নবনীতা দত্তগুপ্ত , বিনোদন ডেস্কঃ
আচ্ছা, শুরুতেই একটা কথা ভাবুন তো? ধরুন, আপনি কারো প্রেমিক বা প্রেমিকা। বিপরীতের মানুষটির সঙ্গে আপনার বিয়ে ঠিকঠাক। আপনাদের দুজনের মধ্যেকার সম্পর্কও মন্দ নয়। হঠাতই বিপরীতের মানুষটির জীবনে এসে হাজির অন্য কেউ। পারবেন মেনে নিতে? না বোধহয়। এহেন ত্যাগ মনুষ্যজাতির স্বাভাবিক প্রবৃত্তি নয়। ঠিক যেমন ‘নকশি কাঁথা’ ধারাবাহিকের অ্যান্টাগনিস্ট রোহিণীর ক্ষেত্রে ঘটেছে।
আর তাই আজ সে প্রতিহিংসাপরায়ণ, বেপরোয়া, বিপদগামী, ক্ষতিকারক। আরও অনেক বিশেষণ তাঁর নামের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া যায়। আজ সে নিজের ভালোবাসা পুরোপুরিভাবে না পাওয়ার কারণে যশকেও কিডন্যাপ করে নিজের আয়ত্বে রেখেছে। এই যশকে সে প্রাণ দিয়ে ভালোবাসে। আর তাই শবমের প্রতি যশের এবং যশের প্রতি শবনমের অমোঘ প্রেম মেনে নিতে না পেরে বারবার আঘাত হেনেছে শবনমের উপরে।
ডাক্তারি করার লাইসেন্সটাও হারিয়েছে সে। যশের শারীরিক অবস্থা তার অজানা নয়। কতদিন সে বাঁচবে তারও কোনও গ্যারান্টি নেই। তবুও রোহিণী কষ্ট দিচ্ছে যশকে। এই গল্প বেয়েই এগিয়ে চলেছে লীনা গঙ্গোপাধ্যায় রচিত ধারাবাহিক নকশিকাঁথার গল্প। ভাবছেন হঠাত রোহিণীকে নিয়ে পড়লাম কেন? তা হলে বলি। রোহিণীর মনের ঘরে কড়া নেড়েছিলাম। যা জানলাম আর শুনলাম তাই তুলে ধরব এই কলমে।
বাংলা টেলিভিশনের জনপ্রিয় রোহিণী থুড়ি স্নেহা চ্যাটার্জির মুখ। নেগেটিভ চরিত্রেই স্নেহাকে বেশি দেখেছেন দর্শক। টেলিকেরিয়ার অনেকদিনের। কিন্তু আজ অবধি একটি ধারাবাহিকেও লিড রোল করতে দেখা যায়নি তাঁকে। পার্শ্বচরিত্রেই করে চলেছেন বাজিমাত৷ টেলিভিশনের জনপ্রিয় শো ‘হাউ মাউ খাউ’-তে অংশ নিয়েছিলেন স্নেহা। আর তারপর নিজেই পেয়ে গেলেন সঞ্চালনার কাজ।
আরও পড়ুনঃ খেলায় মোড়া বিনোদনজগত
‘ভ্যাবা চ্যাকা’র সঞ্চালনা করেন স্নেহা। এরপর এক বেসরকারি চ্যানেলে বছর খানেক খবর পড়েছেন। সঞ্চালনা করেছেন ট্রাভেল শো এবং এন্টারটেইনমেন্ট শো’তে। এরপর ‘এখানে আকাশ নীল’ ধারাবাহিকে একটি রিপ্লেসমেন্ট ক্যারেক্টারে অভিনয় করার সুযোগ আসে স্নেহার কাছে। ব্যস, সেই শুরু। আর আজ তাঁর প্রতিদিনের গন্তব্য শুটিং ফ্লোর। নাটকও করেন স্নেহা। অনেক ছোট বয়স থেকেই পাড়ায় এবং স্কুলের নাটকে অংশ নেন তিনি।
এই প্রসঙ্গে স্নেহা জানান- “এমন একটা বছরও আসেনি যে বছর আমি স্কুলের নাটকে কিংবা পাড়ার নাটকে অংশগ্রহণ করিনি। নাটক শিখতাম না ছোটবেলায়। তবে, দেখতাম। আমার দাদু- ঠাকুমা বয়স্ক এবং অসুস্থ থাকায় বাবা-মায়ের পক্ষে সম্ভব ছিল না আমাকে নিয়ে বেশি ছোটাছুটি করার। তবে, ইচ্ছা আর উৎসাহটা ছিল। গ্রুপ থিয়েটার করার ইচ্ছা ছিল। সেটাও করতে পারিনি যখন চেয়েছিলাম।”
আরও পড়ুনঃ মিলন হবে কতদিনে আর্য-চারুর সনে?
এই মুহূর্তে স্নেহা ‘ফোর্থ বেল’ নাট্যগোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত। ‘সুবর্ণলতা’ ধারাবাহিক শেষ হওয়ার পরে ইশিতা মুখোপাধ্যায়ের ‘উষ্ণিক নাট্যগোষ্ঠী’র সঙ্গে ‘খেলা ভাঙার খেলা’ নাটকে অংশ নিয়েছেন দুটি শো’তে। স্নেহা জানান- “ফোর্থ বেল-এর সঙ্গে আমার প্রথম কাজ ‘পি এস ভালোবাসা’। এদের সঙ্গে এবার করছি ‘ছাড়পত্র’। অনেকগুলি শো-এর কথা চলছে। আবার চুটিয়ে শো করার ইচ্ছা আছে। টেলিভিশনটা কদিন একটু কম করার প্ল্যানিং আছে। গান আর নাটক আমার খুব পছন্দের দুটি জিনিস। ওই দুটিতে এবার একটু মন দিতে চাই।”
তা হলে টেলিভিশন? স্নেহার কাছে এই প্রশ্ন ছুঁড়লে তিনি বলেন- “টিভিতে কাজ করার ইচ্ছেটা ছোটবেলা থেকেই ছিল। পাশাপাশি গান আর নাটকটাও টানে খুব আমাকে। এই দুটিতে একটু মন দেব। তা বলে টেলিভিশন ছেড়ে দেব এমনটা নয়।কদিন একটু কম যাব ফ্লোরে।” টিভিতে কাজ করার ইচ্ছেটা দানা বেঁধেছিল কেন? স্নেহা- “টিভিতে হিন্দি সিনেমা দেখতাম খুব। রঙ্গোলি, চিত্রহার গিলতাম বসে বসে। তখন থেকেই ইচ্ছা টিভিতে কাজ করার। সবাই আমাকে টিভিতে দেখবে! এক্সাইটমেন্টটাই আলাদা ছিল।”
আরও পড়ুনঃ বাংলা ছবিতে ফের মিমি-নুসরত জুটি! থাকছেন যশ-ও
স্নেহার কাছে জানতে চাই- সঞ্চালনা দিয়ে শুরু হয়েছিল অনস্ক্রিন কেরিয়ার। কোনটা বেশি পছন্দের? অভিনয় নাকি সঞ্চালনা? স্নেহা জানান- “সঞ্চালনা দিয়ে আমার জার্নি শুরু। তাই এর প্রতি আমার স্নেহটা অন্যরকমের। ঠিক যেমন প্রথম সন্তানের প্রতি মায়ের একটু হলেও আবেগ বেশি থাকে, ঠিক তেমনি। সঞ্চালনার মধ্যে একটা মজা রয়েছে। এখানে স্নেহা কথা বলে। কারো হয়ে মানে কোনও চরিত্রের হয়ে স্নেহা কথা বলে না। নিজের মতামত, নিজের কথা মন খুলে প্রাণ ঢেলে বলার প্ল্যাটফর্ম হল সঞ্চালনা। এটা আমি ছাড়ব না কখনও।”
এহেন স্নেহাকে বেশিরভাগ সময়েই নেগেটিভ চরিত্রে দেখেছেন দর্শক। এত বছরের টেলিকেরিয়ারে তাঁকে লিড চরিত্রে দেখা যায়নি কখনও। তাতে কোনও আক্ষেপ নেই স্নেহার। অভিনয়টাই বড় কথা তাঁর কাছে। চরিত্র যেমনই হোক না কেন। এই প্রসঙ্গে স্নেহা জানান- “সুবর্ণলতা-তে আমি এক গ্রাম্য অভিসন্ধিকারী, সুবিধাবাদী নারীচরিত্রে অভিনয় করেছি, কুসুমদোলা-তে মিঠু ছিল বোকা বোকা, ঠোঁট কাটা গোছের। সেও সারাদিন দুষ্টুবুদ্ধি পাকাতো মাথায়। আবার জলনূপুরের ভূমি ছিল আরেক ধরনের নেগেটিভ রোল। নকশিকাঁথার রোহিনী ভালোবাসা পাওয়ার জন্য নেগেটিভ ইমেজে রয়েছে। না হলে সে ভালোই।
আমরা কেউই এমনি এমনি খারাপ হয়ে যাই না আসলে। পরিস্থিতি আমাদের খারাপ করে। একইভাবে নেগেটিভ রোল না থাকলে যে আউট অ্যান্ড আউট পজিটিভ রোল করছে তার ভালো টা উঠে আসবে কী করে সকলের কাছে? তাই নেগেটিভ রোল নিয়ে আমার কোনও সমস্যা নেই। অনেক শেড থাকে এরকম চরিত্রে। প্রত্যেকটা নেগেটিভ রোলকে আমি আমার আলাদা টাচ দেওয়ার চেষ্টা করি, যাতে মানুষের একঘেয়ে না লাগে আমাকে। তবে, খুব ইচ্ছা একটা রোম্যান্টিক রোলে অভিনয় করার। কোনওদিন করিনি।…”
কোন প্রোডাকশন হাউজের সঙ্গে বোঝাপড়াটা বেশি ভাল? স্নেহা জানান- “খুব বেশি হাউজের সঙ্গে কাজ করিনি আমি। যার সঙ্গে করেছি সেটা হয়ত টানা দু’বছর চলেছে। যাদের সঙ্গে কাজ করেছি তারা সকলেই নিজেদের মতো করে ভাল। তবে, ম্যাজিক মোমেন্টস-এর সঙ্গে বেশি কাজ করেছি। ওদের সঙ্গে বোঝাপড়াটা ভাল। এমনও একদিন এসেছে আমার অগ্রিম কিছু টাকার দরকার ছিল। আমি পেয়েছি এদের কাছ থেকে। এর থেকে বেশি আর কী বলি?’
উৎসাহের তারণায় জানতে চাই, ঠিক কী ধরনের চরিত্র বেশি পছন্দের? স্নেহা জানান- “পিরিয়ডধর্মী ভাল লাগে, ফ্যামিলি ড্রামা ভাল লাগে। মাইথোলজি বা ফ্যান্টাসি ভাল লাগে না। কারণ আমি সাজতে ভালোবাসি না। তাই অত সেজেগুজে কাজ করাটা খুব চাপের মনে হয় আমার কাছে। যাঁরা করেন তাঁদের স্যালুট জানাই আমি। সাহিত্যভিত্তিক কাজের প্রতি আমার ঝোঁক আছে।”
আজ টাইট শিড্যুলে সময় কাটে। একদিন এমন আসতেও পারে যেদিন এত ব্যস্ততা থাকল না সেদিন কী করবেন? এই প্রশ্নে স্নেহার সহাস্য উত্তর- ” আমি সবরকম পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত আছি। সেদিন নাটক করব চুটিয়ে। অনেকদিন ধরে গানটা বন্ধ আছে সময়ের অভাবে। ওটা আবার শুরু করেছি। গানটা গাইব মন দিয়ে। স্টেজ শো করব। ১২ বছর ধরে টানা কাজ করছি, সেরকম দিন এলে একটু বিশ্রাম নেব। অনেকটা ঘুরব। একটু সঞ্চয়ের কথা ভাবব। ঠাকুরের আশীর্বাদ থাকলে ততদিনে মা হয়ে যাব। সেদিনের ব্যস্ততা থাকবে অন্যরকম। কোনওদিকে হয়ত তাকানোর সময়ই পাব না। সুতরাং আমার জীবনে হতাশা আসার কোনও অবকাশ নেই। আমি আসতেও দেব না। আমি ভাল থাকতে জানি।”
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584