শুভম বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতাঃ
হেমতাবাদের বিজেপি বিধায়কের মৃত্যুতে রাজ্য পুলিশ তদন্ত করলে তা নিরপেক্ষ হবে না, এমন দাবি করে প্রথম থেকেই সিবিআই তদন্তের দাবি জানিয়ে আসছে বিজেপি। কিন্তু বিজেপির সেই আশাকে অমূলক দাবি করে ঘটনায় সর্বোচ্চ স্তরের স্বচ্ছতা এবং নিরপেক্ষতা বজায় রেখেই সিআইডিকে দিয়ে ঘটনার তদন্ত করা হচ্ছে বলে জানালেন স্বরাষ্ট্রসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়।
মঙ্গলবার নবান্ন থেকে তিনি আরও দাবি করেন, ঘটনার তদন্তে কোনও রকম রাজনৈতিক প্রভাব পড়বে না। ইতিমধ্যেই সুইসাইড নোটে নাম থাকায় নিলয় সিংহ ও মাবুদা আলি নামে দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।এদিকে মঙ্গলবার সকালেই প্রকাশ্যে এসেছে হেমতাবাদের মৃত বিজেপি বিধায়ক দেবেন্দ্রনাথ রায়ের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট।
সেখানে ওই বিজেপি বিধায়ক আত্মহত্যা করেছেন, এমন তত্ত্বের ওপরেই জোর দেওয়া হয়েছে। তবে তাঁর হাতে ক্ষতচিহ্ন এবং ঘাড়ে কালশিটের কথাও জানান স্বরাষ্ট্রসচিব। আর এই মন্তব্যেই বেড়েছে জল্পনা। পরবর্তী তথ্য পাওয়া যাবে কেমিক্যাল পরীক্ষার পর। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট, প্রাসঙ্গিক অন্যান্য বিষয় এবং বিভিন্ন প্রমাণের ভিত্তিতে পুলিসের প্রাথমিক অনুমান ঘটনাটি সম্ভবত আত্মহত্যা।
আরও পড়ুনঃ বিধায়কের মৃত্যুর কারন ‘অ্যান্টি মর্টেম ইন নেচার’, মানতে নারাজ বিজেপি
স্বরাষ্ট্রসচিব আরও বলেন, “প্রয়াত বিধায়কের পকেটে একটি নোট পাওয়া গিয়েছে। যেখানে তাঁর নিজের হাতে লেখা কিছু তথ্য, দুটি ছবি এবং দুটি ফোন নম্বর পাওয়া গিয়েছে। সেই সঙ্গে ওই দুই ব্যক্তির সম্পর্কে কিছু মন্তব্যও করা আছে। ওই এলাকায় মিনি ব্যাঙ্ক সংক্রান্ত কিছু সমস্যা চলছিল। পুলিশের তদন্তে উঠে এসেছে, সেই সমস্যা সামাল দিতে গিয়ে প্রচুর পরিমাণে ধার করা টাকা শোধ করতে না পারায় হতাশাতেই সম্ভবত আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন বিজেপি বিধায়ক দেবেন্দ্রনাথ রায়।
পুলিশ জানিয়েছে, বাম আমল থেকে মোহিনীগঞ্জ মিনি ব্যাঙ্কের ব্রাঞ্চ ম্যানেজার ছিলেন মৃত বিধায়ক দেবেন্দ্রনাথ রায়। ওই ব্যাঙ্কেরই বিন্দোল ব্রাঞ্চের ম্যানেজার ছিলেন কৃষ্ণপুরের গোপাল মালাকার। দেবেন্দ্রনাথ রায় এবং গোপাল মালাকার মিলে চাল কলের ব্যবসা করতে চেয়েছিলেন। সেই সূত্রে গোপাল মালাকার মাবুদ আলির সঙ্গে দেবেন্দ্রনাথ রায়ের আলাপ করায়। আবার মাবুদের মাধ্যমেই ইংরেজবাজারের নিলয় সিনহার পরিচয় হয়।
আরও পড়ুনঃ হেমতবাদের এমএলএ খুনে আটক এক মালদহে
এরপর রায়গঞ্জে দেবেন্দ্রনাথ রায়ের বাড়িতে বছর ছয়েক ভাড়া ছিলেন নিলয় সিনহা। ব্যবসা শুরুর জন্য মাবুদের মাধ্যমে নিলয়কে প্রায় দেড় কোটি টাকা দেন দেবেন্দ্রনাথ রায়। ২০১৬ সালে দেবেন্দ্রনাথের বিরুদ্ধে মোহিনীগঞ্জ ব্যাঙ্ক থেকে ১ কোটি ৩৭ লক্ষ টাকা আত্মসাত্ করার অভিযোগ ওঠে।
রায়গঞ্জে সম্পত্তি বন্ধক রেখে নাবার্ডের কাছ থেকে আরও ২৫ লক্ষ টাকা ঋণ নেন দেবেন্দ্রনাথ। এদিকে এতগুলো টাকা চলে যাওয়ায় গত ৫-৬ মাস ধরে চরম হতাশায় ভুগছিলেন মৃত বিধায়ক। বারবার চেষ্টা করেও নিলয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি বিজেপি বিধায়ক। মাবুদের সঙ্গে কথা হলেও সে টাকা ফেরত দিতে চায়নি। এরপরে তিনি আত্মহত্যার পথ বেছে নেন বলে তদন্তে প্রাথমিক অনুমান পুলিশের।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584