শরীয়তুল্লাহ সোহন, ওয়েব ডেস্কঃ
আমাদের দেশের তুলনায় যথেষ্ট গরম ওয়েদার দুবাই-এর। কিন্তু যাবতীয় গরমকে ছাপিয়ে চারিদিকে শুধুই ছড়িয়ে পড়েছে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের উষ্ণতা। গতকাল শুরু হয়েছে বিশ্বকাপের মূল পর্বের জমজমাট লড়াই। দিনের খেলায় লো স্কোরিং ম্যাচে স্নায়ুর চাপ বজায় রেখে জয়ের বন্দরে পৌঁছেছে অস্ট্রেলিয়া। অন্যদিকে রাতের ম্যাচে গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে ম্যাচে হারের মধুর প্রতিশোধ নিয়েছে ইংল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। তাদেরকে মাত্র ৫৫ রানে অল আউট করেছে ইংল্যান্ড। তবে এত কিছু রোমাঞ্চ থ্রিলার চাপা পড়ে গেছে মরুর বুকে। কারণ যাবতীয় রোমাঞ্চ আজকের ভারত-পাকিস্তান এর ম্যাচ ঘিরে। আজ ভারতীয় সময় সন্ধে ৭.৩০ মিনিটে দুবাই ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামে বহু প্রতীক্ষিত রোমাঞ্চঘন মুহুর্ত উপস্থিত হবে।
তবে এই লড়াই এর রোমাঞ্চ শুধু দু-দেশের দর্শকের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না। দু-দেশের গন্ডি পেরিয়ে ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বের প্রতিটি ক্রিকেট পাগল ভক্তদের মাঝে। এই ম্যাচ শুধু একটি নিছকই ম্যাচ নয়, এর প্রভাব সদূরপ্রসারী। কারণ এই ম্যাচের লড়াই শুধু খেলার মধ্যে আবদ্ধ থাকেনা ছড়িয়ে পড়ে মাঠের বাইরে দু-দেশের রাজনীতি ও সমাজ নীতির মাঝেও। তাই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সূচী ঘোষণার পর থেকেই অনেকে ২৪ তারিখটিকে গোল দাগ দিয়ে ঘিরে রেখেছেন। দুই দেশের মিডিয়ার স্টেটমেন্ট গুলো পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে মাঠের বাইরে এক প্রকার তাত্ত্বিক লড়াই শুরু হয়ে গেছে বহু আগে। কারণ দুই দেশের খেলোয়াড় থেকে শুরু করে সাধারণ দর্শক পর্যন্ত কেউ চাই না নিজেদের দেশ হারুক।
দর্শকদের উন্মাদনা দেখে মনে হচ্ছে, এ যেন ফাইনালের আগে মেগা ফাইনাল মরুর বুকে। হয়ত রাজনৈতিক বৈরিতার কারণে বহু বছর থেকে ভারত-পাকিস্তান এর মাঝে দ্বিপাক্ষিক সিরিজ বন্ধ। তবুও দুই দেশের মধ্যে সংঘটিত ম্যাচ নিয়ে এতটুকুও উন্মাদনা কমেনি ক্রিকেট প্রেমীদের মনে।
এজন্য হয়ত বহু ক্রিকেট বিশেষজ্ঞ মনে করেন, “আবারও ইন্দো-পাক সিরিজ চালু হলে, অ্যাশেজ এর চেয়ে বেশি চর্চিত ও জনপ্রিয় সিরিজ হবে।” আর কথাটি সম্পূর্ণ যুক্তিযুক্ত কারণ, ভারত-পাক ক্রিকেট দ্বৈরথ বিশ্ববাসীর মাঝে তুলে ধরার জন্য এক জন জার্মান সাংবাদিক ২০০৪ সালে সদূর জার্মানি থেকে ছুটে আসেন পাকিস্থানে। তখন ভারতীয় দল পাকিস্তান সফরে ছিলেন।
অথচও দু-দেশের বিশ্বকাপের মঞ্চে লড়াই দেখলে ২০০৭ সালের ফাইনালের লড়াই এবং ২০০৩ সালের লড়াই বাদে বাকি গুলো পাতে তোলার মতো নয়। কারণ বাকি ম্যাচগুলোতে পাকিস্তান কোনরকম প্রতিরোধ ছাড়াই একতরফা হেরেছে। এখন পর্যন্ত ভারত ওয়ানডে বিশ্বকাপে ৭ বার এবং টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ৫ বার , সব মিলিয়ে ১২ বার মুখোমুখি হয়েছে। ফলাফল ১২-০, অর্থাৎ সব বারই ভারত জিতেছে।
আরও পড়ুনঃ সহজ ম্যাচ কঠিন করে জিতল অস্ট্রেলিয়া
তবুও দুই দলই বহু সতর্ক। কারণ ক্রিকেট অনিশ্চয়তার খেলা। এখানে সব সম্ভব। তাই দুই দেশের খেলোয়াড়রা যাবতীয় অতীত ভুলে সমস্ত ফোকাস দিয়েছেন আজকের ম্যাচে। আর সেকথা স্পষ্ট দুই দলের অধিনায়ক কথায়। কারণ বিরাট কোহলিকে এবিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “আমরা কখনই অতীতের রেকর্ড নৈপুণ্য নিয়ে ভাবি না, কারণ এই সব নিয়ে ভাবলে আমাদের সামনের ম্যাচের যাবতীয় ফোকাস নড়ে যায়। মূল বিষয় হল আমরা কিভাবে প্রস্তুতি নিলাম এবং প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে মাঠে কতটুকু দিতে পারলাম এটাই আসল ব্যাপার।” এছাড়াও তিনি জানান, “আমি মনে করি পাকিস্তান একটি শক্তিশালী দল, তাদের দলে কোন সময়েই প্রতিভার অভাব থাকে না। তাই বিরুদ্ধে আমাদের সেরাটা দিয়ে লড়াই করতে হবে।” অন্যদিকে পাক অধিনায়ক বাবর আজম বলেন, “অতীত এখন অতীত, আগে আমরা কয়টা ম্যাচ হেরেছি সেটা নিয়ে ভাবছি না, তবে আমরা এই ম্যাচ জিতবো এই নিয়ে পুরোপুরি আশাবাদী। ”
আরও পড়ুনঃ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সহজ জয় পেল ইংল্যান্ড
তবে লড়াই যাই হোক, দুই দলই তরুন ও অভিজ্ঞ দের মিশিলে যথেষ্ট শক্তিশালী। তাছাড়া দুই দলের কাছে দুবাই এর মাঠ খুব পরিচিত। কারণ দীর্ঘদিন ধরে আইপিএল খেলে ভারতীয় দল এই পরিবেশের কন্ডিশনের সাথে ভালোই মানিয়ে নিয়েছে। অন্যদিকে ২০০৯ সালে শ্রীলঙ্কার টিম বাসে জঙ্গি হামলার পর থেকে দেশের মাটিতে নির্বাসিত ছিল পাকিস্তান। কারণ ঐ ঘটনার পর কোন দেশ আর পাকিস্তান সফর করেনি। তাই তারা আরব আমিরাত এবং দুবাই এর মাঠকে নিজেদের হোম গ্রাউন্ড ভেবে খেলে আসছে। তাই ক্রিকেট বিশেষজ্ঞদের ধারণা, “দুই দলের আসল লড়াই হবে ব্যাটে-বলে আর সাথে থাকবে স্নায়ুর চাপ।” আর সবকিছু ছাপিয়ে ম্যাচ শেষে যুক্ত হবে ভারত-পাকিস্তান মহারণের ফল। হয় ১৩-০ নতুবা ১২-১, বাকিটা বলবে ম্যাচের ফলাফল…
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584