স্বপ্নকে বাস্তবে পরিণত করার আরেক নাম মহেন্দ্র সিং ধোনি

0
202

মোহনা বিশ্বাস, স্পোর্টস ডেস্কঃ

স্কুল ক্রিকেট থেকে বিশ্বকাপ, সেঞ্চুরী যাঁকে সাফল্য এনে দিয়েছিল। যিনি মাঠে নামলেই গ্যালারি থেকে দর্শকের চিৎকার শোনা যায়। হ্যাঁ, স্বপ্নকে বাস্তবের মাটিতে নিয়ে এসেছেন যে কিংবদন্তী, তিনিই হলেন মহেন্দ্র সিং ধোনি। শূণ্য থেকে শুরু করেছিলেন তাঁর ক্রিকেট জীবন। মাহি থেকে ভারতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি হয়ে ওঠার গল্পটা ছিল আর পাঁচটা সাধারণ পরিবারের ছেলের মতোই।

MS Dhoni
ছবিঃ সংগৃহীত

৭ জুলাই ১৯৮১ সালে বিহারের রাঁচিতে (অধুনা ঝাড়খণ্ড রাজ্যে অবস্থিত) জন্মগ্রহণ করেছিলেন মহেন্দ্র সিং ধোনি। তাঁদের পৈতৃক বাড়ি উত্তরাখণ্ড রাজ্যের আলমোড়া ব্লকের লাওলি গ্রামে।পান সিং যখন রাঁচির মেকন লিমিটেডে জুনিয়র ম্যানেজারের পদে চাকরি করতেন, তখনই তার পরিবার উত্তরাখণ্ড থেকে রাঁচিতে চলে আসে। ধোনির এক বোন (জয়ন্তী) রয়েছেন। ধোনী ডিএভি জহর বিদ্যা মন্দির, শ্যামলী (বর্তমান জেভিএম, শ্যামলী, রাঁচি)-তে পড়াশোনা করেছেন। বাল্যবয়স থেকে তাঁর পড়াশুনোর প্রতি বিশেষ ঝোঁক ছিল না। ফুটবল এবং ব্যাডমিন্টন খেলার প্রতি তাঁর ঝোঁক ছিল।

Mahi
ছবিঃ সংগৃহীত

কিন্তু তাঁর বাবার ইচ্ছে ছিল তাঁকে ভালোভাবে শিক্ষিত করে তোলার। স্কুলেই তিনি ব্যাডমিন্টন এবং ফুটবলে অংশ নেন এবং জেলা ও ক্লাবপর্যায়ের খেলাগুলোয় মনোনীত হন। ফুটবল খেলায় ধোনি গোলরক্ষক হিসেবে অংশ নিতেন। পরবর্তীকালে তাঁর ফুটবল কোচ স্থানীয় ক্রিকেট ক্লাবে তাঁকে ক্রিকেট খেলার জন্য পাঠায়। ব্যাট ভাল না করলেও উইকেট কিপার হিসাবে তাঁর অসামান্য দক্ষতা ছিল। যার কারণে ১৯৯৫ থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত কমান্ডো ক্রিকেট ক্লাবে উইকেট কিপারের গুরুদায়িত্ব পালন করেন। ক্লাব ক্রিকেটে তাঁর অসাধারণ দক্ষতার কারণে ১৯৯৭-৯৮ সালে অনূর্ধ্ব-১৬ চ্যাম্পিয়নশিপে ভিনু মানকড় ট্রফি জয় করেন ধোনি।

Dhoni
ছবিঃ সংগৃহীত

দশম শ্রেণি উত্তীর্ণ হওয়ার পরই ধোনি ক্রিকেটে নিজেকে মেলে ধরতে শুরু করেন। ১৯৯৮ সাল থেকে তাঁর ক্যারিয়ার জীবন শুরু হয়েছিল। শুরু হয় মাহী থেকে ধোনি হয়ে ওঠার লড়াই। ১৯৯৮ সালে সেন্ট্রাল কোল ফিল্ডস  লিমিটেড (সি.সি.এল) খেলার জন্য নির্বাচিত হন ধোনি। বিহারের ক্রিকেটের অ্যাসোসিয়েশন প্রাক্তন ভাইস প্রেসিডেন্ট দেবাল সাহে তাঁর খেলা দেখে প্রভাবিত হয়েছিলেন। তিনি প্রথম শ্রেণী ক্রিকেটে খেলার সুযোগ পেয়ে যান।

Mahendra Singh Dhoni
ছবিঃ সংগৃহীত

ধোনি মাত্র ১৮ বছর বয়সে ১৯৯৯-২০০০ সালে রঞ্জি ট্রফি ম্যাচে বিহার ক্রিকেট দলের পক্ষ থেকে মনোনীত হন। ম্যাচে আসাম ক্রিকেট দলের বিপক্ষে ৬৮ রান করেন। একই বছরে তিনি ৫ টি ক্রিকেট খেলায় ২৮৩ রান সংগ্রহ করেন। বেঙ্গল ক্রিকেট দলের বিপক্ষে ২০০০-০১ সালে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে সেঞ্চুরি করেন।

MS Dhoni
ছবিঃ সংগৃহীত

২০০১ থেকে ২০০৩-প্রায় দুই বছর ধোনি চাকরি করেছেন ‘ট্রেন টিকেট ইন্সপেক্টর (টিটিই)’ হিসেবে। তখন ধোনির পোস্টিং ছিল পশ্চিমবঙ্গের খড়গপুর রেলওয়ে স্টেশনে (দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের অধীনে)। এর এক বছর পরই জীবনে এল বড় একটা বাঁক। যে বাঁক এক ঝটকায় বদলে দিলে ধোনির পুরো জীবনকেই।

Mahi Dhoni
ছবিঃ সংগৃহীত

২০০২-০৩ সালে রঞ্জি ট্রফিতে তিনটি অর্ধ-শতক এবং দেওধর ট্রফি প্রতিযোগিতায় দু’টি অর্ধ-শতক করে হার্ড হিটিং ব্যাটিংয়ের পরিবর্তে নিচের সারির ব্যাটসম্যান হিসেবে রান করেন। ধোনি ২০০৩-০৪ সালে রঞ্জি ওডিআই ট্রফিতে আসামের বিপক্ষে প্রথম খেলায় ১২৮ রান করেন জয়ী হন। ইস্ট জোন ক্রিকেট দলের পক্ষে ৪ ম্যাচে ২৪৪ রান করে দেওধর ট্রফি জেতেন। এরপরই ধীরে ধীরে সাফল্যের মুখ দেখেন মাহী।

Mahendra Singh Dhoni
ছবিঃ সংগৃহীত

২০০৪ সালে নাইরোবিতে অনুষ্ঠিত ত্রিদেশীয় টুর্নামেন্টে ভারত ‘এ’ দলের হয়ে দুই সেঞ্চুরির পর নজর কাড়লেন নির্বাচকদের। একই বছরের ডিসেম্বরে বাংলাদেশের বিপক্ষে ওয়ানডে অভিষেক। প্রথম আলোচনায় এলেন পরের বছর বিশাখাপট্টনামে পাকিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডেতে ১২৩ বলে ১৪৮ রানের ইনিংসের পর। অর্থাৎ দু’বার সেঞ্চুরি করেন। ধোনি টুর্নামেন্টে ৭ খেলায় ৬ ইনিংসে ৭২.৪০ গড়ে ৩৬২ রান করে ভারতীয় জাতীয় দলের তৎকালীন অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় এবং রবি শাস্ত্রীর মতো ক্রিকেটারদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। কিন্তু, ভারতীয় এ দলের কোচ সন্দীপ পাতিল দীনেশ কার্তিককে ভারতীয় দলে উইকেট-রক্ষক এবং ব্যাটসম্যান হিসেবে যুক্ত হওয়ার জন্য সুপারিশ করেন।

Mahendra Singh Dhoni
ছবিঃ সংগৃহীত

২০০৭ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপের টুর্নামেন্টের আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দুটি সিরিজেই ধোনি গড়ে ১০০ এর বেশি রানের দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দেখিয়েছিলেন। তবে বিশ্বকাপের সময় তিনি খেলতে ব্যর্থ হন এবং ভারতীয় দল টুর্নামেন্টে গ্রুপ পর্যায়ে যেতে পারেনি।

World Cup
ছবিঃ সংগৃহীত

২০০৭ সালে অধিনায়ক নির্বাচিত হওয়ার পর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, ২০১১ সালে ওয়ান ডে বিশ্বকাপ, ২০১৩ সালে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জিতেছেন। টেস্ট কেরিয়ারে ৯০ ম্যাচে খেলেছেন ধোনি। ঝুলিতে রয়েছে ৪,৮৭৬ রান। তবে ওয়ান ডে ফর্ম্যাটে বেশি সফল ব্যাটসম্যান ধোনি। ৩৫০ ম্যাচে ১০,৭৭৩ রান করেছেন মহেন্দ্র সিং ধোনি। টি-টোয়েন্টি ফর্ম্যাটে ৯৮ ম্যাচে ১৬১৭ রান করেছেন। বিশ্বের অন্যতম সেরা ফিনিশার হিসেবেও মানা হয়ে থাকে ধোনিকে।

T20 World cup 2007
ছবিঃ সংগৃহীত

২০১৯ সালে সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডের কাছে হেরে ভারত বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে যাওয়ার পরই মহেন্দ্র সিং ধোনির অবসর নিয়ে জল্পনা শুরু হয় ক্রিকেট বিশ্বে। অনেকে বলেছিলেন, ইংল্যান্ড বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে কিউই-দের বিরুদ্ধেই জীবনের শেষ ম্যাচ খেলে ফেলেছেন মাহি। আবার অনেকের মনে হয়েছিল, অগাস্টের ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরেই ক্রিকেট থেকে অবসর নেবেন মাহী।

MS Dhoni
ছবিঃ সংগৃহীত

২০২০ সালের ১৫ আগস্টের সন্ধ্যা যে সেই অশনি বার্তা বয়ে আনবে তা কেউই অনুমান করতে পারেননি। এদিন ধোনি-ঢেউয়ে এলোমেলো হয়ে গেছিল ক্রিকেট-দুনিয়া। সৃজনশীল ভাবনায় ছোট্ট একটা বার্তায় মহেন্দ্র সিং ধোনি জানিয়ে দিয়েছিলেন যে, তিনি আর ভারতীয় দলের হয়ে খেলবেন না, বিদায় আন্তর্জাতিক ক্রিকেট। একবছর আগে স্বাধীনতা দিবসে নীল জার্সির দায়িত্ব থেকে ‘স্বাধীন’ হয়ে গেছিলেন ধোনি। নীল জার্সি গায়ে আর হয়তো মাঠে নামবেন না তিনি কিন্তু এখনও ক্রিকেট থেকে সরে দাঁড়াতে পারেননি মাহি। নিজের প্রথম প্রেমকে জিইয়ে রাখতে আইপিএল এর মাধ্যমে নিজেকে ২২ গজে বাঁচিয়ে রেখেছেন মাহী। তিনি জানেন ক্রিকেট শূন্য থাকলে তার ভক্তরা সেটা মেনে নেবে না।

T20 World cup 2007
ছবিঃ সংগৃহীত

ধোনির ১৫ বছরের এক রঙিন যাত্রায় দেখিয়েছেন, তিনি প্রথাগত পথে হাঁটেন না। ব্যাকরণ মেনে চলেন না। তিনি চলেন নিজের তৈরি সূত্র মেনে। কখনো কখনো ব্যর্থ হলেও বড় মঞ্চে ঠিকই দেখিয়েছেন সেই সূত্রের কার্যকারিতা। এ পথে হেঁটেই ২০০৭-এ ভারতকে জিতিয়েছেন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। তাঁর নেতৃত্বেই ২৮ বছর পর বিশ্বকাপ জিতেছে ভারত। টি-টোয়েন্টি ও ৫০ ওভার-দুটি বিশ্বকাপ জয়ের গৌরব একমাত্র ধোনিই গায়ে মেখেছেন। ক্রিকেট ইতিহাসের একমাত্র অধিনায়ক হিসেবে আইসিসির তিনটি টুর্নামেন্ট জেতার অনন্য রেকর্ড তাঁর অধিকারে। ভারতকে সবচেয়ে বেশি ২৭টি টেস্টও জিতিয়েছেন তিনি। ‘ক্যাপ্টেন কুল’ তকমাটা তাঁর নামে এমনি এমনি জুড়ে দেওয়া হয়নি।

MS Dhoni
ছবিঃ সংগৃহীত

মহেন্দ্র সিং ধোনি একটি বইয়ের নাম, যার প্রত্যেকটা পাতায় লেখা রয়েছে বিহারের ছোট্ট গ্রাম থেকে লাইমলাইটে উঠে আসার গল্প। আজকের দিনে ৪০-এ পা রাখলেন মাহী। সকাল থেকেই চলছে সেলিব্রেশন। প্রিয় অধিনায়কের জন্মদিন কী করে চুপ থাকতে পারে সোশ্যাল মিডিয়া। আর সেই কারেণেই ৭ জুলাই সকাল থেকেই শুভেচ্ছা বার্তায় উপচে পরছে টুইটার। ৪০-এ পা রেখেছেন মহেন্দ্র সিং ধোনি। প্রতি মুহূর্তে ধোনিকে শুভেচ্ছা বার্তা পাঠাচ্ছেন তাঁর প্রিয়জনেরা।

Mahi Ziva Dhoni
ছবিঃ সংগৃহীত

সেই তালিকায় রয়েছেন রায়না থেকে মাহির নিজের ক্লাব চেন্নাই সুপার কিংস। বিসিসিআই-এর তরফ থেকেও প্রাক্তন ভারত অধিনায়ককে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানানো হয়েছে। ভক্তরাও ধোনির বিভিন্ন পোস্টার তৈরি করেছেন। কেউ কেউ পুরানো ছক্কা হাঁকনোর ভিডিও পোস্ট করছেন। সকাল থেকেই ভক্তকূলের শুভেচ্ছা বার্তায় উচ্ছ্বসিত ধোনি।

নিউজফ্রন্ট এর ফেসবুক পেজে লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here