সিমা পুরকাইত,দক্ষিন ২৪ পরগনাঃ হেঁতাল,গরান,গেঁওয়া ভরা জঙ্গলের দেবি বনদেবি।বিশ্বাস আর ভক্তি ভরা মৎসজীবিদের দেবি মা গঙ্গা মায়ের পূজার মতো আজও করে পূজিত হন মা জগদ্ধাত্রী।নবমি থেকে শুরু হয় সুন্দরবনের মা জগদ্ধাত্রীর পূজা।

গোটা দক্ষিণ সুন্দরবনে থিম হিরিকে জগদ্ধাত্রী আরাধনায় মাতোয়ারা প্রবীন থেকে নবীনেরা।দক্ষিণ সুন্দরবনে আজও জলে কুমীর ডাঙায় বাঘ ,কোথাও আবার প্রাকৃতিক দুর্যোগ পিছু ছাড়েনা সুন্দরবনবাসীর। বিপন্ন সুন্দরবনকে রক্ষা করার পাশাপাশি এলাকায় মঙ্গল আনতে পূজা শুরু হয় মা জগদ্ধাত্রীর। নবমী থেকে শুরু হয় জগদ্ধাত্রী মায়ের আরাধনা।সংসারের শান্তি আর মঙ্গল কামনায় গৃহস্থের বাড়ির গৃহবধূরা মা জগদ্ধাত্রীকে নিয়ে চলে পূজার্চনা।কোথাও সেনা বাহিনিদের হেলিকপ্টার । কোথাও বা মন্ডপ সজ্জায় সজ্জিত বৃন্দাবনের প্রেম মন্দির। কোথাও আবার মন্ডপ সজ্জা সজ্জিত হয়েছে পুরির জগন্নাথের মন্দির।তবে নানান রুপে নয় প্রত্যকটি জায়গাতে সাবেকি আনায় পূজা হয় মা জগদ্ধাত্রীর।সুন্দরবন এলাকাবাসীরা সারা বছর কেউ গভীর সমুদ্রে পাড়ি দেয় মাছ ধরার জন্য কেউ নদীতে মিন ধরে দিন কাটায়। হাজারও দুঃখের মধ্যে তবুও আনন্দের দিনটা খুঁজে বার করতে চায় তারা।

গঙ্গাসাগর দ্বীপে হিংস্র জীবজন্তুর প্রভাব না পরলেও প্রাকৃতিক দুর্যোগ পিছু ছাড়ে না এলাকাবাসীর।ভাঙা বাঁধ আর প্রাকৃতিক দুর্যোগের হাত থেকে রক্ষা পেতে আজ পূজিত হন মা জগদ্ধাত্রী।ছয়ের ঘেরি এলাকার মানুষ জগদ্ধাত্রী পুজোতে এবারে মেতে উঠেছেন থিম হিরিকে ।কনক কুমার ভুঁইয়া ছয়ের ঘেরি সার্বজনিন সংহতি মেলা ও কমিটির সম্পাদক জানান ছয়ের ঘেরি জগদ্ধাত্রী পূজা শুরু ষষ্ঠি থেকে।এবারে তাদের পুজো ১৩ বছরে পড়েছে। দ্বীপ বাসীদের আনন্দ দিতে হেলিকপ্টারের আদলে প্লাইউড দিয়ে নির্মিত করেছে মন্ডপ । ৬ ফুট উচ্চতায় মা সাবেকি আনায় রুপ এনেছে । চারিদিকে আলোর রোশনায় দিয়ে সাজিয়ে তুলেছে পুজো উদ্যোক্তারা। ঝর্নার প্রতিকি ছবি তুলে ধরা হয়েছে মন্ডপে।পূজা ঘিরে চলে ভোগ বিতরন।এই এলাকায় অন্যান্য পুজো থাকলেও মাতোয়ারা হন জগদ্ধাত্রী মাকে নিয়ে।

অন্যদিকে মথুরাপুর এক নম্বর ব্লকের নালুয়া গ্রামের দূর্গা পূজায় মেতেছেন প্রবীন নবীনরা। অন্যান্য পূজায় তেমন প্রভাব না পড়লেও জগদ্ধাত্রীতে বেশি গুরুত্ব দেন।উত্তম কুমার নালুয়া নবারুন সংঘের উদ্যোক্তা। জানান নালুয়া নবারুন সংঘের পুজা ২৬ তম বছরে পড়লো। থার্মকল দিয়ে বৃন্দাবনের প্রেম মন্দির নির্মিত হয়েছে দর্শনার্থিদের সামনে। নানান সচেতনতা মূলক কাজ থিম করা হয়েছে দর্শনার্থীদের সামনে ।আশে পাশের এলাকার মানুষ এই পূজো দেখতে আসেন।নবমীর পর থেকে একসপ্তাহ ধরে চলে এই এলাকার পূজা।চন্দন নগরের আলোয় ভরিয়ে তোলে দর্শনার্থীদের সামনে ।
পুরীর মন্দিরের আদলে প্যারিস কাপড়ের সমন্নয়ে নির্মিত হয়েছে নামখানার নারায়নপুর ফ্রেন্ড অ্যাসোসিয়েশানের জগদ্ধাত্রীপূজা। মনিশঙ্কর পান্ডা নারায়নপুর ফ্রেন্ড অ্যাসোসিয়েশান সম্পাদক জানান একমাস ধরে তৈরী করা হয়েছে মন্ডপ ।দীঘার সমুদ্র সৈকতের মতো বালি দিয়ে মূর্তি নির্মিত হয়েছে মন্ডপের আসেপাশে । চাইনিস ফার্মে নির্মিত হয়েছে মায়ের রুপ।নবমি থেকে শুরু হয় পূজা ।

কাকদ্বীপের রামকৃষ্ণ গ্রাম পঞ্চায়েতের জয়ন্তি ক্লাবের জগদ্ধাত্রী পূজা। কালি পূজার আরাধনা বন্ধ করে ১৫ বছর ধরে চলে আসছে এই এলাকার পূজা।শ্রীকান্ত সামন্ত জয়ন্তি ক্লাবের উদ্যোক্তা জানান জগদ্ধাত্রী মায়ের পূজার্চনা করে সমুদ্রে পরিষদের মৎস জীবিরা।

বিশ্বাস আর ভক্তি ভরে মৎসজীবি প্রায় তিন হাজার বাসিন্দারা মাতোয়ারা হয়ে পরেন জগদ্ধাত্রী আরাধনায়।এক সপ্তাহ ধরে চলে এই এলাকার পূজা উৎসব ।
দক্ষিন সুন্দরবনে জগদ্ধাত্রী পূজায় কোথাও নবরাত্রী পালন হয় না,তবে জগদ্ধাত্রী পূজা দিয়ে রাস উৎসব শুরু (সংহতি) হয়,যা একদিকে জগদ্বাত্রী মায়ের আরাধনা।অন্যদিকে উৎসব মুখর এলাকা।মেতে থাকেন প্রবীন নবীনেরা ।
আরও পড়ুনঃ ‘কালী-কার্তিকের দেশ’ সোনামুখীতে কার্তিক লড়াই ঘিরে উদ্দীপনা
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584