সার্টিফিকেট অবৈধ, অনশনের পথে মালদহের জিকেসিআইইটি কলেজ

0
978

নিজস্ব সংবাদদাতা,মালদহঃ

যাদবপুর, মেডিক‌্যাল এর পর এইবার মালদা। বেশ কয়দিন ধরেই দানা বাঁধছিলো আন্দোলন। সোস‌্যাল মিডিয়ার মধ‌্যে দিয়ে বিষয়টি প্রকাশ‌্যে আসে বিষয়টি। ছাত্রছাত্রী মাধ‌্যম, হিসেবে বেছে নেয় অনশনকেই ।

নিজস্ব চিত্র

২০১০ সালে মড্যুলার প্যাটার্নে চলা ভারত বর্ষের চার নম্বর কলেজ হিসাবে তৎকালীন কেন্দ্রীয় সরকারের মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক প্রাক্তন রেল মন্ত্রী গনি খান চৌধুরীর নামে জিকেসিআইইটি নামের একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়। এবং কলেজের গঠন প্রক্রিয়া চালু করেন তারা। এরপর ২০১৩ সাল। প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং ও কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধী এসে উদ্বোধন করেন কলেজের। শুরু হয় পঠন প্রক্রিয়া। মড্যুলার প্যাটার্ন হওয়ার সুবিধার্থে মাধ্যমিক পাশের পর ভর্তি হওয়া ছাত্রছাত্রীদের ক্রমান্বয়ে প্রথমে দুই বছরের দ্বাদশ শ্রেণী, ভোকেশনাল অথবা আইটিআই এর সমতুল ডিগ্রী, দুই বছরের ডিপ্লোমা ও দুই বছরের বি টেক কোর্স পড়ানোর পর উচ্চশিক্ষার সুযোগ দেখিয়ে অল ইন্ডিয়া এন্ট্রাস টেস্টের এর মধ‌্য দিয়ে উত্তীর্ণ ছাত্রছাত্রীদের ভর্তি নেওয়া হয়। ২০১৪ সালে কলেজে আসেন ভারতবর্ষের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি।ইতোমধ‌্যেই কলেজের বেড়ে ওঠে কলেবর। নতুন বিল্ডিং উদ্বোধন করেন রাষ্ট্রপতি। সঙ্গে বিটেক কোর্সেরও উদ্বোধন করেন তিনি সেই বছরে। ২০১৬ সালে আকাশ ভেঙে বাজ পড়ে ছাত্রছাত্রীদের মাথার উপর।টেকনিক‌্যাল কোর্স শেষে পড়ুয়ারা চায় সার্টিফিকেট। চাইতে গিয়ে জানতে পারে কলেজটির কোনো অনুমোদন নেই। চোখের সামনে সর্ষেফুল দেখে পড়ুয়ারা। ভবিষ‌্যত ততদিনে গহন অন্ধকারে। পথ খুঁজতে শুরু করে আন্দোলন। ২৬দিন অনশন করে তারা।

নিজস্ব চিত্র

জাতীয় সড়ক অবরোধ, রেল ব্লকের পর ডিপ্লোমা পর্যন্ত অনুমোদন দেয় রাজ্য সরকার। বিটেক বিষয়ে অনুমোদন মিলবে দুর্গাপুরের এন আই টি থেকে এও জানায় কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক। মালদার অতিরিক্ত জেলাশাসক, রাজ্য টেকনিক্যাল কাউন্সিলের ও.এস.ডি ও কলেজ-কর্তৃপক্ষ প্রেস কনফারেন্সে ঘোষণা করেন উক্ত প্রতিশ্রুতির। রাজ্য সরকারের কথা মতো পরবর্তীতে রাজ্য টেকনিক্যাল কাউন্সিল উত্তীর্ণ ছাত্রছাত্রীদের সার্টিফিকেট প্রদান ও সার্টিফিকেট কোর্স থেকে ডিপ্লোমা কোর্সে ভর্তিও নেয়।

নিজস্ব চিত্র

কিন্তু কথা রাখেনি দুর্গাপুর এন আই টি। কর্তৃপক্ষ তার দেওয়া কথা থেকে একশো আশি ডিগ্রি ঘুরে বসেন। এবং কোনো ছাত্রছাত্রীকেই দেওয়া হয়নি সার্টিফিকেট, করা হয়নি ভর্তির ব‌্যাবস্থাও। ২০১৭ সাল নাগাদ কলেজের আধিকারিক ও GKCIET এর মেন্টর-ডিরেক্টর বি টেক কোর্সের ক্লাস ও ভর্তি প্রক্রিয়া মাঝরাস্তায় বন্ধ করে দেন। ছাত্ররা দ্বারস্থ হয় অনুমোদন এর বার্তা নিয়ে আসা মালদার অতিরিক্ত জেলাশাসকের নিকট।অতিরিক্ত জেলাশাসক ছাত্রদের কাছে দুঃখপ্রকাশ করেন। ব্যাপারটি কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের অধীন হওয়ায় তিনি এই বিষয়ে কোনো সাহায্য করতে পারবেন না বলেও সাফ জানিয়ে দেন। ছাত্রছাত্রীরা আরো একবার প্রতারিত হয়ে এক অনিশ্চিত অন্ধকার ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যায়। ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাস ডিপ্লোমা ফাইনাল ইয়ারের ছাত্রছাত্রী যাদের ফাইনাল সেমিস্টার পরীক্ষা জুন মাসে শেষ হওয়ার কথা ছিল, কলেজ কর্তৃপক্ষের গাফিলতিতে তা শেষ হয় ডিসেম্বরে। বি টেক কোর্সে অন্যত্র সুযোগ থাকা সত্ত্বেও ছাত্রছাত্রীরা বঞ্চিত হয় প্রক্রিয়ার ব‌্যাবহারিক প্রয়োগে।

নিজস্ব চিত্র

এমতাবস্থায় ছাত্রছাত্রীরা পড়াশুনা জীবনের একটা বছর বাঁচানোর উদ্দেশ্যে ও মড্যুলার প্যাটার্নের নিয়ম অনুযায়ী GKCIET’তেই ভর্তির দাবিতে আন্দোলনে নামলে আন্দোলনের কয়েকদিনের মাথায় কর্তৃপক্ষ ছাত্রছাত্রীদের লিখিত আশ্বাস দেয় যে মার্চ, ২০১৮ নাগাদ কলেজ-কর্তৃপক্ষ ম‌্যাকাউট(MAKAUT) থেকে অনুমোদন পাবে। সেই সময় ছাত্রছাত্রীদের একটি লেট সেমিস্টার কলেজ কর্তৃপক্ষ শুরু করবে। মাঝের সময়টুকু ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত হরিয়ানাতে ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করবে এমইটাই জানানো হয় পড়ুয়াদের। বিশ্বাস রাখে তারা। ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসে কলেজ-কর্তৃপক্ষ ডিপ্লোমাতে উত্তীর্ণ ছাত্রছাত্রীদের জানায় যে তারা কোনোরকম ট্রেনিং করাতে পারবে না। কেউ যদি তারপরেও ট্রেনিং করতে চায় তাহলে তাকে ট্রেনিং-খরচা বাবদ কর্তৃপক্ষকে ১৫,০০০ টাকা প্রদান করতে হবে। ২০১৮ সালের মার্চে কর্তৃপক্ষ জানায় যে GKCIET-এর অনুমোদন হয়নি..তাই তারা ছাত্রছাত্রীদের ভর্তি নিতে পারছে না।এমনকি অনুমোদন কবে মিলবে তাও কর্তৃপক্ষের অজানা। ছাত্রছাত্রীরা কর্তৃপক্ষকে সময় দেয় তবুও।
কিন্তু কর্তৃপক্ষ জুনের এক তারিখ পর্যন্ত ছাত্রছাত্রীদের বলেন যে জমিসংক্রান্ত সমস্যার জন্য কলেজের অনুমোদন হচ্ছেনা। কবে হবে তারা জানেনা। তার সঙ্গে কর্তৃপক্ষের দোলাচলে এবছরের ডিপ্লোমা ফাইনাল ইয়ারের ছাত্রছাত্রীদের সেমিস্টার’ও আগের বছরের ছাত্রছাত্রীদের সেমিস্টারের মতো দেরিতে শেষ হবে। এবং কলেজের কিছু ছাত্র বিভিন্ন সরকারি সংস্থায় সরকারি চাকরির জন্য গেলে তাদের ফিরিয়ে দেয়া হয় সার্টিফিকেট অবৈধ বলে। কারণ হিসেবে তারা বলে যে দুবছরের ডিপ্লোমা দেশের কোথাও বৈধ নয়। যতক্ষন পর্যন্ত 2বছরের ডিপ্লোমার আগে দু বছরের আই টি আই অথবা সমতুল কোর্স পাস করবে, বৈধতা তখনই।

নিজস্ব চিত্র

এইবারে ছাত্রছাত্রীরদের ভবিষ‌্যত বিশ বাঁও জলে। আরো একবার প্রতারিত হয়ে তাদের পড়াশুনার ভবিষ্যতকে অচিরেই খুন হতে হয়েছে। এবার ছাত্রছাত্রীরা চুপ থাকতে পারেনি। তারা আন্দোলনের প্রস্তুতি শুরু করে। কর্তৃপক্ষ ছাত্রদের ন্যায্য দাবি পূরণ করতে না পারলেও ছাত্রছাত্রীদের আন্দোলন থেকে সরানোর কাজে দক্ষতার সঙ্গে লেগে পড়ে। বহু ছাত্রছাত্রীকে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি, পরীক্ষায় ফেলের ভয়, বাড়িতে ফোন করানোর ভয় দেখাতে থাকে কর্তৃপক্ষ।৪ঠা জুন, ২০১৮..ছাত্রছাত্রীরা B.Tech’এর দ্বিতীয় বর্ষে ভর্তির দাবিতে কলেজের প্রধান আধিকারিক ডিরেক্টরের অফিসের সামনে ধর্ণায় বসে। ধর্ণায় বসার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই ‘দিল্লিতে আছি’ বলে দাবি করা ডিরেক্টর কলেজে আসে এবং সমস্ত শিক্ষকের সঙ্গে মিটিং ক’রে আন্দোলন তুলে নিতে প্রস্তাব দেয়। কিন্তু মানেনি ছাত্ররা। প্রতারণার ক্ষত দীর্ঘ। তাই টিকে থেকে লড়তে চাই তারা। বিরাট অন্ধকারের মুখে দেখতে চাই আশার আলো। তাই লড়তে লড়তে জয়ের মুখ দেখবার প্রত‌্যাশা নিয়ে বুক বাঁধছে তারা।

নিউজফ্রন্ট এর ফেসবুক পেজে লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here