শুভম বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতাঃ
প্রধানমন্ত্রী দেশে লকডাউন ঘোষণা করার পরেই চূড়ান্ত আতঙ্কিত সাধারণ মানুষ। রাজ্য প্রশাসন যতই বলুক যথেষ্ট খাদ্যশস্য মজুদ রয়েছে তবুও সামনের দিনে আরো পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার আশঙ্কায় নিজের বাড়িতে অতিরিক্ত খাবার মজুদ করার চেষ্টা করছেন প্রত্যেক শহরবাসী।
বুধবার সকাল হতেই শ্যামবাজার মার্কেট, মানিকতলা কোলে মার্কেট, যদুবাবুর বাজার সহ বিভিন্ন জায়গায় দেখা যায় উপচে পড়া ভিড়। একই অবস্থা ওষুধের দোকানগুলিতেও। আর এর ফলে নূন্যতম সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার চেয়ে আবেদন করা হয়েছিল কাজে তা কোন ভাবেই মানা সম্ভব হচ্ছে না বলে আক্ষেপ করেছেন অনেকে। পরিস্থিতি সামলাতে নাজেহাল হতে হয়েছে পুলিশকেও।
এদিকে মানুষের আশঙ্কা যে সম্পূর্ণ মিথ্যা নয়, কলকাতার কিছু বাজারে ঘুরে তার প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। প্রশাসনের দাবি মত যথেষ্ট পরিমাণ খাদ্যশস্য মজুত থাকলেও এই সুযোগে অনেকে কালোবাজারি শুরু করেছেন। যদিও এদিন পর্যন্ত এই নিয়ে কলকাতা পুলিশের এনফোর্সমেন্ট ব্রাঞ্চের কোনও তৎপরতা চোখে পড়েনি। এ দিন কলকাতার বাজারগুলি ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেল। লকডাউনের ৪৮ ঘন্টার মধ্যে বাজার জুড়ে শুরু হয়ে গেল অবাধ কালো বাজারি।
আরও পড়ুনঃ বাজারের ভীড় নিয়ন্ত্রণে এবার খোদ মহকুমাশাসক
একে লকডাউন তার ওপর জিনিস পত্রের চড়া দামে বিরক্ত দেখাল সাধারণ মানুষকে। সর্বত্রই মানুষের উপচে পড়া ভিড় নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য কেনাকাটার জন্য। কিন্তু বাজারে কাঁচা মালের যোগান না থাকায় খালি হাতেই ফিরতে হল অনেককে। কেউ কেউ আবার প্রযোজনীয় জিনিস কেনার জন্য এক বাজার থেকে অন্য বাজারে ঘুড়ে বেড়ালেন।
এদিন বেশিরভাগ দোকানই ছিল বন্ধ। প্রথম দিকে বাজারের গেটও বন্ধ রাখা হয়েছিল। দু’একটি দোকান খোলা ছিল। তাতে আবার উপচে পরা ভীড়। লম্বা লাইন দিয়ে মানুষকে জিনিস কিনতে হচ্ছিল। অন্যদিকে মুখ্যমন্ত্রী দ্রব্য মূল্য নিয়ন্ত্রণের কথা বললেও এদিন সব কিছুরই আকাশ ছোয়া দাম ছিল।
চালের দাম এক লাফে বেড়েছে ১০-১২ টাকা। আটাও কেজিতে প্রায় ১০ টাকা বেশি। বাজার থেকে মুড়ি, চিড়ে, ম্যাগির মত বেশ কিছু খাদ্যদ্রব্য উধাও। বাজার ঘুড়ে কোথাও পাওয়া গেল না এগুলো। রিফাইন অয়েল নিতে গিয়ে লম্বা লাইন। এদিকে বারে বারে ঘোষনা করা হচ্ছে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রাখতে। কিন্তু তা উপেক্ষা করেই ঘিঞ্জি বাজারে মানুষ গায়ে গা ঘেঁষেই দাড়িয়ে ছিল। এমনকি ওষুধের দোকানে মানুষ ধাক্কাধাক্কি করে ওষুধ কিনছেন।
কিছু কাঁচা সব্জি এ দিন বিক্রি হল ১০০ টাকা কেজিতে। মুরগির মাংস ১৯০ টাকা কেজি। মাছ প্রায় নেই বললেই চলে। যা ছিল তাও চড়া দাম। ডিমের ট্রে ১৮০ টাকাতে বিক্রি হচ্ছিল। সোয়াবিন পর্যন্ত ১২০ টাকা কেজিতে বিক্রি হল। ফলের দাম আকাশ ছোয়া।
এ বিষয়ে বাজারের দোকানিদের জিজ্ঞাসা করা হলে তারা জানান, ”আমরা আগে থেকে প্রস্তুত ছিলাম না। হঠাৎ লকডাউন ঘোষণা করায় মাল মজুদ করতে পারিনি। তাই যা মাল আছে তাই মানুষের মধ্যে ভাগ করে দিচ্ছি।” তাদের দাবি, এক সপ্তাহ আগে পণ্যবাহী গাড়ি এসেছিল। তারপর নতুন করে কোনও মাল আসেনি। প্রশাসন থেকে ব্যবস্থা না নেওয়া হলে মুখে যাই বলা হোক বাজারে খাবার এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের টান পড়বে বলেই দাবি দোকানদারদের।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584