ওয়াঘার পথে জালিওয়ানাবাগে কিছুক্ষন

0
179

প্রীতম সরকার

ভারত-পাকিস্তান বর্ডার ওয়াগায় ঘুরতে যাওয়ার ইচ্ছে ছিল অনেকদিনের। কিন্তু যখন যাওয়ার সব ব্যবস্থা করেছিলাম, তখন ভারত পাকিস্তানের মাটিতে প্রথম ‘সার্জিকাল ষ্ট্রাইক’ করে দিয়েছে। কিন্তু তা বলে তো আর ঘুরতে যাওয়া বাতিল করা যায় না ! ২০১৬ সালের পূজোর অষ্টমীর সকালে বাড়ি থেকে রওনা দিয়েছিলাম বাগডোগরার উদ্দেশ্যে।

Jallianwala | newsfront.co
ছবিঃ প্রতিবেদক

পরের দিন সকালে আমাদের ফ্লাইট। কিন্তু বাগডোগরা থেকে আমাদের দিল্লি যাওয়ার বেসরকারি উড়ানে এতটাই লেট করেছিল, যে দিল্লি থেকে অমৃতসর যাওয়ার কানেক্টিং ফ্লাইট মিস হওয়ায় উপক্রম দেখা দিয়েছেল। প্লেনের অন্যান্য সহযাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছিলাম, ভুল্টা আমারি হয়েছিল। এক কোম্পনীর ফ্লাইটে টিকিট করলে সেই ফ্লাইট আমাদের জন্য দিল্লি এরারপোর্টে অপেক্ষা করতো।

Jallianwala | newsfront.co
ছবিঃ প্রতিবেদক

কিন্তু আমার পরিবারের তিনটি টিকিটই ছিল অন্য কোম্পানীর ফ্লাইটে।যাইহোক, দিল্লি যখন পৌঁছলাম, ততক্ষনে অমৃতসরের ফ্লাইট উড়ে যাওয়ার সময় হয়ে গিয়েছে। রীতিমতো দৌঁড়ে গিয়ে একপ্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে পৌঁছে শুনলাম, অমৃতসরে ফ্লাইটও লেট। এর আগে দৌড়ে ট্রেন, বাস ধরার অভিজ্ঞতা ছিল। কিন্তু দৌড়ে ফ্লাইট ধরার অভিজ্ঞতা সেবার প্রথম হলো।

Jallianwala Bagh | newsfront.co
ছবিঃ প্রতিবেদক

বিভিন্ন কাজের সূত্রে বেশ কয়েকবার দিল্লি যাওয়ার দরুন দিল্লি এয়ারপোর্টের মোটামুটি সবই চিনতাম। তবে যখন বোর্ডিং পাস নিয়ে লাউঞ্চ পেরিয়ে গেলাম, ততক্ষনে অমৃতসরের ফ্লাইটের যাত্রীদের লাইন শুরু হয়ে গিয়েছে। তবে একটা লাভ হয়েছিল, অনেক বেশি টাকা দিয়ে ফ্লাইটের যে সিট বুক করতে হয়, আমরা দেরি করায় আমাদের ভাগ্যে জুটেছিল, সেই দামী সিট গুলো। অমৃতসরের আকাশ থেকেই দেখতে পেলাম স্বর্নমন্দির।

golden temple | newsfront.co
ছবিঃ প্রতিবেদক

এয়ারপোর্টে নেমে বাইরে থেকে পোষ্ট পেইড ট্যাক্সিতে শহরের হোটেলে গিয়ে কিছুক্ষন বিশ্রাম নিয়ে নীচে নেমে দেখা পেলাম এক বাঙালী টুরিষ্ট পরিবারের। তারা জানালেন, ওয়াঘা থেকে ফিরেছেন এবং সেই দিনই প্রথম সার্জিকাল ষ্ট্রাইকের পরে প্রথম ওয়াঘার বিখ্যাত প্যারেড শুরু হয়েছে। মনটা আনন্দে নেচে উঠলো। সেই সন্ধ্যেতে আমরা গেলাম স্বর্নমন্দিরে। রাতের আলোতে স্বর্নমন্দিরের আলাদে সৌন্দর্য।

Bullet Marks | newsfront.co
ছবিঃ প্রতিবেদক

আমাদের লক্ষ্য ছিল, মুলতঃ ওয়াঘা। স্বর্নমন্দিরের বিখ্যাত লঙ্গরখানায় প্রসাদ খেয়ে হোটেলে ফিরে পরের দিন সকালে অমৃতসর শহর ঘুরে গেলাম বিখ্যাত সেই জালিওয়ানাবাগে। যেখানে একশ বছর আগে বৃটিশ সরকার নির্বিচারে গুলি করে প্রচুর ভারতীয়কে হত্যা করেছিল। সেই পুরানো বাড়িগুলো এখনও রয়েছে। রয়েছে সেই বৃটিশ সৈনিকেদের গুলির চিহ্নও। সাদা দাগ দিয়ে চিহ্নিত করা রয়েছে। রয়েছে সেই কুয়া।

Bullet Marks | newsfront.co
ছবিঃ প্রতিবেদক

আরও পড়ুনঃ থর মরুভূমিতে হঠাৎ বৃষ্টি

যেখানে বৃটিশ সৈনের গুলি থেকে প্রানে বাঁচতে পুরুষ মহলা নির্বিচারে ঝাঁপিয়ে পরেছিলেন। এই হত্যাকান্ডের পরেই তো কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বৃটিশ সরকারের দেওয়া ‘নাইট’ উপাধি ত্যাগ করেছিলেন।

Bullet Mark | newsfront.co
ছবিঃ প্রতিবেদক

জালিওয়ানাবাগের মিউজিয়ামে রাখা রয়েছে কবিগুরুর সেই চিঠির অনুলপি। ছবি দিয়ে বোঝানো হয়েছে, সেই হত্যাকান্ডের মর্মান্তিক ঘটনা। সব দেখতে দেখতে মনটা কেমন ভারী হয়ে উঠেছিল। প্রায় ঘণ্টা দেড়েক জালিওয়ানাবাগে কাটিয়ে রওনা দিলাম পাকিস্তান সীমান্ত ওয়াঘার উদ্দেশ্যে। পথে পাঞ্জাবের গ্রাম দুচোখ ভরে দেখলাম।

Jallianwala Bagh | newsfront.co
ছবিঃ প্রতিবেদক

আরও পড়ুনঃ “ জারোয়াদের দেশে ”

রাস্তায় এক ধাবার দুপুরের খাবার ‘সরষোকা সাগ’ আর ‘মকইয়ের রুটি’ খেলাম। সঙ্গে চিল্ড বিয়ার। ওয়াঘার অনেক আগেই আমাদের গাড়ি থেকে নেমে যেতে হলো। সার্জিকাল ষ্ট্রাইক হোয়ার কারনে পথে অসম্ভব রকম কড়া চেকিং হলো। প্রায় পাঁচবার চেকিং পেরিয়ে যখন দুই দেশের সোমান্তের কাছে পৌঁছলাম, তখনও সীমান্তে অনুষ্টান শুরু হয়নি।

Jallianwala Bagh | newsfront.co
ছবিঃ প্রতিবেদক
historical place | newsfront.co
ছবিঃ প্রতিবেদক

ওয়াগাঘার বিখ্যাত হলো সেখানকার প্যারেড এবং দুই দেশের সীমান্তের পতাকা নামানোর অনুষ্টান। সেসময় ভারত এবং পাকিস্তান – দুই দেশেরই সীমান্তের দরজা খুলে দেওয়া হয়। যাইহোক, অক্টোবর মাসে রোদে প্রচণ্ড কষ্ট করেই বসে রইলাম অনুষ্টান দেখার জন্য। বিকাল পাঁচটা নাগাদ শুরু হলো ভারতের সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর নাচ, গান সহ দেশাত্ববোধক নানা অনুষ্টান। আমরাও সেই অনুষ্টানে অংশ নিলাম। বেশ মজা হলো।

parade | newsfront.co
ছবিঃ প্রতিবেদক

সবশেষে শুরু হলো প্যারেড। আমাদের জাতীয় পতাকাকে কিভাবে সন্মান জানানো হয়, সেখানেই প্রথম দেখলাম। যখন দু দেশের সীমান্তের দরজা খুলে গেল, দেখতে পেলাম পাকিস্তানের অনেক লোক আমাদের মতোই ঐ দেশের অনুষ্টান দেখতে এসেছেন। পাকিস্তানের এলাকায় রয়েছে মহম্মদ জিন্নার বিশাল আকারের ছবি। নিদির্ষ্ট সময়ে দুই দেশের পতাকা নামানো হলো।

respect | newsfront.co
ছবিঃ প্রতিবেদক

দেশাত্মবোধের আবেগে কেমন আপ্লুত হয়ে গিয়েছিলাম। গলা ছেড়ে সকলের সঙ্গে চিৎকার করেছিলাম ‘বন্দেমাতারম’। রোদের গরম, কষত সবই ততক্ষনে ভুলে গিয়েছি। খুব আনন্দ করেছিলাম সেই বিকালে। যখন অনুষ্টান শেশ হলো, আবার ফিরে এসেছিলাম অমৃতসরে। পরের দিন অন্য যায়গাতে যাওয়ার কথা। হন্দি ফ্লিমের বিখ্যাত শুটিং লোকেশনে। সেকথা অন্য কখনও আবার বলা যাবে। আপাতত ওয়াঘার গল্প এখানেই শেষ করছি।

নিউজফ্রন্ট এর ফেসবুক পেজে লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here