সিমা পুরকাইত,দক্ষিণ ২৪ পরগনাঃ
গ্রামে নেই কোন বড় উৎসব । নেই দূর্গাপূজা।তাই এই গ্রামে বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বনের আনন্দ বলতে কালী পুজো। হিন্দু মুসলিম সকল সম্প্রদায় মানুষের সমন্বয়ে শুরু হয় কালী আরাধনা। গৃস্থের বাড়িতে আত্মীয় পরিজনের সমাগমে একসপ্তাহ ধরে উৎসব মুখর হয়ে ওঠে মগরাহাটের সরাচি গ্রাম। মগরাহাট একনম্বর ব্লকে একতারা গ্রামপঞ্চায়েতের প্রত্যন্ত গ্রাম সরাচি।
অনুন্নয়নে ভরা এই গ্রামে একটা সময় অমঙ্গলের ছায়া গ্রাস করেছিল গ্রামবাসীদের। অভাব অনটন নিত্য সংগী। হিন্দু-মুসলিম ভেদাভেদে হিংসার আঁচ পড়েছিল সরাচি গ্রামবাসির মধ্যেও । তাই শান্তি সম্প্রীতি ও মেলবন্ধনের পাশাপাশি গ্রামের মঙ্গল কামনায় শুরু করে কালী মায়ের আরাধনা । তারপর থেকেই নাকি এটি মঙ্গলময় গ্রাম।
পাঁচ হাজার মানুষের বাস এই গ্রামে। জীবিকা বলতে চাষ আবাদ। সারাবছরে সংসার খরচ বাঁচিয়ে যেটুকু সঞ্চয় হয় তা দিয়েই চলে গ্রামের কালীপূজা।এই গ্রামে থিম পূজা হয় ১২ থেকে ১৩ টি। থিম পূজার হিড়িকে সরাচির কালীপূজায় আনন্দমুখর হয়ে পড়ে নবীন থেকে প্রবীণ সবাই। হাতে হাত দিয়ে কাঁদে কাঁধ মিলিয়ে এক সপ্তাহ ধরে চলে কালী পূজা ।গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের পাশাপাশি মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষের ঘরেও আসে আত্মীয় পরিজন । একসাথে মিলেমিশে একাকার হয়ে পড়ে গ্রামের সমস্ত স্তরের মানুষ।
পাড়ায় পাড়ায় কালীযুদ্ধে মাতোয়ারা হয়ে ওঠে সবাই । কালী আরাধনায় মাতোয়ারা হয় এই গ্রামের একাধিক ক্লাব । যেমন সরাচি নবারুণ সংঘ । এবারে ৩৮ বছরে পড়েছে এই ক্লাবের পুজো। এবারে কালীর ১০৮টি রূপ যেমন ছিন্নমস্তা কালী থেকে গায়েত্রি,রুদ্রানি,ধুমাবতি,ঘটেশ্বরী, ডাকাতকালী,চন্দ্রাবতী এই রকম অনেক রূপ তুলে ধরেছেন এই ক্লাবের উদ্যোক্তারা । ভারতীয় পতাকায় মন্ডপ সজ্জা এবারের থিম ভগবানপুর স্পটিং ক্লাবের । ৪৫ বছরে পড়েছে এই ক্লাবের পুজো । রামচন্দ্রের অকাল বোধন তুলে ধরা হয়েছে প্রতিমা থিমে । দর্শনার্থিদের মন জয় করতে এমনি উদ্দ্যোগ ক্লাব গুলির। ঘটকপুর অভিযাত্রী সংঘ ।এবারে ৫৭ বছরে পদার্পণ করেছে এই ক্লাবের পূজা। থার্মকল ও চটের উপর মন্ডপ সজ্জিত হয়েছে । এবারের থিম পুরানো শিব মন্দির। মন্দির ঘিরে রয়েছে মায়ের বেদি, শিবলিঙ্গ ,রয়েছে শিবের বাহন ষাঁড়। আদিবাসী রুপী মা ধরা দিয়েছে এই মন্ডপে । কচিকাঁচাদের মন জয় করতে কার্টুন তুলে ধরা হয়েছে মন্ডপ সজ্জায় । মন্ডপ ঘিরে রয়েছে ছোটা ভিম,কোথাও আবার টম অ্যান্ড জেরি । কোথাও আবার ফুটিয়ে তোলা হয়েছে কাক কলসির গল্প ,কোথাও বা শিয়াল সারস ,কচ্ছপ খরগোসের গল্পের কার্টুন । গ্রামে একসপ্তাহ ধরে চলে নাটক, যাত্রাপালা ,গাজন গানের আসর । এছাড়াও চলে নানান সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান । দুঃস্থদের বস্ত্র বিতরণ করা হয় সমগ্র
পুজো ঘিরে। ছুটে আসেন দূরদূরান্তের দর্শনার্থীরা।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584