পিয়া গুপ্তা,বিশেষ প্রতিবেদনঃ
সমকামীতা অপরাধ নয় প্রাচীন কাল থেকেই এই সমকামীতা ছিল বর্তমানেও আছে এবং থাকবে।আজ থেকে দেড়শো বছর আগে সমকামীতা একটি পেশা ছিল।সেই সময় এই সমকামীদের ঘেটুপুত্র বলা হত।অর্থাভাবে তারা এই পেশায় নামতো।বাংলাদেশের জনপ্রিয় সাহিত্যিক চলচ্চিত্র পরিচালক হুমায়ুন আহমদের বাংলার সমকামীদের নিয়ে শেষ পরিচালিত ছবি ‘ছিল ঘেটুপুত্র কমলা’। এই ঘেটুপুত্র কমলা” চলচ্চিত্রের মধ্য দিয়ে দেড়শত বছর আগে বাচ্চা বালকদের যে শারীরিক শোষণ চলতো তারই দৃষ্টান্ত এই চলচ্চিত্রে ফুটে উঠেছে।আজ থেকে প্রায় দেড়শত বছর আগে বাংলাদেশের ময়মনসিংহ,সিলেট ও হবিগঞ্জ জেলায় মনোরঞ্জনের জন্য এক ধরণের বিনোদনের মাধ্যম ছিল ঘেটুগান।এই সময় যখন বাংলায় কৃষকদের কাছে কোন কোনো কাজ ছিল না নিদারুণ অর্থকষ্ট ও অন্নকষ্টের সম্মুখীন হতে হতো।তখন অর্থ কষ্টের অভাবে কৃষকরা তাদের ১০ থেকে ২০ বছরের এক বা একাধিক সুন্দর সুশ্রী কিশোর বালকদের ঘেটুগানের আসরে ঢুকিয়ে দিতেন সামান্য কিছু টাকার জন্য।এই গানের দলে নদীর বুকে নৌকো নিয়ে ভাসতে ভাসতে ঘাটে ঘাটে নেমে বায়না নিয়ে নাচ দেখাত ও গান শোনাত বলেই এর নাম ‘ঘেটুগান’। ‘ঘাট’ থেকে ‘ঘেটু’। ‘ঘেটুগান’ আসলে কৃষ্ণের বিরহে রাধার গান।এই গান নেচে নেচে রাধা সেজে পরিবেশন করত কিশোরেরা।কিশোরদের রাধার মতো পোশাক, অলঙ্কার,পায়ে আলতা, চোখে কাজল ,লিপস্টিক পডিয়ে পুরো মেয়ে সাজিয়ে দেওয়া হত। অভাবী ঘরের দেখতে সুন্দর কিশোরদের সামান্য কিছু টাকা দিয়ে এ-সব দলে নেওয়া হত, তালিম দেওয়া হত নাচগানের।এই সবসময় তাদের সব সময় তাদের সাজিয়ে রাখা হত মেয়ের সাজে।এই কিশোরদের সেই সময় “ঘেটুপুত্র” বলা হতো। তখন সুদর্শন সেই তরুণকে সুন্দরী তরুণী বলেই মনে হতো।তখন তরুণীরূপী সেই বালকরা ঘেটুগানের আসরে কোমর দুলিয়ে নেচে গেয়ে মানুষকে আনন্দ দিতো।মানুষ এর বিনিময়ে তাদেরকে টাকা পয়সা দিতো। সেকালের জমিদার মানুষেরা বাড়িতে ঘেটুগানের আসর বসাতেন।রাধারূপী এই সব ঘেটুপুত্রকে মনে ধরলে,তাকে কিছুদিনের জন্য বাড়িতে রেখে দিতেন;বিশেষত পুরো বর্ষার সময়টা।এই সময়টায় ঘেটুপুত্রদের নিয়মিত শয্যাসঙ্গী হতে হতো জমিদারবাবুদের । এক সময় এটাই প্রথা হয়ে দাঁড়ায়।তখন এই প্রথার বিরুদ্ধে সমাজ কেউ আপত্তি তোলেনি। তোলবার সাহস করেনি।জমিদার বাড়ির স্ত্রীরাও এটা মেনে নেন বা মেনে নিত বাধ্য হতেন সেই সময় । ঘেটুপুত্রদের সতীনের চোখে দেখতে থাকেন এবং ‘সতীন’ বলে ডাকতেও শুরু করেন । জমিদাররা অনেক সময় এই ঘেটুপুত্র দের নিজেদের কাছেই রেখে দিতেন ষাট-সত্তর বছর আগেও এই প্রথার বেশ চল ছিল।নারী বেশধারী এই সব কিশোরদের সেই সময় নারী মনে করেই চলতো যৌন নির্যাতন।শিশুদের প্রতি যৌনসংসর্গে আগ্রহী এই সব বিত্তবান জমিদাররা কিশোরদের যৌনসঙ্গী হিসেবে পাবার জন্যে লালায়িত হতে শুরু করে।একসময় সামাজিকভাবে বিষয়টা স্বীকৃতি পেয়ে যায়। প্রাচীন এই প্রথা কেই “ঘেটুপুত্র কমলা” এই চলচ্চিত্রের মধ্যে দিয়ে ফুটিয়ে তুলেছিলেন হুমায়ুন আহমেদ।ঘেটুপুত্র’রা যে তৎকালীন সময়ে মানুষের কামনার বস্তু ছিল।টাকা থাকলে জমিদারবা বিত্তবা রা ঘেটুপুত্র রাখতো। পেটের ক্ষুধায় ১০-১২ ঘেটুপুত্র’কে তাদের মা কেঁদে কেঁদে বিদায় দিত শুধুমাত্র দারিদ্র্যের কারণে।হুমায়ুন এই ছবিটিতে ঘেটুগানের সূত্র ধরে বাঙালির সমকামিতার ইতিহাসের এই অধ্যায়টি তিনি তুলে ধরেছিলেন সেই সময়।প্রাচীন কাল থেকেই এই সমকামিতা ছিল।সময়ের ব্যবধানে এই অমানবিক কাজ বন্ধ হয়েছে।ঘেটুগান আর ঘেটুপুত্র এখন কেবলই স্মৃতি।যদিও সমাজে সমকামিতা তখন স্বীকৃত ছিল না।সুপ্রিমকোর্টের রায়ে সমকামিত এখন স্বীকৃত।সমকামিতা আর অপরাধ নয়। ভারতের সর্বোচ্চ আদালত বৃহস্পতিবার ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৭ ধারা অবৈধ বলে রায় ঘোষণা করলেন।
বহু প্রাচীন ওই ধারায় সমকামিতা অপরাধ বলে গণ্য হতো।কিন্তু বৃহস্পতিবার সুপ্রিমকোর্টের রায়ের পর প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ নারী সম্মতির ভিত্তিতে যৌন সম্পর্ক স্থাপন আর অপরাধ বলে গণ্য হবে না।কারও যৌন পছন্দ আর বিচার বিভাগের বিবেচনাযোগ্য হবে না।ব্রিটিশ আমলে সমকামিতাকে অপরাধ ঘোষণা করা হয়েছিল ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৭ নম্বর ধারায়। স্বাধীনতার পরেও থেকে গিয়েছিল সেই আইন। এই আইনের জেরে একজন সমকামীর ১০ বছরের জেল হতে পারত এতদিন।এর আগে দিল্লি হাইকোর্ট সমকামিতাকে মান্যতা দিলেও সুপ্রিমকোর্ট তা বাতিল করে দেয়। এরপরই এলজিবিটি সম্প্রদায়ের তরফে পাঁচজন বিশিষ্ট ব্যক্তি সুপ্রিমকোর্টকে বিষয়টি ফের একবার বিবেচনা করতে আবেদন জানান।পাঁচ বছর ধরে শুনানি চলার পর শেষ পর্যন্ত এলজিবিটি সম্প্রদায়ের পক্ষেই রায় দেন বিচারপতিরা। প্রধান বিচারপতি বলেছেন, সমকামিতাকে অপরাধ বলা হয়েছে বলে এলজিবিটি কমিউনিটির মানুষজন সবসময় ভয়ে ভয়ে থাকেন।কিন্তু এখন থেকে সমকামিতা আর অপরাধ বলে গণ্য করা হবে না।দুই ব্যক্তি স্বেচ্ছায় সমকামিতায় লিপ্ত হলে কারও কিছু বলার নেই।কিন্তু এগিয়ে যাওয়ার কালে পিছন দিকেও তাকানো জরুরি এই আইন বলে যেন আর এক যন্ত্রনার ইতিহাসের সূচনা না হয় সেদিকেও লক্ষ্য রাখা উচিৎ সামাজিক ভাবে।
আরো পড়ুনঃ উদ্ধার কার্যে নিষ্ক্রিয় প্রশাসন,স্থানীয়দের তৎপরতায় উদ্ধার ডুবে যাওয়া নৌকা
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584