৎসবের বয়েস আনুমানিক ৩০০-৪০০ বছর হবে।ডিজিটাল দুনিয়ায়,শহর থেকে অনেক দূরে প্রাচীন এই উৎসব গোটা বঙ্গের আঞ্চলিক ইতিহাস ও লোকসংস্কৃতি ক্ষেত্রে যে একটা মাইলফলক একথা বলাই বাহুল্য!
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584