পল্লব দাস,সাংস্কৃতিক ডেস্কঃ
ভারতে বিভিন্ন জাতি,ধর্মের মানুষের বসবাস।বিভিন্ন শিল্প সংস্কৃতি মিশ্রণ এই দেশে পরিলক্ষিত হয়। ধ্রুপদি নৃত্য ও শাস্ত্রীয় সংগীত চর্চা বহু কাল আগে থেকেই ছিল তবে ভারতে মুসলিম শাসন পৃষ্ঠপোষকতায় বেড়ে ওঠে এক শ্রেণীর মানুষ, পেশাগত নাম হয় তাওয়াইফ বা ‘বাইজী’ শ্রেণী।খুব ছোট অবস্থা থেকে ওস্তাদের কাছে নৃত্যসংগীত তালিম নেবার পর পারদর্শী হয়ে গেলে তাকে বলা হত ‘বাই’,আর সম্মান দিয়ে তারপর ‘জি’ লাগানো হত এই নিয়ে তাদের নামের শেষে বাইজি শব্দটি দেওয়া হত।
উত্তরপ্রদেশ,রাজস্থান , মহারাষ্ট্র ছাড়াও
বিভিন্ন অঞ্চলে এদের উপস্থিতি ছিল বেশি।মুঘল আমলে বাইজি দের প্রসার ঘটে।সুলতান,নবাব ,জমিদারদের অবসর সময়ে আমোদ প্রমোদ এর জন্য বসানো হতো নাচ গানের আসর,শাস্ত্রীয় নৃত্য ও সংগীতে এঁরা ছিলেন পারদর্শী,শিল্পের গুণগ্রাহীদের কাছে বাইজিরা ছিলেন সমাদৃত।খেয়াল , ঠুমরি,গজল গান গেয়ে এবং নৃত্য পরিবেশন করে গুণমুগ্ধ করে রাখতো বাইজিরা।নাচ গান করে বাইজি মহল অনেক অর্থ ও স্বর্ণ,মুক্তার অলংকার পেত।বাইজিরা যথেষ্ট বিলাস বহুল জীবন অতিবাহিত করতো বলেই জানা যায় ।
বাইজিদের নাচগান উপভোগ করার জন্য উচ্চপদস্থ রাজকর্মচারীসহ বহু বিশিষ্ট ব্যক্তি রঙমহলে আমন্ত্রিত হতো।
সাধারণ মানুষের কাছে বাইজি দেখা বা তাদের সম্পর্কে জানাটা খুব একটা সহজ ছিল না।অনেক লোকশ্রুতি গল্প আছে বাইজিদের নিয়ে যা হয়তো অনেকাংশে ভুল।এদের পরিচয় নিয়ে বিভ্রান্তির অন্ত ছিল না।সাধারণ মানুষের কাছে তাই বাইজিরা খুব একটা সম্মান পেত না কারণ অ-দেখা অনেক কিছু নিয়ে কুৎসা গল্প রটনা হতো।বাইজি হিন্দু মুসলিম দুই সম্প্রদায় এরই হতো।ইউরোপীয়দের ভাষায় নাচ গার্ল এদেশীয় ভাষায় নর্তকী।অনেক সময় তাদের পরিচয় নিয়ে কিছু বিভ্রান্তি দেখা যায়। নর্তকীরা কোনো অবস্থাতেই কসবি,রাণ্ডি, তাওয়ায়েফ,নচি বা দেবদাসী ছিলেন না বলেই জানা যায়।তারা একেবারেই ভিন্ন একটি সম্প্রদায়।সমাজের বাকি পেশা থেকে ভিন্ন এবং অন্যদৃষ্টিতেই এদের দেখা হত,তাতে সন্দেহ নেই।যদিও ইতিহাসেএদের অনেক কথা জড়িয়ে রয়েছে ।
এই শিল্পীদের মধ্যে অনেকেই সম্মানীয় ছিলেন।সংগীত নৃত্যকলায় যে অবদান আজও অক্ষয় হয়ে আছে।
ভারতের প্রথম সংগীত রেকর্ড হয় ১৯০২ সালে ২ নভেম্বর।’খেয়াল’ নামে সংগীত পরিবেশন করেন গওহর জান , যিনি বেনারস ও কলকাতার বিখ্যাত বাইজি ছিলেন।এই ঘটনার পর গোটা দেশে তার রেকর্ড গান ছড়িয়ে পড়ে।’অবধ এর বেগম ‘ নামে পরিচিত হজরত মহল প্রথম জীবনে বাইজি ছিলেন পরে অবধ এর নবান ওয়াজিদ আলী শাহ এর সাথে বিবাহ হয়।
তিনি নিজ গুনে শাসক রূপে প্রতিষ্ঠিত হন । ১৮৫৭ মহা বিদ্রোহে তিনি যোগ দেন ইংরেজ শক্তির বিরুদ্ধে।জাদ্দান বাই উনিশ দশকের আর একজন নামকরা সংগীতশিল্পী উনি জনপ্রিয় অভিনেত্রী নার্গিস দত্তের মা।প্রথম জীবনে উনি বাইজি ছিলেন,হিন্দি সিনেমায় তিনি প্রথম মহিলা সংগীত নির্দেশক রূপে আত্মপ্রকাশ করেন।
শুধু নাচমহল বা রঙ্গভূমি নয় প্রয়োজন এ দেশের কাজে নেমেছেন এই শিল্পীরা । সমাজের মূল স্রোত থেকে একটু ভিন্ন ছিলেন তবে জীবনের যুদ্ধে লড়াকু মনোভাবের কমতি ছিল না।ব্রিটিশ আমলে এই বাইজি শ্রেণীর অবস্থা কিছুটা আর্থিক দুর্গতির মুখে পড়ে,সেটা আরো খারাপ হয় দেশ ভাগের সময়।পেট চালানোর জন্য পা বাড়াতে হয় অন্য দিকে,হয়ত সেই সময়ের দাবি ছিল এটাই।এমন অনেক আছেন যাদের কথা হয়ত সবার
জানা নেই ,ইতিহাস মনে রাখলেও তথ্য গুলো সেভাবে কেউ আলোচনা করেন না।
আরও পড়ুনঃ ফের উদ্ধার অজগর মাদারিহাটে
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584