জমিদারি হারিয়ে গেলেও থেকে গেছে পতিরামের জমিদার বাড়ীর দুর্গাপূজা

0
234

নিজস্ব প্রতিবেদন, দক্ষিণ দিনাজপুরঃ

রাজ্যের অন্যান্য জেলাগুলির ন্যায় দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার শারদোৎসবেও বনেদি বাড়িগুলির বনেদিয়ানার ছাপ স্পষ্ট।শরতের শুরুতেই কাশ ফুল ফোটা মানেই বনেদি বাড়ীগুলির দুর্গাপূজার প্রস্তুতি শুরু। তাই এবারও শরতের আকাশে পেঁজা তুলার মতো মেঘের আনাগোনা শুরু হতেই জন্ম অষ্টমীর দিন দুর্গা কাঠামোয় প্রতিমা নির্মাণের কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার পতিরাম এলাকার ঘোষ বাড়ীর মন্দির দালান চত্বরে।ঊষা লগ্নের আকাশের রঙ এখানে দেবী দুর্গার গায়ে।

পুজোর আয়োজন। নিজস্ব চিত্র

জমিদার হিসাবে খ্যাত দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার এই ঘোষ বাড়ীর পূজো শুরু হয়েছিল ছয় পুরুষ পূর্বে।বর্তমানে ঘোষ বাড়ীর গৃহকর্তা পেশায় ব্যবসায়ী সাগর কুমার ঘোষ বংশের প্রথা মেনে প্রতিবছরই দুর্গাপূজার আয়োজন করে চলেছেন।আনুমানিক প্রায় তিন শতাধিক বছর পূর্বে শুরু হওয়া এই দুর্গাপূজায় প্রথম দিকের বছর গুলিতে পতিরাম এলাকার এই জমিদার বাড়ীতে দেবী দুর্গা পূজিত হতেন টিনের চালা ঘরে।সেই সময় ঘোষ বাড়ীর পূর্ব পুরুষদের ছিল ধান, চালের ব্যবসা এবং নদীপথে সেই ধান চাল রপ্তানি হত তৎকালীন পূর্ব বঙ্গের বিভিন্ন প্রান্তে।সেকালে দুর্গাপূজার সপ্তমী থেকে নবমী তিনদিন ধরে মঙ্গলচন্ডীর গানের আসর বসত জমিদার বাড়ীর মন্দির চত্বরে। রাত্রে হত যাত্রাগান। প্রথম দিকে পতিরামের এই জমিদার বাড়ীর দুর্গাপূজায় বলি দেওয়ার প্রথা প্রচলিত থাকলেও দিন বদলের সাথে সাথে সেই প্রথা এখন অতীত।বর্তমানে দেবী এখানে বৈষ্ণব নিয়মেই পূজিত হয়। পূজা উপলক্ষ্যে এখন ঘোষ বাড়ীর দালান চত্বরে বসে না মঙ্গলচন্ডী গানের আসর।তবে দিন বদলের সাথে সাথে ঘোষ বাড়ীর দুর্গাপূজার রীতিতে কিছু পরিবর্তন ঘটলেও সেকালের সাবেকি আনার ছোয়া আজও বর্তমান ঘোষ বাড়ীর দুর্গা পূজায়। কুলদেবতা হওয়ার কারনে পঞ্চমীর দিন ঘোষ বাড়ীতে নারায়ণ পূজা দেওয়ার রীতি এবং ষষ্ঠীর দিন বেলগাছতলায় দেবীর বোধন হয় এখানে। অন্নভোগ দেওয়ার প্রচলন নেই,তাই ফল মূল লুচি পায়েস প্রভৃতি ভোগ হিসাবে নিবেদন করা হয় ঘোষ বাড়ীর দুর্গাকে।বর্তমানে জমিদারি না থাকলেও জমিদার বাড়ী হিসাবে খ্যাত ঘোষ বাড়ীর বর্তমান কর্তা সাগর কুমার ঘোষ জানান তার এক ছেলে এবং এক মেয়ে।তারা বাইরে থাকে।কিন্তু পূজোর দিনগুলি তারা বাড়ীতেই কাটায়।বাড়ীর প্রবেশপথের ডান দিকের ধ্বংসাবশেষ কাছারি বাড়ীটি আজও ঘোষ বাড়ীর জমিদারির স্মৃতি চিহ্নের গরিমা বহন করে চলেছে,তবে পূজা শুরুর প্রথম দিককার টিনের চালা মন্দির ঘরটি পরিবর্তিত রুপ নিয়েছে দালান মন্দিরে।তবে পরিবর্তন ঘটেনি সেকেলের প্রথাগত নিষ্ঠার ঐতিহ্যবাহী জৌলুসতায়।তাই দুর্গাপূজার দিনগুলিতে ঢাকে কাঠি পড়তেই প্রতিবছরই পতিরাম সহ দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার বিভিন্ন প্রান্তের মানুষদের সমাগমে ভরে উঠে পতিরামের জমিদার বাড়ীর মন্দির দালান চত্বর।

আরও পড়ুনঃ যৌন কেলেঙ্কারির দায়ে গ্রেফতার বিজেপি নেতা অমলেন্দু চট্টোপাধ্যায়

নিউজফ্রন্ট এর ফেসবুক পেজে লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here