পুলিশ দেয়নি নিরাপত্তার আশ্বাস,হামলার আশঙ্কায় ঘরছাড়া তৃণমূল বিধায়ক

0
48

মনিরুল হক,কোচবিহারঃ

২০১৯ -এর লোকসভা নির্বাচনের কোচবিহার গেরুয়া ঝড়ে বিপর্যস্ত হয়ে পরে তৃণমূল। কোচবিহার লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত ৬নং সিতাই বিধানসভা কেন্দ্রটি সিতাই সিডি ব্লক এবং বড় আটিয়াবাড়ি-১, বড় আটিয়াবাড়ি-২, বড় সৌলমারি, ভেটাগুড়ি-২, গিতালদহ-১, গিতালদহ-২, গোসানিমারি-১, গোসানিমারি-২, মাতালবাড়ি, ওকরাবাড়ি এবং পেটলা, পুটিমারি-২ গ্রাম পঞ্চায়েত গুলি দিনহাটা-১ সিডি ব্লকের অন্তর্গত। যেখানে বেশির ভাগ এলাকায় ভোটের আগে বিজেপি তার সংগঠন মজবুত করেছিল। তবুও কোচবিহার লোকসভা ভোটে তৃনমূলকে সম্মান জনক অবস্থায় নিয়ে আসে এই সিতাই কেন্দ্র। নিজের ক্যারিশ্মায় গেরুয়া ঝড়েও গড় ধরে রেখেছিল সিতাই বিধানসভা কেন্দ্রর বিধায়ক জগদীশ চন্দ্র বসুনিয়া।

jagadish basuniya| newsfront.co
জগদীশ বসুনিয়া।ফাইল চিত্র

কিন্তু ২৩ মে লোকসভার ভোটের ফল প্রকাশের দিন থেকেই সিতাইয়ে সংঘর্ষ শুরু হয়।সেদিন থেকেই কার্যত এলাকা ছাড়া সিতাইয়ে তৃণমূল বিধায়ক জগদীশ বসুনিয়া। তারপর তার বাড়ি ভাঙচুর করা হয়। প্রায় এক মাসের বেশি সময় ধরে সপরিবারে ঘর ছাড়া রয়েছেন তিনি। গত বুধবার সিতাইয়ের বিধায়ক জগদীশ বসুনিয়া মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারস্থ হন। যদিও মুখ্যমন্ত্রী তাকে পুলিশি নিরাপত্তা ব্যবস্থা দেওয়ার আশ্বাস দেন। দিনের শেষ পরিস্থিতি দেখে তবে ঘরে ফিরবেন বলে ঠিক করেছেন জগদীশ বাবু।

জানা গেছে, সারাভারত ফরওয়ার্ড ব্লক ত্যাগ করে এসে তৃনমূলে যোগ দেন। তারপর ২০১৬ সালে তৃণমূলে প্রার্থী হন। ২০১৬ সালে তিনি সিতাইয়ের জয়লাভ করে ২৫ হাজারের বেশি ভোটে। তারপর থেকে তৃণমূলের একটি শক্তঘাঁটি বলে পরিচিত সিতাই বিধানসভা। এবারের লোকসভা ভোটে রাজ্য জুড়ে তৃণমূল কংগ্রেস লড়াই করে বিজেপির উত্থান হলেও কোচবিহার লোকসভা কেন্দ্রে সিতাই বিধানসভা এলাকায় তৃণমূলের দাপট ধরে রেখেছিল। ওই এলাকা থেকে তৃণমূল প্রার্থী পরেশ অধিকারী ৩৫ হাজার ভোট এগিয়ে থাকে লোকসভা নির্বাচনে।

তারপরের সিতাই বিধানসভার তৃণমূল বিধায়ক ঘর ছাড়া হয়ে থাকতে হচ্ছে কেন?

স্থানীয় মানুষের দাবী, ২০১৬ সাল থেকে জগদীশ বসুনিয়া দাপট দেখিয়ে চলেছেন। তার ফলে তৃণমূল কংগ্রেস সাধারণ কর্মীরা ক্ষিপ্ত হয় তার উপর। যেহেতু লোকে তৃণমূল দলটাকে ভালোবাসে তাই এবারের তারা প্রার্থী নয় মমতা বন্ধ্যোপাধ্যায়কে দেখে ভোট দিয়েছে। ভোটের পরে এলাকা বিভিন্ন ভাবে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটতে থাকে। বহু লোক ঘর ছাড়া হয়েছেন। তারপর সম্প্রতি পরিদর্শনে গিয়েছিলেন তৃণমূলের প্রতিনিধি দল। তাঁদের কে কার্যত সিতাইয়ে ঢুকতে দেয় নি এলাকার কিছু লোকজন। যদিও ওই প্রতিনিধি দলের সঙ্গে ছিলেন না জগদীশ বাবু। তবু সেই রাতে তার বাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে বলে অভিযোগ।

তৃণমূল কংগ্রেসের দাবি, সদ্য বিজেপিতে আসা কিছু লোকজন তার বাড়িতে হামলা চালায় বলে অভিযোগ।
এমতবস্থায় কবে সিতাই বিধানসভায় তার নিজের বাড়িতে ফিরবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন বিধায়ক জগদীশ বর্মা বসুনিয়া।

প্রায় একমাস পরে পরিস্থিতি বদল না হওয়ায় ঘরে ফেরানোর আর্জি নিয়ে বুধবার বিধানসভার মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন তিনি।

জগদীশবাবু বলেন, “লোকসভা ভোটের ফলাফল ঘোষণার পরেরদিন এসডিপিও ও সিতাই থানার ওসি আমার বাড়িতে এসেছিল। তারা আমাকে বলেন হামলা হলে আমাদের কিছু করার থাকবে না।”
পুলিশের পরামর্শে তার পরেই স্ত্রী ও ছেলেকে নিয়ে কোচবিহারে চলে আসেন বিধায়ক। তারপর আর পুলিশ-প্রশাসন তাকে বাড়ি ফেরানোর ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বলে তার অভিযোগ।

বুধবার তিনি বিধানসভায় বলেন,“অনেকবার জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি কিন্তু করছি, করবো বলেও শেষ অবধি কিছুই করা হয়নি।”

তবে দলের শীর্ষস্তর থেকে তাকে জানানো হয়েছে পুলিশের সঙ্গে পরামর্শ করে তবে ঘরে ফিরতে।

স্থানীয় বিজেপি নেতা নুর মহম্মদ প্রামাণিক অভিযোগ করে বলেন,তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় আসার পর সিতাইয়ের বিধায়ক যে ভাবে চাকরি দেওয়ার নাম করে কোটি কোটি টাকা তুলেছেন ও নানা দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন।স্বজনপোষণ ও দুর্নীতি করেছেন তাই জনরোষের কারনেই এলাকায় ঢুকতে পারছেন না জগদীশবাবু।এর সাথে বিজেপির সংযোগ নেই।

আরও পড়ুনঃ কাকদ্বীপ আদালতে ফের কর্মবিরতি আইনজীবীদের

অবশ্য এবিষয়ে সিতাই বিধানসভার তৃণমূল বিধায়ক জগদীশ বসুনিয়া বলেন, “লোকসভা ভোটে বিজেপির জয়লাভ করার পর আমার বিরুদ্ধে এসব পরিকল্পনা ভাবে রটানো হচ্ছে। আমি দুর্নীতি করলে লোকসভা নির্বাচনে আমার কেন্দ্রে এত ভোটে এগিয়ে থাকলাম কি করে। তাহলে মানুষ আমার বিধানসভা কেন্দ্রে তৃনমূলকে আশীর্বাদ করতো না।”

নিউজফ্রন্ট এর ফেসবুক পেজে লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here