শুভব্রত সরকার, মুর্শিদাবাদঃ
ইতিহাস কথা বলে মুর্শিদাবাদের কোনায় কোনায়। সেই ইতিহাসের খোঁজে নিউজ ফ্রন্ট গিয়েছিল ঐতিহাসিক পীর মোসলেম শাহ মাজার ও মসজিদ ওয়াকফ ট্রাস্টে। যেটি বহরমপুর লালবাগ সড়কপথে সারেরধার পেরিয়ে দরগাপাড়ায় অবস্থিত।
এটি পাঁচ শতাধিক বছরের অধিক পুরোনো এক পবিত্র স্থান। ঐতিহাসিকরা বলেন, পীর মোসলেম শাহ ছিলেন সুলতানুল হিন্দ খাজা মঈনিদ্দিন চিস্তির অনুগামী একজন সুফী আউলিয়া, পঞ্চদশ শতকে এখানে আগমন করেন। কথিত আছে গৌড়ের সুলতান আবুল মোজাফর পীর সাহেবের স্মৃতির উদ্দেশ্যে ১৪০৯ খিষ্টাব্দে এই মাজার শরীফ ও উত্তর পূর্ব কোনে একটি মসজিত নির্মিত হয়, যেটি বর্তমানে জীর্ণ দশায় রয়েছে।
পরবর্তীকালে এখানে আসেন সুলতান মুহাম্মদ নামে একজন সুফী আওলিয়া। এই মাজারের দক্ষিণ দিকে একটি বাওলি নির্মাণ করা হয় ১২৩৯ হিজরী সনে এবং পশ্চিমে একটি মসজিদ নির্মিত হয় ১১৮৮ হিজরী সনে।
ইতিহাস বলে মুহাম্মদ রেজা খানের কনিষ্ঠ পুত্র বাহারামজং এখানে গড়ে তুলেছিলেন এক সমৃদ্ধ বাণিজ্য নগরী। তার নাম অনুসারে এই বাণিজ্য নগরীর নাম ছিল বহরমগঞ্জ। শোনা যায় ছিয়াত্তরের মন্বন্তরের রোষে ধ্বংস হয়ে যায় এই বাণিজ্য নগরী। সব কিছু ধ্বংস হয়ে গেলেও উত্তর পূর্ব কোনের মসজিদটি আজও ইতিহাস বহন করে চলেছে। পরবর্তীতে বিংশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে এই জঙ্গলে ঢাকা মাজারে আবির্ভাব হয় মিঠুন ফকিরের।
তিনি জঙ্গল পরিষ্কার করে মাজারের পূর্ব দিকে একাকী থাকতেন। এই সময় থেকেই এখানে জনবসতি গড়ে উঠতে থাকে। শোনা যায় তার কাছে একটি তামার পাতের দলিল ছিল যেটি ছিল কোন এক গুপ্তধনের নকশা। তবে এই মিঠুন ফকিরের মৃত্যুর সঠিক ইতিহাস আজও অজানা।
পরবর্তীকালে কলকাতা নিবাসী সফিকুদ্দীন আহমেদ মাজার ও মসজিত সংলগ্ম নিজ সম্পত্তি মাজার ও মসজিতকে দান করে যান। বর্তমানে এই মাজার ও মসজিদের সব সম্পত্তি পশ্চিমবঙ্গ ওয়াকফ কমিটির অধীনে রয়েছে। পরবর্তীকালে জনসেবামূলক কাজের জন্য পীর মোসলেম শাহ এর সৌজন্যে গড়ে তোলা হয়েছে মসনদ-এ আউলিয়া ট্রাস্ট।
আরও পড়ুনঃ করোনার জেরে বন্ধ হল পাতালেশ্বর মন্দিরের দরজা
পীর মোসলেম শাহ মাজার ও মসজিত ওয়াকফ ট্রাস্টের বর্তমান এক ব্যক্তি আলী আকবর খান নিউজ ফ্রন্টকে জানান এই মাজারের ইতিহাস। তিনি বলেন, এই মাজার সাধারণত সর্বসাধারণের জন্য খোলা থাকে প্রতিদিন। সমাজের সকল ধর্মালম্বী সকল স্তরের মানুষের জন্য খোলা এই পবিত্র স্থানের দরজা। তবে বর্তমানে করোনা বিধি মেনে বড় জমায়েত বন্ধ করা হয়েছে।
আরও পড়ুনঃ কাশিমবাজার রায় প্যালেস… ইতিহাসের এক জীবন্ত নিদর্শন
তিনি আরো জানান, এই মাজারের দানকৃত জমির কিছু পরিমান দখলকৃত অবস্থায় রয়েছে। তারা জমি উদ্ধারের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। পাশাপাশি এলাকার সার্বিক উন্নয়নের জন্য তারা একটি একটু এডুকেশনাল ট্রেনিং ইনস্টিটিটিউট গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলেও জানান। সাথে আরো জানান, আগত দর্শনার্থীদের জন্য অজুখানা, পানীয় জল, বিশ্রামাগার গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তারা এই পরিকল্পনাকে বাস্তবায়নের জন্য সরকারের সহযোগিতা চান বলে জানিয়েছেন নিউজ ফ্রন্টকে।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584