মোহনা বিশ্বাস, কলকাতাঃ
২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনের নিরিখে বলাগড় বিধানসভায় বেশ কয়েক হাজার ভোটে পিছিয়ে ছিল তৃণমূল। ২০২১ সালে সেই বলাগড় বিধানসভাতেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রার্থী হিসাবে মনোরঞ্জন ব্যাপারির নাম ঘোষণা করেছিলেন। প্রার্থী হওয়ার পরই তিনি মমতাকে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছিলেন। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে আগামী দিনে দলিত সমাজের হয়ে আওয়াজ তোলার জন্য যুব সমাজের মধ্যে থেকে নেতা তৈরির কাজও করতে চান বলেও জানিয়েছিলেন তিনি।
আরও বলেছিলেন, “বিধানসভার বাইরে এবং ভিতরে সেই সব বঞ্চিত শ্রেণির জন্য লড়াই চালিয়ে যাব। কোনও আপস করব না।” তৃণমূলের টিকিটে আজ তিনি বলাগড়ের বিধায়ক। কথার খেলাপ তিনি করেননি। মানুষের দুঃখে সবসময় পাশে থেকেছেন তিনি। একসময় রিক্সা চালাতেন। তারপর টোটো কেনেন। রাজনীতির ময়দানে এসেও সকলের মন জয় করে নিয়েছিলেন তিনি। এবার হতাশার সুর শোনা গেল সেই মনোরঞ্জন ব্যাপারীর গলাতেও।
সম্প্রতি নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে একটি পোস্ট করেছেন তৃণমূল বিধায়ক মনোরঞ্জন ব্যাপারী। সেই পোস্টে তিনি লিখেছেন, মানষের দুঃখকষ্ট দেখে তিনি হাঁপিয়ে যাচ্ছেন। দুর্ভাগ্যের ভাগীদার হয়ে তাঁর হৃদয় কেঁদে উঠছে। ওই ফেসবুক পোস্টে তিনি লিখেছেন, “মনে হচ্ছে রাজনীতিতে এসে আমি বোধহয় ঠিক করিনি। যখন দূরে ছিলাম, যখন তেমন ভাবে কিছু জানতাম না, খানিক সুখে ছিলাম।”
তিনি জানান, সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে বহু মানুষ তাঁর দরজায় দাঁড়িয়ে পড়ছেন। যে ভিড় রাত এগারোটা বারোটার আগে কমে না। তাদের কাতর কান্না, হাহাকার আমার বুকে যেন ধারালো চাকুর মতো চিরে চিরে বসে যায়। রক্তক্ষরণ ঘটায় প্রত্যাশা। আর সেই প্রত্যাশা পূরণে খাঁটিভাবে বদ্ধপরিকর বিধায়ক। একটা সময়ে বেঁচে থাকার জন্য কঠিন লড়াই করেছেন তিনি।
আরও পড়ুনঃ রাজ্যপালের বাজেট বক্তৃতা শেষ ৭ মিনিটে, ‘ভারত মাতা কি জয়’ স্লোগানে তুমুল হট্টগোল
অর্থের প্রয়োজনে কখনও কলকাতার মুকুন্দপুরে একটি বধির স্কুলে রান্নার কাজ করেছেন, কখনও আবার চালিয়েছেন রিকশাও, কিন্তু সেসব টানাপোড়েন অতিক্রম করে সাম্প্রতিককালের বাংলার দলিত জীবনের অন্যতম কাহিনিকার তিনি। তাই দিন আনা দিন খাওয়া পরিবারের জ্বালা যন্ত্রণা তিনি অন্তর দিয়ে উপলব্ধি করতে পারেন। সেই মনোরঞ্জন ব্যাপারীই আজ বিধায়ক। তাই চাল নুন কেনার গার্হস্থ্য অনুশাসন যাঁদের শরীরে জ্বালা ধরায়, সেই জ্বালা অনুভব করতে পারছেন খোদ বিধায়ক।
আরও পড়ুনঃ রাজ্যকেই নিতে হবে ‘ভোট পরবর্তী হিংসা’য় আক্রান্তদের চিকিৎসা ও রেশনের দায়িত্ব, কড়া নির্দেশ হাইকোর্টের
আর বিধায়ক পদে থেকেও সম্পূর্ণভাবে তাঁদের পাশে না দাঁড়ানোর ব্যর্থতা তাঁকে কুরে কুরে খাচ্ছে। এখন অনেক ক্ষেত্রেই পরিস্থিতিতে তিনি আটকে যাচ্ছেন। তাই তাঁর মনে হচ্ছে রাজনীতিতে এসে তিনি হয়ত ঠিক করেননি। রোজকার যে কষ্ট তিনি নিজে অনুভব করছেন সেই কষ্টের কথাই সোশ্যাল মিডিয়ায় তুলে ধরেছেন মনোরঞ্জন।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584