নীল চাষের অত্যাচারী স্মৃতি বুকে নিয়ে উদাসী রাঙামাটি

0
699

পল্লব দাস,বহরমপুরঃ

রাঙামাটিতে নীলচাষ
ভারতীয় উপমহাদেশের মাটি ছিল নীল চাষের জন্য আদর্শ।হুগলির চন্দননগরের কাছে তালডাঙ্গা ও গোন্দোলপাড়ায় প্রথম নীলকুঠি তৈরি করেন জনৈক একজন ফরাসি।১৭৭৯ সালে ইস্টইন্ডিয়া কোম্পানি নীল চাষ শুরু করে।
ঊনবিংশ শতকে ইংল্যান্ডের শিল্প বিপ্লবের সময় নীল চাষের রমরমা বাড়তে থাকে।চলতে
থাকে উৎপীড়ন নীল চাষীদের ওপর।দাদন দিয়ে বিভিন্ন লিখিত প্রস্তাবে টিপ ছাপ দিয়ে আত্মসাৎ করা হতো জমি ঘর।অত্যাচারের মাত্রা এতটাই ছিল যে নীল চাষিরা বিদ্রোহ করে ১৮৫৯-৬০ খ্রিস্টাব্দে।বাংলায় প্রায় এক শতাব্দী নীল চাষ হয় আর চলে অত্যাচার।বলা হতো প্রত্যেক
নীলকুঠীতে একটি কয়েদখানা থাকতো,যেখানে
বেঁধে আটকে রেখে অত্যাচার করতো নীলকর সাহেবরা।যেসব স্থানে নীলের কারখানা স্থাপিত হয়েছিল তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য নদীয়া,মুর্শিদাবাদ,যশোর,বাঁকুড়া,বীরভূম,হাওড়া মেদিনীপুর,খুলনা,ঢাকা,ফরিদপুর,বর্ধমান।

নিজস্ব চিত্র

মুর্শিদাবাদ জেলার অন্যতম প্রধান নীলকর ছিলেন জেমস হিল। বহরমপুর থেকে অনতি দূরত্বে রয়েছে রাঙামাটি চাঁদপাড়া অঞ্চল সেখানে আজও দাঁড়িয়ে আছে নীল জাল দেবার জায়গা ও ধোঁয়া চিমনি।রক্ষনাবেক্ষনের অভাবে সেটা প্রায় ধ্বংস প্রাপ্ত হতে চলেছে।এখানে বিস্তীর্ণ জমি গুলিতে নীল চাষ হতো জানা গেল এক স্থানীয় বৃদ্ধের কাছ থেকে ,তিনি জানান তাঁর বাবা
ছিলেন চাষী,নীল চাষের জন্য পয়সা দেওয়া হতো এমন কি সাহেবরা প্রায় যাতায়াত করতো এই অঞ্চলে।নীল চাষের জন্য সর্বসান্ত হয় অনেক চাষী পরিবার।নারীর অবমাননা,অপহরণ,জুলুম ইত্যাদি অভিযোগ ছিল নীলকর সাহেবদের বিরুদ্ধে।হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় তাঁর ‘দি হিন্দু পেট্রিয়ট’ পত্রিকায় গরীব নিপীড়িত কৃষকদের কথা তুলে ধরতেন।নীলদর্পণ নাটকে সেই সময়ের প্রেক্ষাপটের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ দেন দীনবন্ধু মিত্র।

নিজস্ব চিত্র

মধূসুধন দত্ত নীলদর্পণ ইংরেজিতে অনুবাদ করেন,প্রকাশ করেন রেভারেন্ট জেমস লঙ। ১৮৬০ সালে এই নাটক প্রকাশ হওয়ার পর সাড়া ফেলে বিদগ্ধ মহলে।ব্রিটিশদের জন্য অশনি সংকেত বয়ে আনে এই নাটক। ব্রিটিশ পার্লামেন্টে নীলকরদের অত্যাচারের নগ্ন চিত্র প্রকাশিত হয়। সমালোচনার ঝড় ওঠে গোটা রাষ্ট্রে।প্রতিক্রিয়া স্বরূপ জেমস লঙকে টেনে আনা হয় আদালতে জরিমানা করা হয় এবং একমাস কারাবাস দেওয়া হয়। হরিশ্চন্দ্র মুখোপাধ্যায় এর নামেও মামলা চলতে থাকে তবে তা চলাকালীন তাঁর অকাল মৃত্যু হয়।নীল চাষের বিরুদ্ধে প্রথমে অহিংস ভাবে আন্দোলন শুরু হলেও পরবর্তীতে তা সশস্ত্র আন্দোলনের রূপ নেয়।নদীয়ার দিগম্বর বিশ্বাস,মালদায় রফিক মন্ডল নেতৃত্বে চলে আন্দোলন আর নীলকর দের ত্রাস ছিল বিশ্বনাথ সর্দার।নীলবিদ্রোহকে কেন্দ্র করে বেশ কিছু কবিতা, গান,ছড়া তৈরি হয়েছিল ।

নিজস্ব চিত্র

মুর্শিদাবাদের নীলকর সাহেব জেমস হিলকে নিয়ে ছড়া হলো-

জমিনের শত্রু নীল
কর্মের শত্রু ঢিল
তেমনি জাতের শত্রু পাদ্রী হিল।
লঙ সাহেবের কারাবাস ও হরিশ্চন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের আকস্মিক মৃত্যুর পর বাউল কবিরা গান বাঁধে ———

নীল বানরে সোনার বাংলা
করলে এবার ছারখার,
অসময়ে হরিশ মলো
লঙ এর হ’লো কারাগার।
প্রজা আর প্রাণ বাঁচানো ভার।
শতাব্দী পেরিয়ে এসেছে নীল চাষীদের যন্ত্রণার কথা আজ অনেকটাই ইতিহাস পৃষ্ঠায় আবদ্ধ হয়ে গেছে।তবে তখনকার জীবনযাত্রা কে আজও আমাদের কাছে স্মৃতি করে রাখে অমূল্য কিছু সাহিত্য,গান ও ছড়া ।

আরো পড়ুনঃ কোচবিহারের কোটার গম যাচ্ছে শিলিগুড়িতে, কর্মবিরতি এফসিআইয়ে

নিউজফ্রন্ট এর ফেসবুক পেজে লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here