নিজস্ব সংবাদদাতা, বিনোদন ডেস্কঃ
এস এম ডি এন্টারটেইনমেন্টের প্রযোজনায় ঝাড়গ্রামের জঙ্গলমহলের বিভিন্ন এলাকায় শুরু হয়েছে এই সময়ের জনপ্রিয় তরুণ লেখক রাধামাধব মণ্ডলের “রেড স্টারের ক্যাম্প” গল্প অবলম্বনে তৈরি নতুন বাংলা ছবি ‘ইস্কাবন’।
রেডস্টারদের ডেরা-জীবন আর তাদের ঘিরে উত্তাল রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে একটি সুপ্ত মিষ্টি প্রেম, গোটা ছবিকে ঘিরে হাঁটবে। গল্পের ফ্রেমে হাঁটবে মানুষও। জঙ্গলের ডেরাজীবন আর তার সরজমিন ইতিহাস এবং হিংস্রতার নানান কাহিনী চিত্রিত গল্পের ছবিটিতে। মূল গল্পের ছায়াকে এখানে অবলম্বন করা হয়েছে। মূল গল্পের লেখক রাধামাধব মণ্ডল বলেন,”সাংবাদিকতার দৌলতে বার বার কিষাণ জি-র সঙ্গে কথা বলেছি সে সময়। তাঁরা তাদের আদর্শ থেকে অনেকখানি সরে গিয়েছিলেন কি? জানা নেই! সে তাত্ত্বিক লড়াই। তবে আমি গল্পে সে সব বলিনি। রেডস্টারেদের জীবনেও ভোগ, বিলাসিতার জায়গা তৈরি হয়েছিল ক্ষমতার দম্ভ থেকে। তারাও কমরেড নেতাকে সর্দার রূপে পুজো করতো শুরু করেন। নারীর নিয়ে লড়াইএও মাতে। আর সেখান থেকেই ক্ষমতা, আমিত্ব আর অহমিকার জন্ম হয়েছে। মূলগল্পের ভাবে নরেনজি, সত্যরা হেঁটেছে ছবিতে। ভাই তরুণ অভিনেতা সঞ্জু, আর পরিচালক মন্দীপ সাহার এই প্রথম কাজ কোভিড পরিস্থিতি কাটিয়ে হলমুখী করুক মানুষকে। আবার হইহই করে সক্কলে আমাদের ছবি দেখুন।”
ছবিটির শুরুর জন্ম ইতিহাসের অনেকখানি জুড়ে রয়েছে দুই জঙ্গলের প্রেমবাজি।
প্রথম জঙ্গলটি পূর্ব বর্ধমানের জঙ্গলমহলের প্রাণকেন্দ্র আউশগ্রাম। আর অপরটি পশ্চিম বঙ্গের রাজনৈতিক ইতিহাসের রক্তাক্ত সংগ্রামের জঙ্গলমহল ঝাড়গ্রাম। একটি জঙ্গলের সঙ্গে জড়িয়েছে ছবির নির্মাণ আর অপরটির সঙ্গে জড়িয়ে গেছে ছবির জন্মের গৌরবগাঁথা।
আউশগ্রামের জঙ্গলমহলের ভূমিপুত্র সেখ আব্দুল লালন, তিনি একজন সুদক্ষ ব্যবসায়ী। শুটিং স্পর্টে এনেছেন নিজের “এস এম ডি” কোম্পানিকে। বাংলা সিনেমাকে একটি তৃতীয় চিন্তারাজ্যে পৌঁছে দিতেই তাঁর এই প্রযোজক হয়ে ওঠার জার্নি। জনদরদী, দাতা লালন ইতিমধ্যেই রাজ্যের একজন সুপরিচিত উন্নয়ণ কামী মুখ। সারা বছরই তিনি আদিবাসী, গরীব গুর্ব মানুষের পাশে দাঁড়ান, মন্দির, মসজিদ, গির্জাও বানিয়ে দিয়েছেন অনেক জেলায়। একটি অনুন্নত গ্রামীণ এলাকায় সাড়ে তিন হাজার মানুষের জীবন জীবিকার তিনিই মাধ্যম। তিনি এবার ছবির দুনিয়াতে, নিজস্বী চিন্তার আবহে। কারণটা তিনিই বললেন নিজের মুখে, “এটি একটি বড় মাধ্যম, মানুষের কাছে পৌঁছানোর। এই মঞ্চে বহু মানুষের কাছাকাছি হওয়া যায়, সে সুযোগ ঘটে। ফলে এই জনপ্রিয় মাধ্যমে কাজ করতে করতে আরও বহু মানুষের খোঁজ নেওয়াই আমার ইচ্ছা।” মানুষের জন্যই তিনি তাঁর প্রথম ছবিতে এমন গল্পকে বেছে নিয়েছেন। শুধু তাই নয়, মানুষের সত্যিকারের জীবনের কাছাকাছি পৌঁছাতে ছবির নির্মাণের জন্য ঝাড়গ্রামের জঙ্গলমহলের প্রত্যন্ত আদিবাসী প্রধান গ্রাম গুলোকে বেছে নিয়েছেন। তিনি কাজও শুরু করেছেন একজন তরুণ দক্ষ, শক্তিশালী পরিচালক মন্দীপ সাহাকে সঙ্গে নিয়েই। এস এম ডি- র প্রথম “ইস্কাবন ” বাংলা ছবিতে পরিচালক মন্দীপ সাহা। তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেন “এই ছবিতে আমাদের মধ্যমণি নায়ক শিব চরিত্র। আর সেই চরিত্রে অভিনয় করছেন, নবাগত তরুণ অভিনেতা সঞ্জু। তাঁকে ঘিরেই গল্পের বুনন এঁকেছেন আমাদের প্রিয় সাহিত্যিক রাধামাধবদা। যা আগামীর জয়কে এনে দেবে, এই বিশ্বাসেই দৌড় শুরু করেছি আমরা। আরও প্রচুর চমক রয়েছে ছবিটিতে। আগামীতে সব জানানো হবে।”
গত বুধবার ঝাড়গ্রামের বেলপাহাড়ি ব্লকের চিরুগড়া, কাঁকড়াঝোড়, ঢাঙ্গিকুসুম, তারাফণি ব্যরেজ, ঘাগড়া, খাদারাণী, লালজল, আমলাশোলে শুরু হয়েছে শুটিং। ছবিতে নায়িকার ভূমিকায় অভিনয় করছেন অনামিক চক্রবর্তী। নতুন বৌএর সাজে তাকেও দেখাচ্ছে বেশ। রয়েছেন নতুন লুকে এই সময়ের অভিনেতা সৌরভ দাস, সুমিত গাঙ্গুলী, অভিনেতা খরাজ মুখার্জীরা। রয়েছেন অভিনেতা অরিন্দম গাঙ্গুলী, পুষ্পিতা মুখোপাধ্যায়, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যরা। একটি বিশেষ চরিত্রে রয়েছেন অভিনেতা দুলাল লাহিড়ী।
আরও পড়ুনঃ বলিউডের পাপনের সঙ্গে গলা মেলালেন ওপারের তামান্না প্রমি
এছাড়াও ছবিতে নেপথ্য সংগীতে রয়েছেন নচিকেতা চক্রবর্তী, অন্নেষা দাশগুপ্ত এবং রূপঙ্কর বাগচি। ছবির সংগীত ও আবহে অনিন্দ্য মুখোপাধ্যায়। ছবি নির্মাণে লেন্স এ চোখ রাখছেন, মাটির চিত্রী ঈশ্বর বারিক। রং ও রূপে আজাদ আহমেদ। তবে শুটিং এর স্পর্ট চিত্রিত করছেন গুণী শিল্পী উদ্মাদ ঢালি।
অতীতে মাওবাদী ডেরা এখন আদর্শ গ্রাম। আর সেই জঙ্গলমহলকে ঘিরেই ছবির শুটিং।
আরও পড়ুনঃ ‘শারদ সুন্দরী ২০২০’-র গ্র্যান্ড ফিনালে সম্পন্ন
তবে নতুন এই বাংলা মেগামুভির শুটিং এর ফ্লোরে উপস্থিত রয়েছেন প্রদীপ মিস্ত্রি। অ্যাসিস্ট্যান্ট পরিচালকের কাজ করছেন “সুন্দরবনের গপ্পো”র ডিরেক্টর। তিনিও আশাবাদী, টিম “ইস্কাবন” ছবির সাফল্য নিয়ে। তার বক্তব্যে তিনি বলেন, “ক্যাম্প জীবনের অনুশাসন নিয়েই এছবি। তবে পরিচিত অভিনেতাদের এখানে চেনাছক ভাঙ্গিয়ে অভিনয় করিয়েছেন ভাই পরিচালক মন্দীপ সাহা। রাধামাধব মণ্ডলের গল্পে এমাটির গন্ধ আছে। তাই এ ছবি বাংলা সিনেমার নতুন মাইলস্টোন হবে, আশারাখি।”
১৫ দিনের আউটডোর শুটিং এর চতুর্থ দিনেও রাতদিন মিলিয়ে চললো, দৃশ্যপট তৈরি করে শুটিং। একদিকে মাও ক্যাম্প অন্যদিকে জটিল রাজনীতির শাসক। আছে পুলিশ, মিলিটারি ক্যাম্পের নানান গল্প অনুষঙ্গ। আর এলাকার মানুষ ভেঙে পড়ছে শুটিং দেখতে জঙ্গলের গ্রাম গুলোতে। গ্রাম থেকে দলেদলে মানুষ এসে দাঁড়াচ্ছে নবাগত নায়ক সঞ্জু কে দেখতে। কেউ আবার লাজুকলতার মতো চোখ তুলে এসে দাঁড়াচ্ছে, একটি শেলফি তুলতে নায়কের পাশে। কেউ দেখছে তাদের ২০০৮ সালের পুরোনো ছবি! স্মৃতি ফিরে আসছে যেন।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584