স্ত্রীর প্রেমিক খুনের ঘটনায় ধৃত স্বামী

শ্যামল রায়, নবদ্বীপঃ

দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে পরকীয়ায় মজেছিল নবদ্বীপ রেল গেট প্রফুল্ল নগরের যুবক কালাচাঁদ ঘোষ। কিন্তু ইদানীং সম্পর্ক ছেদ করতে চাইছিল প্রেমিকা। কিন্তু নাছোড়বান্দা প্রেমিক। তাতেই যুবকে প্রাণ দিতে হল। কালাচাঁদ খুনের অভিযোগে গ্ৰেফতার করা হয়েছে কালাচাঁদের প্রেমিকার স্বামী রাজু রায়কে।

নবদ্বীপ ধাম রেল স্টেশন জিআরপি পুলিশ আধিকারিক জানিয়েছেন যে ধৃত রাজু রায়ের স্ত্রী লক্ষ্মী রায়কেও গ্রেপ্তারের জন্য বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি শুরু হয়েছে।

আরও পড়ুন: যুবকের মৃতদেহ উদ্ধার-বাবার দাবি খুন, এলাকায় কানাঘুষা পরকীয়া

প্রসঙ্গত উল্লেখ থাকে যে গত ২০ই জানুয়ারি সকালে নবদ্বীপ ধাম রেল স্টেশনের কাছে কলাবাগানের রেল লাইনের ধার থেকে এক যুবকের মৃতদেহ উদ্ধার হয়। পুলিশ তদন্ত শুরু করতে খোঁজ পায় যে প্রফুল্ল নগরের চায়ের দোকানের মালিক কালাচাঁদ ঘোষের দেহ সেটি। প্রাথমিকভাবে অনেকেই মনে করেছিল রেল দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে কালাচাঁদের।

পরে নিহতের পরিবারের লোকেরা জানতে পারেন যে ১৯ জানুয়ারি রাতে কালাচাঁদকে শেষ দেখা গিয়েছিল রাজু রায়ের বাড়িতে। মৃত যুবকের বাবা স্বপন ঘোষ ২৪শে জানুয়ারি কালনা জিআরপিকে রাজু এবং লক্ষ্মীর বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের ভিত্তিতে কালনা জিআরপি তদন্ত নামে এবং রাজুকে গ্রেফতার করে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে যে দীর্ঘদিন ধরে প্রফুল্ল নগরের ওই যুবক কালাচাঁদ, রাজু রায়ের স্ত্রী লক্ষীর সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে। সাম্প্রতিককালে প্রেমিকা লক্ষী রায়ের সঙ্গে সম্পর্কে অবনতি ঘটে। তাদের সম্পর্ককে কেন্দ্র করে বেশ কয়েকবার সালিশি সভাও বসে। কিন্তু কালাচাঁদ ঘোষ নাছোড়বান্দা ছিল।

ধৃত রাজু রায়কে পুলিশ হেফাজতে নেওয়ার পর জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ জানতে পেরেছে যে গত ১৯ জানুয়ারি কালাচাঁদ ঘোষ মদ্যপ অবস্থায় প্রেমিকা লক্ষী রায়ের বাড়িতে যায় রাত দুটো নাগাদ। লক্ষী রায়ের স্বামী রাজু রায় বাড়িতেই ছিল। রাজু রায়ের অভিযোগ কালাচাঁদ ঘোষ তার বাড়িতে এসে তার স্ত্রীর সাথে খারাপ ব্যবহার করতে শুরু করে। বাক বিতন্ডা বচসা পর শুরু হয় হাতাহাতি-মারামারি।
রাজু রায় রাজমিস্ত্রি কাজ করে । বাগবিতণ্ডার সময় সে তার বাশালী দিয়ে। বাসালীর আঘাতে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তার। তখন স্বামী স্ত্রী মিলে কালাচাঁদের দেহ রেল লাইনের ধারে ফেলে দেয় বলে পুলিশ জানতে পেরেছে। যে বাসালি দিয়ে আঘাত করা হয়েছিল কালাচাঁদকে, সেই বাসালি পুলিশ উদ্ধার করেছে রবিবার রাতে।

মৃত কালাচাঁদের বাবা স্বপন ঘোষ জানিয়েছেন যে ছেলেকে রাজু এবং তার স্ত্রী পরিকল্পনামাফিক খুন করেছে।কালনা জি আর পি তে দায়ের করা অভিযোগে নিহতের বাবা স্বপন ঘোষ জানিয়েছেন যে ১৯ জানুয়ারি রাত ন’টা নাগাদ তিনি ছেলের হাতে দোকান ছেড়ে দিয়ে বাড়ি চলে আসেন। এরপর সাড়ে ১২ টা নাগাদ রাজু এবং তার স্ত্রী লক্ষ্মী কালাচাঁদকে দোকান থেকে ডেকে নিয়ে তাদের বাড়িতে নিয়ে যায়। বাড়িতে নিয়ে গিয়ে তাকে পরিকল্পনামাফিক খুন করা হয়।

সোমবার নবদ্বীপ জিআরপি আধিকারিক গৌতম ভট্টাচার্য জানিয়েছেন যে কালাচাঁদ ঘোষকে যে ভারী জিনিস দিয়ে মাথায় আঘাত করা হয়েছিল সেই বাসালি উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়াও আরেক অভিযুক্ত লক্ষ্মী রায়েরও খোঁজ চলছে।